কসবা কাণ্ড নিয়ে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। সেই মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছিলেন মহুয়া মৈত্র। তাঁকে পল্টা আক্রমণ করলেন শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ। রবিবার রাতে মহুয়ার করা এক্স পোস্টের জবাবে রবিবার সকালে কল্যাণ বলেন, 'হানিমুন কাটিয়ে দেশে ফিরে এসেই আমার সঙ্গে ঝামেলা শুরু করে দিয়েছে।'
মহুয়াকে ব্যক্তিগত আক্রমণ কল্যাণের
কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে বসলেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি মহুয়া সম্পর্কে বলেন, 'হানিমুন কাটিয়ে দেশে ফিরে এসেই মহুয়া আমার সঙ্গে ঝামেলা শুরু করে দিয়েছেন। উনি আমায় নারীবিদ্বেষী বলছেন! তাহলে উনি নিজে কী? একজনের ৪০ বছরের সংসার ভেঙেছেন। ৬৫ বছরের একজনকে বিয়ে করেছেন। উনি বুঝি ওই মহিলাকে আঘাত করেননি?' রাজনৈতিক ইস্যু টেনেও আক্রমণ শানিয়েছেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, 'নিজের কেন্দ্রে সমস্ত মহিলা নেতার বিরুদ্ধে তিনি। ২০১৬ সালে তৃণমূলে এসেছিলেন। তার অনেক আগে দল ক্ষমতায় এসেছে। রাহুল গান্ধীকে নিজের বন্ধু হিসেবে দেখিয়ে নিজের রাজনৈতিক কেরিয়ার শুরু করেছিলেন মহুয়া।'
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, 'কালীগঞ্জ উপনির্বাচনে দল আমায় প্রচার করতে বলেছিল। আমি রাজি হয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে জানতে পারি মহুয়া স্থানীয় নেতাদের বলে রেখেছিলেন, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় যেন এই এলাকায় পা না রাখতে পারেন। আমি সঙ্গে সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করেছিলাম। উনি আমায় জানান, প্রচারে কোনও বাধা নেই। দিদি বলেছিলাম, আমি ওখানে গিয়ে প্রচার করলে মহুয়া তৃণমূল প্রার্থীকে হারানোর চেষ্টা করবে। তৃণমূল প্রার্থীর জয়ী হওয়াই সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সে কারণে আমি প্রচারে যাইনি।'
আক্রমণের ঝাঁজ বাড়িয়ে শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ আরও বলেন, 'নৈতিকতা লঙ্ঘন করার জন্য যাঁকে সংসদ থেকে বিতাড়ন করা হয়েছিল, তিনি আবার আমায় জ্ঞান দিচ্ছেন! উনিই সবচেয়ে বেশি নারী বিদ্বেষী। শুধু নিজের ভবিষ্যৎ গোছাতে জানেন উনি। আর জানেন কীভাবে টাকা কামাতে হয়।'
কল্যাণের কোন মন্তব্যে বিতর্ক?
বিতর্কের সূত্রপাত শুক্রবার। কসবার সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজের ভিতর এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘বন্ধু যদি বান্ধবীকে ধর্ষণ করে, তা হলে নিরাপত্তা দেবে কে?’ কামারহাটির বিধায়ক মদন এর মাঝেই আরও এক ধাপ এগিয়ে বলেছিলেন, 'মেয়েটি ওখানে না গেলে এই ঘটনা ঘটত না! যদি যাওয়ার সময় কাউকে বলে যেত, কিংবা কয়েক জন বান্ধবীকে সঙ্গে নিয়ে যেত, তা হলে হয়তো এই ঘটনা আটকানো যেত।' বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে দাবানলের মতো।
তৃণমূলের বিবৃতি
বিবৃতি দিয়ে তৃণমূল বলে দেয়, ‘এই ধরনের বক্তব্য ব্যক্তিগত। কোনও ভাবেই তা দলের অবস্থানকে প্রতিফলিত করে না। আমাদের অবস্থান স্পষ্ট। মহিলাদের উপর অপরাধের ক্ষেত্রে বরাবরই জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও করা হবে। যারা এই নৃশংস ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে যেন কঠোরতম শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়।’
মহুয়ার সমালোচনা
এক্স হ্যান্ডলে মহুয়া কারও নাম না করেই লেখেন, ‘ভারতে নারীবিদ্বেষ দলের গণ্ডিতে আটকে নেই। কিন্তু তৃণমূলকে অন্যদের থেকে আলাদা করে একটাই বিষয়, আমরা এই ধরনের বিরক্তিকর মন্তব্যের প্রতিবাদ করি, তা সে যে-ই করুন না কেন।’
কল্যাণ-মহুয়ার পূর্বেও ঝামেলা
কল্যাণের সঙ্গে মহুয়ার সম্পর্ক মোটে মধুর নয়। এর আগে প্রকাশ্যে তাঁরা বিতন্ডায় জড়িয়েছেন। গত এপ্রিলে দলের এক প্রবীণ সাংসদের আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে তৃণমূলের হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপ ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন এক মহিলা সাংসদ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠিও লিখেছিলেন। প্রকাশ্যে অবশ্য কেউ কারও নাম করেননি। তবে মহুয়া যে অভিযোগটি কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কেই করেছিলেন, তা দলের অন্দরে কান পাতলেই জানা যায়।