সুটিয়া গণধর্ষণ কাণ্ডের অন্যতম সাক্ষী বরুণ বিশ্বাসের খুনের পিছনে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের (Jyotipriya Mallik) হাত থাকতে পারে বলে একাধিক বার জনসমক্ষে সরব হয়েছিলেন বরুণের দিদি প্রমীলা রায়। আজ, শুক্রবারও 'বাংলা ডট আজতক ডট ইন'কে ওই একই অভিযোগ জানিয়ে বললেন, 'আমার ভাই বরুণকে খুনের পিছনে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের হাত রয়েছে। আমি নিশ্চিত।'
২০ ঘণ্টারও বেশি ম্যারাথন তল্লাশি। রেশন বণ্টন দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। ইডি দফতরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাঁকে। প্রমীলাদেবী নিজের বক্তব্যে এখনও অনড়। তাঁর অভিযোগ, 'আমাদের মুখ বন্ধ করার অনেক চেষ্টা চলেছে। ভাইকে খুনের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে আমাদের আন্দোলন চলবে। আমি চাই এটার তদন্তও ইডি শুরু করুক। সিআইডি কোনও তদন্ত করেনি। ভুল পথে চালিত করেছে।'
প্রমিলা রায়ের আরও অভিযোগ, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক একাধিক দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত। আমার ভাই খুবই নিরীহ এবং জনপ্রিয় ছিলেন। ও আমাদের এলাকার নদী সংস্কার করতে চেয়েছিল। চাষিদের সমস্যা মেটাতে বাঁধ সংস্কারও করতে চেয়েছিল। ৩৮ কোটি টাকা অনুমোদিতও হয়েছিল। কিন্তু শাসকদল সেই টাকা তুলে কাজ করেনি। মানস ভুঁইয়া সবটা জানেন। তিনি তখন সেচমন্ত্রী ছিলেন।'
২০১২ সালের ৫ জুলাই গোবর়ডাঙা স্টেশনের বাইরে দুষ্কৃতীরা গুলি করে খুন করে কলকাতার মিত্র ইন্সটিটিউশনের (মেন) শিক্ষক বছর আটত্রিশের বরুণকে। অভিযোগ, ২০০০ সাল নাগাদ গাইঘাটার সুটিয়ায় একের পর এক বাড়িতে ঢুকে মহিলাদের ধর্ষণ করেছিল সুশান্ত চৌধুরী ও তার দলবল। ওই ঘটনার প্রতিবাদ করে আন্দোলনে নামেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ‘প্রতিবাদ মঞ্চের’ সামনের সারিতে ছিলেন বরুণ। সুশান্ত-সহ সাতজন দুষ্কৃতী ধরা পড়ে, তাদের সাজাও হয়। কিন্তু গণধর্ষণ কাণ্ডে আরও কিছু মামলা এখনও বিচারাধীন। তারই অন্যতম সাক্ষী ছিলেন বরুণ। তাঁকে খুনের ঘটনার তদন্তে নেমে সিআইডি জানায়, দমদম সেন্ট্রাল জেলে বসে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামী সুশান্তই খুনের ছক কষেছিল। বরুণকে খুনের অভিযোগে ধরা পড়ে আরও ছ’জন।
ভাইয়ের খুনের বিচার চেয়ে দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করছেন বরুণের দিদি প্রমীলা রায়। তাঁর অভিযোগ, ‘‘সিআইডি আমাদের পরিবারের কারও সঙ্গে কথা বলেনি। আমাদের কাউকে চেনেও না। এর থেকে বোঝা যায় মামলার তদন্ত কেমন হয়েছে।’’
তবে এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছিলেন জ্যোতিপ্রিয়বাবু। মন্ত্রী তখন সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, 'ওই অভিযোগ মিথ্যা। মানহানির অভিযোগ করেছি। ওই পরিবারটি বরুণকে নিয়ে ব্যবসা করছে। বরুণের নামে কোটি কোটি টাকা উঠেছে। খুনিরা সাজা পাক আমরাও চাই।'
উল্লেখ্য, প্রায় ২১ ঘণ্টা ধরে তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদের পর রাত ৩টে ২২ মিনিট নাগাদ রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে তাঁর সল্টলেকের বাড়ি থেকে বের করেন তদন্তকারীরা। সাড়ে তিনটে নাগাদ তাঁকে নিয়ে আসা হয় সিজিও কমপ্লেক্সে। এদিনই ধৃত মন্ত্রীকে আদালতে হাজির করাবেন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের আধিকারিকরা।