দলের উপর কার্যত অভিমান করেই লোকসভায় চিফ হুইপ পদ থেকে ইস্তফা দিলেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। ফের একবার প্রকাশ্যে এসেছে তাঁর সঙ্গে মহুয়া মৈত্রর দ্বন্দ্ব। সোমবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক শুরুর আগে কৃষ্ণনগরের সাংসদের মুখ দেখে ফেলায় তাঁর দিন বাজে যাবে বলে উল্লেখ করা থেকে বৈঠক শেষে দিন সত্যিই খারাপ গিয়েছে বলে কল্যাণের মন্তব্য রাজনৈতিক মহলে শোরগোল ফেলেছে। ইস্তফার পরই মহুয়া সম্পর্কে দীর্ঘ পোস্ট করে শ্রীরামপুরের সাংসদের ক্ষোভ উগরে দেওয়াও কারও নজর এড়ায়নি। তবে রাজনৈতিক মহলের অন্দরে জোর চর্চা, শুধু কি মহুয়া মৈত্রর উপর ক্ষোভ থেকেই দায়িত্ব ছাড়ালেন কল্যাণ? নাকি এর নেপথ্যে রয়েছে জমে থাকা আরও কোনও অভিযোগ-অভিমান?
কেন ইস্তফা?
লোকসভার মুখ্য সচেতকের পদ থেকে ইস্তফার কারণ হিসাবে শ্রীরামপুরের সাংসদ জানিয়েছেন, নেত্রী মমতা তাঁর উপর আস্থা রাখতে পারেননি। তাই তিনি ইস্তফা দিয়েছেন। কিন্তু সেটিই কি একমাত্র কারণ? ঘটনাচক্রে, কল্যাণের ইস্তফার দিনেই মমতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবর্তে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে লোকসভার দলনেতা ঘোষণা করেছেন। সেটিও কি তাঁর ইস্তফার কারণ? কল্যাণ নিজে বলেছেন, অভিষেকের লোকসভার নেতা হওয়ার সঙ্গে তাঁর ইস্তফার কোনও সম্পর্ক নেই। অভিষেকের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কও খুব ভাল বলে উল্লেখ করেছেন শ্রীরামপুরের সাংসদ। তবে রাজনৈতিক মহলে চর্চা থামছে না।
অভিষেকের সঙ্গে কী কথা?
সূত্রের খবর, মুখ্য সচেতক পদ ছাড়ার পর কল্যাণকে ফোন করেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কল্যাণ সংবাদমাধ্যমে জানান, অভিষেক তাঁকে জানিয়েছেন, আগামী ৭ অগাস্ট পর্যন্ত দায়িত্ব সামলাতে। তারপর তিনি সংসদ অধিবেশনে যোগ দেবেন। তবে অভিষেকের সঙ্গে কথা হলে কল্যাণ নিজের মন বদল করে ইস্তফা প্রত্যাহার করবেন কি না, তার কোনও ইঙ্গিত মেলেনি। এর আগেও কল্যাণের সঙ্গে দলের দূরত্ব হয়েছিল। তাঁর একাধিক মন্তব্যে বিতর্ক তৈরি হওয়ায় দল দূরত্ব বজায় রেখেছে।
কল্যাণের আক্ষেপ
তৃণমূল সাংসদ দলের অন্দরে মাঝেমধ্যেই আক্ষেপ দেখিয়েছেন বলে সূত্রের খবর। লোকসভার সাংসদদের মধ্যে ‘সমন্বয়’ নিয়ে তিনি অনুযোগ করেন কল্যাণ। কোন কোন সাংসদ সংসদ অধিবেশনে নিয়মিত উপস্থিত থাকেন না, তা নিয়েও দলের অন্দরে সরব হয়েছেন বলে খবর। সংসদে কোন বিষয়ে কে বলবেন, সে ব্যাপারে মমতা কিছু জানতেন না বলে জানিয়েছেন শ্রীরামপুরের সাংসদ। এমনকী অপারেশন সিঁদুর নিয়ে লোকসভার বিতর্কসভায় মহুয়া মৈত্র বললে তিনি বলবেন না বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানিয়েছিলেন কল্যাণ। এরপরই সায়নী ঘোষের নাম প্রস্তাব করা হয়।
তবে মহুয়ার সঙ্গে কল্যাণের দ্বন্দ্ব যেন ক্রমশই তীব্র হচ্ছে। ইন্ডিয়া টুডের পডকাস্টে মহুয়া মৈত্রর একটি মন্তব্য প্রসঙ্গে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'সম্প্রতি একটি পডকাস্টে মহুয়া মৈত্রের মন্তব্য শুনেছি। যেখানে তিনি সহ-সাংসদকে শুয়োরের সঙ্গে তুলনা করেছেন। যা শুধু অবমাননাকর নয়, সাধারণ নাগরিক রীতির পরিপন্থী।' তাঁকে 'বড়লোকের বিটি লো' বলেও কটাক্ষ করেন কল্যাণ।