কলকাতার আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিক্ষানবিশ চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় দেশজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। এই মর্মান্তিক ঘটনায় নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনাটি নিয়ে সারা দেশে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চলছে, যেখানে মানুষ রাস্তায় নেমে নারীর প্রতি হিংসার বিরুদ্ধে তাদের আওয়াজ তুলছেন।
দেশজুড়ে চিকিৎসকরা এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন এবং অনেক হাসপাতালে ধর্মঘট চলছে। যদিও কিছু জায়গায় জরুরি পরিষেবা, যেমন ওপিডি ও আইসিইউ চালু রয়েছে, তবুও অধিকাংশ চিকিৎসকই জরুরি পরিষেবা ছাড়া অন্যান্য কাজ বন্ধ রেখেছেন। কলকাতার বিক্ষোভরত চিকিৎসকরা আজ, ২১শে আগস্ট, সিবিআই অফিস থেকে বিধান নগরে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অফিস পর্যন্ত মিছিল করার পরিকল্পনা করেছেন।
বিক্ষোভের মাত্রা আরও বেড়ে গেছে যখন প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলীও আজ তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে এই প্রতিবাদে রাস্তায় নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অন্যদিকে, সিবিআই টানা ষষ্ঠ দিনের মতো প্রাক্তন অধ্যক্ষকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে, যা এই ঘটনায় তদন্তের গতি বাড়িয়ে দিয়েছে।
দিল্লির আরএমএল হাসপাতালসহ কিছু জায়গায় সুপ্রিম কোর্টের আপিলের পর ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হলেও, ফাইমা (FAIMA) চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে, যেখানে এই ঘটনা ঘটেছে, সেখানে ১২ তম দিনের জন্য জুনিয়র ডাক্তারদের ধর্মঘট অব্যাহত রয়েছে, ফলে সরকারি হাসপাতালগুলির স্বাস্থ্য পরিষেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
সরকারি হাসপাতালের একজন আন্দোলনরত চিকিৎসক জানিয়েছেন, "আমাদের বোনের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। আমরা কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা চাই। আমাদের প্রাথমিক দাবি দোষীদের শাস্তি দেওয়া।" এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, অন্যান্য রাজ্যের মতো উত্তরপ্রদেশেও ধর্মঘট চলছে, যার ফলে ওপিডি, পাঠদান ও অপারেশন সংক্রান্ত কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে গোয়ায়, রাজ্য সরকারের আশ্বাসে জুনিয়র ডাক্তাররা তাদের আন্দোলন প্রত্যাহার করেছেন।
কলকাতার এই ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে ছাত্র সংগঠনগুলোও প্রতিবাদে নেমেছে। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ দেখিয়েছে, যা ঘটনাটির প্রতি তাদের গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভের প্রকাশ।
উল্লেখ্য, ৯ আগস্ট কলকাতার আরজি কর মেডিকেল কলেজের সেমিনার হলে একজন শিক্ষানবিশ চিকিৎসকের মৃতদেহ পাওয়া যায়। পরদিন একজনকে গ্রেফতার করা হয়। মামলাটি ক্রমাগত গুরুতর আকার ধারণ করায় কলকাতা হাইকোর্ট মামলাটি সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেয়।
এই ঘটনাটি ভারতীয় সমাজে নারীদের নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার প্রশ্নে গভীর সংকট তুলে ধরেছে। বিক্ষোভ ও আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণ এই ধরনের জঘন্য অপরাধের বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছে এবং সরকারের কাছে নারীর প্রতি হিংসা রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানাচ্ছে।