কালীপুজোর রাতে শব্দবাজির তাণ্ডব রুখতে এবারও বাড়তি নজর ছিল শহরের একাধিক বহুতল আবাসনে। থানাগুলির তরফে কালীপুজোর রাতে বিশেষ ড্রাইভ চলবে বলেও জানানো হয়েছিল। তবে কালীপুজোয় এবারেও জব্দ করা গেল না শব্দ দানবকে। দীপাবলির রাত বাড়তেই পাল্লা দিয়ে বাড়ল বাজির দাপটও। উত্তর থেকে দক্ষিণ, শহরের সব প্রান্তই শব্দবাজির তাণ্ডব ছিল একইরকম। এবার রবিবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত শব্দবাজির দাপট কম থাকলেও সন্ধে গড়াতেই বাড়ে উপদ্রব।
কালীপুজোয় আতসবাজি এবং শব্দবাজির দৌরাত্ম্য থাকবেই। সেই মোতাবেক দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আগেই জানিয়ে দিয়েছিল রাজ্যে শুধুমাত্র সবুজবাজি বিক্রি ও ফাটানো যাবে। শব্দবাজি রুখতে প্রশাসন বারবার আশ্বাস দিলেও, লুকিয়ে-চুরিয়ে শব্দবাজি বিক্রি হয়েই থাকে, কালী পুজোর আগে পরে বাংলার ছবিটা কম বেশি একইরকম থাকে। এবারও সেই চিত্রে বদল ঘটল না। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নিষেধাজ্ঞাকে আমল না দিয়ে কালীপুজোর রাতে নির্ধারিত সময়ের পরেও দাপিয়ে বেড়াল শব্দ দানব। রাত ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত ২ ঘণ্টার নির্দিষ্ট সময়সীমা পেরিয়ে দেদার পুড়ল বাজি। রবিবার রাতে উচ্ছৃঙ্খল আচরণের জন্য গ্রেফতার করা হয়েছে ২২ জনকে। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে সাড়ে ৯ কেজি শব্দবাজি।
নিউ মার্কেট, বাগবাজার, টালিগঞ্জ, গড়িয়ার মতো এলাকায় শব্দসীমা অতিক্রম করেই বাজি ফাটানো হয়েছে বলে অভিযোগ অঞ্চলের বাসিন্দাদের একাংশের। দুর্গাপুজোর বিসর্জনের শোভাযাত্রা থেকে শহরের একাধিক জায়গায় শব্দবাজি ফাটানোর যে অভিযোগ উঠেছিল, তা অব্যাহত ছিল লক্ষ্মীপুজোতেও। আশঙ্কা ছিল, কালীপুজোয় মাত্রা ছাড়াবে শব্দ-তাণ্ডব। কিন্তু তার পরেও কেন কড়া পদক্ষেপ করা হল না, সেই প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তরফে বলা হয়েছিল, বেরিয়াম রয়েছে এমন আতসবাজি ও শব্দবাজি বহুগুণ বাড়িয়ে তোলে বাতাসে দূষণের পরিমাণ। পরিবেশ দূষণ রোধে এবার গ্রিন ক্র্যাকার বা সবুজ বাজি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছিল প্রশাসন। কিন্তু মার্কেটে সবুজ বাজির ক্ষেত্রে যথাযথ নিয়ম মানা হচ্ছিল কি না তা নিয়ে প্রশ্ন চিহ্ন উঠেছিল। সবুজ বাজির ক্ষেত্রে বেরিয়াম নাইট্রেটের ব্যবহার একেবারেই নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু কোনও কোনও ক্ষেত্রে দেখা গেল, তাও ব্যবহার করা হয়েছে।
জানা গিয়েছে, রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সেভাবে শব্দবাজি ফাটতে শোনা যায়নি। তবে রাত বাড়তেই ধীরে ধীরে একাধিক এলাকায় পরপর সশব্দে বাজি ফাটতে থাকে। শহরের অনেক এলাকাতেই শব্দদূষণের মাত্রা পেরিয়ে যায় বাজির দাপটে। হাসপাতালগুলো সাধারণত সাইলেন্স জোনে থাকে। কিন্তু কালীপুজোর রাতে এসএসকেএম চত্বরে ৫২ ডেসিবেল শব্দদূষণ ছিল। আর জি কর হাসপাতাল এলাকায় তা ৬০ ডেসিবেল পর্যন্তও উঠে যায়। আবাসনগুলোতেও বেআইনিভাবে শব্দবাজি ফাটানোর অভিযোগ উঠেছে। লালবাজারের তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে অভিযোগ পেলেই তা খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হচ্ছে। সাড়ে ৮টা পর্যন্ত সাড়ে ন’কেজি বাজি আটক করা হয়েছে। গ্রেফতারও করা হয়েছে ২২ জনকে। রবিবার শব্দবাজির দাপট রুখতে তৎপর ছিল পুলিশ ও প্রশাসন। আগে থেকে নজরদারি চালিয়েও অনেকটা রোখা গিয়েছে শব্দ দানবের দাপট। কালীপুজোর রাতেও অতিরিক্ত পাঁচ হাজার পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। তবুও দূষণে সেভাবে লাগাম পরানো যায়নি বলেই দাবি করছেন শহরবাসীর একাংশ।