কলকাতার সরকারি আইন কলেজে ২৪ বছর বয়সী প্রথম বর্ষের ছাত্রীর গণধর্ষণের অভিযোগের ঘটনায় উত্তাল শহর। ছাত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে শুরু হয়েছে তদন্ত। জানা গিয়েছে, ঘটনার পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে ইতিমধ্যেই। একইসঙ্গে গোপন জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে নির্যাতিতার।
সাউথ সাবআর্বান ডিভিশনের DC বিদিশা কলিতা জানিয়েছেন,তদন্ত দ্রুতগতিতে চলছে। ২৫ জুন অর্থাৎ ঘটনার দিনের ৭ ঘণ্টার CCTV ফুটেজ বাজেয়াপ্ত করা য়েছে। সেদিন দুপুর ৩.৩০ থেকে রাত ১০.৫০ পর্যন্ত সময়ের CCTV ফুটেজ রয়েছে। সূত্রের খবর, পুলিশের সংগ্রহ করা ওই ফুটেজে নির্যাতিতাতে গার্ড রুমে জোর জবরদস্তি নিয়ে যাওয়ার ফুটেজ দেখা গিয়েছে।
তদন্তাকারীরা আরও জানাচ্ছেন, CCTV ফুটেজে ৩ অভিযুক্ত, নিরাপত্তারক্ষী এবং নির্যাতিতার গতিবিধি স্পষ্টরূপে নজরে এসেছে। এই ফুটেজের সঙ্গেই নির্যাতিতার বয়ান মিলিয়ে দেখা হচ্ছে।
ক্রাইম সিন থেকে কী কী মিলল?
সাউথ ক্যালকাটা ল'কলেজের ৩ গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল, ছাত্রদের ইউনিয়ন রুম, ওয়াশরুম এবং গার্ড রুম থেকে একাধিক নমুনা সংগ্রহ করেছেন তদন্তকারীরা। এছাড়াও উদ্ধার হয়েছে একাধিক বস্তু। তার মধ্যে রয়েছে চুলের গোছা, তরল পদার্থ, বোতল এবং একটি হকি স্টিক।
নির্যাতিতা অভিযোগ করেছেন, অভিযুক্তরা তাঁকে হকি স্টিক দেখিয়ে ভয় দেখানোর চেষ্টা করে। হুমকি দেয়য়। ৩টি ঘরেই নির্যাতনের চিহ্ন স্পষ্ট বলেই জানা গিয়েছে পুলিশ সূত্রে। উদ্ধার হওয়া প্রতিটি জিনিসই ফরেন্সিক টেস্টের জন্য পাঠানো হয়েছে।
৫ সদস্যের SIT গঠন
গণধর্ষণের এই ঘটনায় ACP প্রদীপ ঘোষালের নেতত্বে ৫ সদস্যের একটি স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম (SIT) গঠন করা হয়েছে। ধৃত প্রত্যেকেরই ১ জুলাই পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
ছাত্রীর উপর নির্যাতনের প্রমাণ
আজতকের হাতে আসা এক্সক্লুসিভ মেডিক্যাল রিপোর্টের কপি বলছে, নির্যাতিতার গলায় খামচানোর দাগ রয়েছে। এছাড়াও তাঁর বুক এবং থাইতেও গভীর ক্ষত হয়েছে। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে,নির্যাতিতার সঙ্গে যৌন হেনস্থা হয়েছে। ধর্ষণ হয়েছে, সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না বলেই মনে করছেন চিকিৎসকরা।
কেমন আছেন নির্যাতিতা?
৩টি সোয়াব স্যাম্পেল সংগ্রহ করেছে ফরেন্সিক টিম। যার মাধ্যমে DNA এবং অন্যান্য নমুনা পরীক্ষা করা হবে। মেডিক্যাল রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমানে নির্যাতিতার ব্লাড প্রেশার রেছে ১২০/৮২। পাল্স রেট ৭২। নির্যাতিতা গর্ভবতী নন এবং শেষবার তিনি রজঃস্বলা হয়েছিলেন গত ১৮ জুন।
পুলিশের কাছে দেওয়া বয়ানে নির্যাতিতা জানিয়েছিলেন, ২৫ জুন সন্ধ্যায় তাঁকে কলেজের ডি ব্লকে গার্ডরুমে জোর করে নিয়ে যাওয়া হয়। যেখানে আগে থেকেই আরও ২ জন উপস্থিত ছিল। জোর করে মেয়েটিকে আটকে রেখে নৃশংস অত্যাচার চালানোর অভিযোগ ওঠে ৩ জনের বিরুদ্ধে।
৩ ঘণ্টা ধরে চলে নির্যাতন
মনোজিৎ মিশ্র ধর্ষণ করার সময়ে বাকি ২ জন ভিডিও করছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। ৩ ঘণ্টা ধরে মেয়েটির উপর অকথ্য অত্যাচার করার অভিযোগও উঠেছে। কেবলমাত্র শারীরিক নয়, গভী মানসিক নির্যাতনও চালানো হয়েছে প্রথম বর্ষের ছাত্রীর উপর।
অভিযুক্তরা তাঁকে ভয় দেখিয়ে হুমকি দেয় বলেই অভিযোগ নির্যাতিতার। কাউকে কিছু জানালে তাঁর প্রেমিককে খুন করে দেওয়া হবে এবং মা-বাবার নামে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করা হবে। তবে শত হুমকি সত্ত্বেও মেয়েটি সাহস করে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন।