Jadavpur University: মদের নেশায় পা পিছলে ঝিলে? যাদবপুরের ছাত্রীর মৃত্যু কীভাবে? ময়নাতদন্ত রিপোর্টে বড় ইঙ্গিত

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীর রহস্যমৃত্যু নিয়ে একাধিক প্রশ্নের উত্তর এখনও অধরা। তিনি কি আদৌ মদ্যপ ছিলেন? নেশার ঘোরেই কি পা টলে পড়ে যান ঝিলে? ইউনিয়ন রুম লাগোয়া শৌচালয়ে যাওয়ার সময়ে আর কে ছিলেন তাঁর সঙ্গে?

Advertisement
মদের নেশায় পা পিছলে ঝিলে? যাদবপুরের ছাত্রীর মৃত্যু কীভাবে? ময়নাতদন্ত রিপোর্টে বড় ইঙ্গিত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। ইনসেটে: ঝিল পাড়
হাইলাইটস
  • যাদবপুরের পড়ুয়ার ময়নাতদন্ত রিপোর্ট কী বলছে?
  • নেশাগ্রস্ত অবস্থায় পা টলেই কি ঝিলে পড়েন তিনি?
  • সিসিটিভি ফুটেজে কী ধরা পড়ার সম্ভাবনা?

ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বলছে জলে ডুবেই মৃত্যু হয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের বছর ২১-এর ছাত্রীর। কিন্তু কীভাবে তিনি ৪ নম্বর গেটের কাছে আর্ট ইউনিয়ন রুম লাগোয়া জলাশয়ে পড়ে গেলেন, তার উত্তর এখনও অধরা। এছাড়াও আরও নানা খটকা ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের। 

সূত্রের খবর, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল অফিসার জানিয়েছেন, খবর পেয়ে নিকটবর্তী কেপিসি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছন তিনি। ওই ছাত্রীর জামাকাপড় এবং সর্বাঙ্গ ভেজা ছিল। তবে অনুমান করা হচ্ছে, ছাত্রী জলে পড়ে যাওয়ার পর এবং উদ্ধার হওয়ার মাঝের সময়ের মধ্যে ব্যবধান দীর্ঘ নয়। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, ছাত্রীকে জলাশয় থেকে তোলা হয় রাত ১০টা ২০ মিনিটে। তার কতক্ষণ আগে তিনি জলে পড়ে যান তা সঠিক ভাবে এখনও জানা যায়নি। 

Jadavpur University
ঝিল পাড়

এদিকে, লালবাজারের তরফে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ নম্বর গেট সংলগ্ন ৩টি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সহপাঠীরা জানিয়েছেন, আর্ট ইউজি বিল্ডিংয়ের পাশে পার্কিং লটে অয়োজিত ড্রামা ক্লাবের রুহানিয়াত ফেস্টিভ্যালে গানবাজনা শুনছিলেন ওই ছাত্রী। সঙ্গে ছিলেন বন্ধুবান্ধবও। হঠাৎ করেই উঠে তরুণী ওয়াশরুম যান। আর্ট ইউনিয়ন রুম লাগোয়া সরু অংশ দিয়ে শৌচালয়ে যাওয়ার রাস্তা। তার ঠিক পাশেই বড় জলাশয়। বেড়া দেওয়া থাকলেও অনেক অংশে বেড়ার অংশ ভাঙা। তেমনই একটি অংশ দিয়ে ছাত্রী পড়ে গিয়ে থাকতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। ওই শৌচালয়ের ঠিক পাশেই ইউনিয়ন রুমের একটি সিঁড়ি রয়েছে। অনেক সময়েই দেখা গিয়েছে, ওই সিঁড়িতে বসে আড্ডা দিচ্ছেন ছাত্রছাত্রীরা। সিঁড়ির ঠিক সামনেই বেড়ার একটি অংশ ফাঁকা রয়েছে। তবে কি সেখানেই পা পিছলে যায় তাঁর?

এর আগে দোলের সময়ে ওই জলাশয়ে নেমে বেশ কিছু ছাত্রছাত্রীকে দেখা যেত। পরিবার সূত্রে খবর, ওই ছাত্রী সাঁতার জানতেন না। তা সত্ত্বেও কি নিজেই জলে নেমেছিলেন অ্যাডভেঞ্চারের লক্ষ্যে? সে সময়ে তাঁর সঙ্গে কি কেউ ছিল? যে ৩টি সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে তার মুখ ওইদিকে নয়। ফলে ছাত্রী পড়ে গেলেন কীভাবে তা ক্যামেরায় ধরা পড়েনি। যদিও ইউনিয়ন রুম লাগোয়া সরু অংশ দিয়ে কে বা কারা শৌচালয়ের দিকে যাচ্ছে তা ধরা পড়বে ক্যামেরায়। অর্থাৎ ওই ছাত্রী কখন শৌচালয়ের দিকে গিয়েছিলেন, তাঁর সঙ্গে আর কেউ ছিলেন কি না, তা স্পষ্ট হবে সিসিটিভির ফুটেজে। 

Advertisement

জানা গিয়েছে,৪ নম্বর গেটের সামনের ওই জলায়শয়টি বড়জোর ৪ থেকে ৫ ফুট গভীর। সেক্ষেত্রে এত কম গভীরতার জলাশয়ে পড়ে গিয়ে কারও মৃত্যু সম্ভব কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, জলের গভীরতার উপর অনেক ক্ষেত্রেই মৃত্যু নির্ভর করে না। কিছুক্ষণ নাক-মুখ জলের নীচে থাকলেই মৃত্যু ঘটতে পারে। নেশাগ্রস্ত অবস্থায় পা টলে গিয়ে জলাশয়ে পড়েই কি তবে তরুণীর প্রাণ চলে গেল?

Jadavpur University
ঝিল পাড়

এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য ভিসেরা রিপোর্টের অপেক্ষা করছে লালবাজার। জানা গিয়েছে, ময়নাতদন্ত রিপোর্টে পাকস্থলী থেকে মদের গন্ধ পাওয়া গিয়েছে। সেক্ষেত্রে মেয়েটি সত্যিই মদ্যপ ছিলেন কি না, কতটা নেশা করেছিলেন, মদের সঙ্গে আর কোনও নেশার দ্রব্য ছিল কি না, এ সব জানতে ভিসেরা পরীক্ষা করা হবে। তাঁর শরীরে বাইরের কোনও আঘাত নেই। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট জানাচ্ছে, জলে ডুবেই মৃত্যু হয়েছে। 

পরিবারের তরফে কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। মেয়েটির বাবা বলেন, 'আমরা কোনও অভিযোগ করিনি। যা করার পুলিশ করবে। পুলিশ তদন্ত করে দেখছে। আমি বলতে পারব না কী হয়েছিল, কীভাবে হয়েছিল। আমি কি স্পটে ছিলাম নাকি!'

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের এই ছাত্রীকে ডাক নামে সম্বোধন করেছেন তাঁর বিশেষ বন্ধু। তাঁর জন্য একটি আবেগঘন ফেসবুক পোস্ট করেছেন তিনি। নিজেদের আদুরে একটি ছবি পোস্ট করে ওই তরুণ লিখেছেন, 'আমার ভালোবাসায় নিশ্চয়ই কোনও খামতি ছিল। আমার পূর্বজন্মের নিশ্চয়ই ছিল কোনও পাপ। তাই শুধু আমাকে না, সকলকে ছেড়ে চলে গেলি।আর কোনও কথা নেই। রাগ নেই। হেসেও উঠবি না আর। আমাকে এই নরক থেকে নিয়ে যেতে পারতিস ...।' সেই পোস্টে অংসখ্য মানুষ কমেন্ট করে জানতে চেয়েছেন ছেলেটির বান্ধবীর কী হয়েছে? কীভাবে এমন খারাপ ঘটনা ঘটল। অথচ কাউকেউ কোনও রিপ্লাই করেননি তিনি। যদিও জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে বান্ধবীর সঙ্গে ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠান দেখতে যাননি তিনি। এমনকী, সেদিন সারাদিনে তেমন ভাবে কথাও হয়নি দু'জনের।

আরও একবার এই মৃত্যুর ঘটনা ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। সহ উপাচার্যও মেনে নিয়েছেন যে ক্যাম্পাসে ‘যথেষ্ট’ নিরাপত্তা নেই। আগেই কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য রাজ্য সরকারকে প্রয়োজনীয় আর্থিক সাহায্য করার। তবে নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ ও সিসিটিভি বাড়ানোর জন্য বাজেট করে রাজ্য সরকারকে পাঠানো হলেও এখনও সরকারি মহল থেকে কোনও সাড়া মেলেনি বলে অভিযোগ শিক্ষক সমিতি জুটার।

এদিকে, নেশার বিরুদ্ধে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালাতে চান বলে দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ নম্বর গেট দিয়ে কিছু ABVP সমর্থক ভিতরে ঢুকে পড়েন। ক্যাম্পাসে সিসিটিভি বাড়ানো, নিরাপত্তা রক্ষী নিয়োগের দাবিতে এ দিন কর্তৃপক্ষকে ডেপুটেশন দেয় তৃণমূল ছাত্র পরিষদ।

 

POST A COMMENT
Advertisement