
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রীর মৃত্যু ঘিরে ঘনিয়েছে রহস্য। নেশাগ্রস্ত অবস্থায় বেসামাল হয়ে তিনি ঝিলের জলে পড়ে গিয়েছিলেন নাকি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। ময়নাতদন্ত না হওয়া পর্যন্ত মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা সম্ভব নয় বলেই জানাচ্ছে পুলিশ। এদিকে, তরুণীর বিশেষ বন্ধুর একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট প্রকাশ্যে এসেছে। শোকস্তব্ধ বাবা-মা। মেয়েকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন পরিবারের সদস্যরাও।
তরুণীর বিশেষ বন্ধুর পোস্ট
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের এই ছাত্রীকে ডাক নামে সম্বোধন করেছেন তাঁর বিশেষ বন্ধু। তাঁর জন্য একটি আবেগঘন ফেসবুক পোস্ট করেছেন তিনি। নিজেদের আদুরে একটি ছবি পোস্ট করে ওই তরুণ লিখেছেন, 'আমার ভালোবাসায় নিশ্চয়ই কোনও খামতি ছিল। আমার পূর্বজন্মের নিশ্চয়ই ছিল কোনও পাপ। তাই শুধু আমাকে না, সকলকে ছেড়ে চলে গেলি।আর কোনও কথা নেই। রাগ নেই। হেসেও উঠবি না আর। আমাকে এই নরক থেকে নিয়ে যেতে পারতিস ...।' সেই পোস্টে অংসখ্য মানুষ কমেন্ট করে জানতে চেয়েছেন ছেলেটির বান্ধবীর কী হয়েছে? কীভাবে এমন খারাপ ঘটনা ঘটল। অথচ কাউকেউ কোনও রিপ্লাই করেননি তিনি। যদিও জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে বান্ধবীর সঙ্গে ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠান দেখতে যাননি তিনি। এমনকী, সেদিন সারাদিনে তেমন ভাবে কথাও হয়নি দু'জনের।
মৃতার বাবার প্রতিক্রিয়া
বেলঘরিয়া নিমতার বাসিন্দা এই তরুণীর বাবা-মাকে রাতেই দুসংবাদ দেওয়া হয়। কেপিসি মেডিক্যাল কলেজে এসে মেয়ের নিথর দেহ দেখেন তাঁরা। কান্নায় ভেঙে পড়েন বাবা-মা। শুক্রবার সকালে তাঁরে পৌঁছন যাদবপুর থানায়। যেখানে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত চলছে। যদিও পরিবারের তরফে এখনও পর্যন্ত আলাদা করে কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।
পাড়ায় অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী হিসেবেই পরিচিত ছিলেন এই তরুণী। সম্প্রতি তাঁরে মায়ের ব্রেন স্ট্রোক হয়েছে বলেও খবর। এদিন মৃতার বাবা বলেন, 'আমরা কোনও অভিযোগ করিনি। যা করার পুলিশ করবে। পুলিশ তদন্ত করে দেখছে। আমি বলতে পারব না কী হয়েছিল, কীভাবে হয়েছিল। আমি কি স্পটে ছিলাম নাকি!'
জানা গিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ নম্বর গেট থেকে ঢুকে যে পার্কিং লট রয়েছে, সেখানে 'রুহানিয়াত' নামে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলছিল। ওই ছাত্রী তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে সেই অনুষ্ঠান দেখছিলেন এবং ৪ নম্বর গেটের কাছেই ঝিলের পাড়ে বসেছিলেন। সূত্রের খবর, মদ্যপান করছিলেন বন্ধুরা সকলেই। গাঁজার আসরও বসেছিল বলে খবর।
সহপাঠীদের থেকে জানা গিয়েছে, আসরের মাঝেই টয়লেটে যাওয়ার জন্য উঠেছিলেন তিনি। ৪ নম্বর গেটের কাছে ইউনিয়ন রুমের পাশের শৌচালয়ে গিয়েছিলেন। সে সময়েই পড়ে যান ঝিলে। সহপাঠীদের একাংশের দাবি, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় পা টলে গিয়ে পড়ে গিয়েছিলেন। এদিকে, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের কারণে ৪ নম্বর গেট সংলগ্ন ওই অংশে আলো কম ছিল। ফলে তরুণী পড়ে যাওয়ার সময়ে কেউ সঠিক ভাবে দেখতে পায়নি নাকি তরুণী জলে পড়ার পর সংজ্ঞাহীন হয়ে যান বলে কাউকে চিৎকার করে ডাকতেও পারেননি, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।