scorecardresearch
 

'তুম ভি মিলিটারি তো হাম ভি মিলিটারি', নেতাজিকে নিয়ে মোদী-মমতা তরজা 

নেতাজিকে নিয়ে রাজনীতি আজ নতুন নয়। আমরা পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা নেতাজিকে নিয়ে রাজনীতি করব না, সেটা তো হতে পারে না। Hat’s off to Narendra Modi। তিনি ২৩ জানুয়ারির আগে ঘোষণা করলেন, ইন্ডিয়া গেটে নেতাজির একটি গ্রানাইট মূর্তি স্থাপনা হবে। সুতরাং, সর্দার প্যাটেল শুধু নয়, নরেন্দ্র মোদী কিন্তু নেতাজিরও মূর্তি স্থাপনা করতে চলেছেন।

Advertisement
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল ছবি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল ছবি
হাইলাইটস
  • 'তুম ভি মিলিটারি তো হাম ভি মিলিটারি',
  • নেতাজিকে নিয়ে মোদী-মমতা তরজা 
  • জানুন বিস্তারিত তথ্য

নেতাজিকে নিয়ে রাজনীতি আজ নতুন নয়। আমরা পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা নেতাজিকে নিয়ে রাজনীতি করব না, সেটা তো হতে পারে না। Hat’s off to Narendra Modi। তিনি ২৩ জানুয়ারির আগে ঘোষণা করলেন, ইন্ডিয়া গেটে নেতাজির একটি গ্রানাইট মূর্তি স্থাপনা হবে। সুতরাং, সর্দার প্যাটেল শুধু নয়, নরেন্দ্র মোদী কিন্তু নেতাজিরও মূর্তি স্থাপনা করতে চলেছেন। আমাদের দেশে ‘পলিটিক্স অফ স্ট্যাচু’ সাংঘাতিক একটা ব্যাপার। এখন নেতাজিকে নিয়ে রাজনীতি যে শুধু মমতা বন্দোপাধ্যায় করছেন, তা নয়। 

মমতা বন্দোপাধ্যায় কী বলেছেন? নেতাজিকে নিয়ে ট্যাবলো কেন থাকবে না? কেন এটা নিয়ে মোদী রাজনীতি করছেন?  মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চিঠি লিখে রাজনীতি করেছেন, এ সব তো আমরা অনেক বলেছি। এখন নরেন্দ্র মোদী রাজনাথ সিং-কে দিয়ে  জবাব দিয়েছেন যে, ‘আমিও নেতাজি ভক্ত।’ সুতরাং, এটা বলতে পারবেন না যে, নেতাজিকে নিয়ে নরেন্দ্র মোদী কিছু করছেন না। 

রাজনীতি নিয়ে নিরপেক্ষভাবে একটা কথা বলব, ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী যখন ক্ষমতায় এলেন তখন তিনিই কিন্তু প্রথম নেতাজিকে ক্ল্যাসিফাই করলেন, আইএনএ-র সমস্ত নথির ব্যাপারে, যেগুলো নেহেরুর সময় থেকে আজ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, নেহেরু চেপে রেখেছিলেন। কেননা, ওই যে ব্রিটিশরা বলেছিল, নেতাজি হচ্ছেন war criminal। সুতরাং, সেই সমস্ত নথি এখন প্রকাশিত হচ্ছে। 
আমি একটা কথা বলব, আমি সেইসময় থেকে বিজেপি কভার করছি, যখন আডবাণী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন এবং বাজপেয়ী ছিলেন প্রধানমন্ত্রী তখনও নেতাজিকে  নিয়ে কমিশন গঠিত হল, ফরওয়ার্ড ব্লকের দেবব্রত বিশ্বাস গিয়ে বাজপেয়ীর সঙ্গে দেখা করলেন। ‘মুখার্জি কমিশন’ কিন্তু বিজেপি-ই করেছিল। এই সব কিছুই মমতা জানেন। কেননা, মমতা তখন এনডিএ-তে ছিলেন এবং তিনি তখন বিজেপির এই ইস্যুটাকেও সমর্থন করেছিলেন। 

আজ কী হচ্ছে? আজ বিজেপির এই রাজনীতিটাকে দেখে মনে হচ্ছে, মোদীর নেতাজি আর মমতার নেতাজি। এখানে মমতার স্ট্রেন্থটা কোথায়? মমতার স্ট্রেন্থ হচ্ছে কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা। তুম ভি মিলিটারি তো হাম ভি মিলিটারি। তুমি নেতাজিকে নিয়ে রাজনীতি করছ তো আমিও নেতাজিকে নিয়ে রাজনীতি করব। রাহুল গান্ধী এখানে ফ্লপ। এই যে নেতাজির মূর্তি স্থাপনা হচ্ছে। আর সেটা হওয়া উচিত কি অনুচিত, সেটা পরের কথা। যষ্মিন দেশে যদাচার। 

Advertisement

একটা কথা তো মানতেই হবে, নেতাজি নিয়ে এই রাজনীতিটা কিন্তু ২৩ জানুয়ারির আগে একটু বেশি হয়। তাহলে মোদী কী করছেন? মোদী, রাজনাথ সিং-কে দিয়ে চিঠি দিয়ে দেখিয়েছেন, তিনি নেতাজির খুব বড় ভক্ত। এক্ষেত্রে আমি বলব, নেতাজির ট্যাবলো বন্ধ করার কী দরকার ছিল? ট্যাবলো যদি হত, মমতা বন্দোপাধ্যায় যদি নেতাজিকে নিয়ে ট্যাবলো করতেন তাহলে কি এমন মহাভারত অশুদ্ধ হত! 
একটা কথা ভুলে যাবেন না, ‘ল অফ নেচার’ বলে একটা কথা আছে। ‘অ্যান্টি ইনকমবেন্সি’ বলে একটা কথা আছে। আজ শুধু মমতা বন্দোপাধ্যায় নয়, ট্যাবলো বাতিল নিয়ে তামিলনাডু, কেরালার মূখ্যমন্ত্রীরাও প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিচ্ছেন। কেন এটা হবে না, এই নিয়ে তাঁরাও বিরোধিতা করছেন। সুতরাং, এটা কিন্তু মানতে হবে, সাধু সাবধান! 

এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় খবর হল, নরেন্দ্র মোদী, ইন্ডিয়া গেটে নেতাজির মূর্তি স্থাপনা করতে যাচ্ছেন। আচ্ছা বলুন, নরেন্দ্র মোদী যেটা করছেন, এটা কি মমতা বন্দোপাধ্যায়ের যে ‘ট্যাবলো পলিটিক্স’ হয়েছিল, সেটাকে কাউন্টার করার জন্য? এভাবে তো হয় না। কেননা, দেশের প্রধানমন্ত্রী ২৩ জানুয়ারি যে নেতাজির মূর্তি স্থাপনা করবেন, সেটা কীভাবে হবে, কারা করবেন –এ সব ঠিক না করে, রিসার্চ না করে, একতরফা তো হতে পারে না। তাহলে কি তিনি নেতাজী ভক্ত? ২০১৪ সালের পরে মহাফেজ খানা থেকে সমস্ত তথ্য দেব বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে আংশিক ভাবে তা দেওয়া এবং ফেজ ম্যানারে দেওয়া, সেটা তো নরেন্দ্র মোদী করেছেন। এতে তো কোনও সন্দেহ নেই। তাহলে?

আপনি যদি বলেন, মমতা বন্দোপাধ্যায়, নেতাজিকে নিয়ে রাজনীতি করছেন, এতেও আমার সমস্যা। সবথেকে মুশকিল হল, নরেন্দ্র মোদী তো ২০১৪ সালে এসেছেন। ১৯৮৪ সালে মমতা বন্দোপাধ্যায় লোকসভার প্রার্থী হওয়ার পর, তিনি লোকসভায় দাবি তুললেন, ২৩ জানুয়ারি নেতাজির জন্মদিনে জাতীয় ছুটি দিবস ঘোষণা করতে হবে। তাহলে মমতা যখন এটা করেছিলেন তখন তো নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী নন। তাহলে এ ব্যাপারে মমতাও কিন্তু কনসিসটেন। 

তখন কমিউনিস্ট পার্টি, নেতাজিকে বলেছিল তেজোর কুকুর। সেই নেতাজীকে নিয়ে যখন তারা ফরওয়ার্ড ব্লক-কে সঙ্গে নিয়ে জয়ধ্বনি দিতে লাগল তখন মমতা সিপিএম এর বিরুদ্ধে নেতাজিকে নিয়ে রাজনীতি করেছেন। বিজেপি যখন নেতাজিকে নিয়ে রাজনীতি করছে তখনও কিন্তু মমতা রাজনীতি করছেন। এটা হল রাজনীতি বনাম রাজনীতি।

এটাই হচ্ছে মমতা বন্দোপাধ্যায় আর মোদীর ইউনিক পলিটিক্স। এখানে রাহুল গান্ধী ধারে কাছে ঘেঁসছেন না। এখানে রাহুল গান্ধী কোথায়? তিনি তো নেতাজিকে নিয়ে কোনো কথাই বলছেন না। আজ নেতাজিকে নিয়ে মোদী আর মমতা রাজনীতি করছেন। এই যে ট্যাবলো নিয়ে বিরোধিতা হচ্ছে, সেটা তো শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, তামিলনাডু, কেরালাও বিরোধিতা করছে। যার ফলে রাজ্য এবং কেন্দ্র বিরোধ হচ্ছে। মমতা বন্দোপাধ্যায় কিন্তু কেন্দ্র-রাজ্য রাজনীতি খুব একটা খারাপ করছেন না। এই যে আইএএস অফিসারদের কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ করবে, মমতা তারও বিরোধিতা করছেন। এমনকি বিজেপি শাসিত দলগুলোও বিরোধিতা করছে। কাজেই আমি বলব, মমতা বন্দোপাধ্যায় যা করছেন, ভালোই করছেন। 

এখন হয়তো আপনি বলবেন, নেতাজির দোকান। দোকান মানেটা কী? নেতাজী আমাদের কাছে ইমোটিভ ইস্যু। তাই বিমান বন্দরে নেতাজি মারা গেছেন কি যাননি, তার জন্য তিন তিনটে কমিশন হয়েছে, এটা নিয়ে বিজেপিও কমিশন করেছে। আর এটা নিয়ে এখনো বিতর্ক আছে। তাই মোদী বনাম মমতার লড়াই চলছে, চলবে।

Advertisement

Advertisement