আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে এবার গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন সেখানকারই প্রাক্তন ডেপুটি সুপার আখতার আলি। মঙ্গলবার ‘বাংলা ডট আজতক ডট ইন’কে আখতার আলি অভিযোগ করেন, "সন্দীপ ঘোষের মতো দুর্নীতিগ্রস্থ অধ্যক্ষ আমি জীবনে দুটো দেখিনি। তিনি মোস্ট কোরাপ্টেড প্রিন্সিপাল।" তিনি দাবি করেন, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে তিনটি প্রধান দুর্নীতি ছিল: বায়ো মেডিক্যাল দুর্নীতি, ছাত্র-ছাত্রীদের ফেল করানোর ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়, এবং অ্যাকাডেমিক ফান্ডের টাকার নয়ছয়। এই সমস্ত দুর্নীতি পরিচালিত হতো সন্দীপ ঘোষের নেতৃত্বে।
সম্প্রতি, আরজি কর হাসপাতালে পর্নোগ্রাফি এবং অঙ্গপাচার চক্রের অভিযোগও উঠেছে, যদিও আখতার আলি পর্নোগ্রাফি বা অঙ্গপাচার সম্পর্কে সরাসরি কিছু বলতে পারেননি। তবে তিনি জানান, গেস্ট হাউসে মেয়েদের আনা এবং অ্যাডাল্টারি (বহুগামিতা) হত সন্দীপ ঘোষের মদতে। আখতার আলি বলেন, "কিছু চিকিৎসক সন্দীপ ঘোষের সঙ্গে যুক্ত ছিল। সবটাই হত সন্দীপ ঘোষের কথায়।" তিনি আরও জানান, সন্দীপের বিরুদ্ধে এর আগে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন, কিন্তু সেই অভিযোগের পরেও কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
আখতার আলির অভিযোগের ভিত্তিতে সন্দীপ ঘোষের শাস্তির দাবি উঠেছে। আখতার অভিযোগ করেন, "অনেক ছাত্রের ক্ষতি করেছেন তিনি। পড়ুয়াদের ফেল করিয়ে দিতেন। পাশ করানোর জন্য পড়ুয়াদের কাছ থেকে টাকা নিতেন।" তিনি আরও জানান, ডেপুটি সুপার থাকাকালীন এই অনিয়মগুলি প্রত্যক্ষ করেছিলেন এবং কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে ছিলেন। তবে সেই সময় কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। কিন্তু এখন তদন্ত শুরু হয়েছে, এবং তিনি আশা করছেন যে সন্দীপ ঘোষ শাস্তি পাবেন।
২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে, যার তদন্তে সম্প্রতি নবান্ন থেকে একটি বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই সিট সংশ্লিষ্ট সব সরকারি দফতর এবং বেসরকারি এজেন্সির নথিপত্র পরীক্ষা করে দেখবে। যেই সময় থেকে এই অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে, সেই সময় সন্দীপ ঘোষ অধ্যক্ষ পদে ছিলেন।
আরজি কর হাসপাতালে নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর থেকে সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠতে শুরু করে। এর ফলে কলেজের চিকিৎসক এবং পড়ুয়াদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয় এবং সন্দীপের পদত্যাগের দাবি ওঠে। শেষ পর্যন্ত আন্দোলনের চাপে পড়ে ১২ আগস্ট, সোমবার সন্দীপ ঘোষ পদত্যাগ করেন। কিন্তু স্বাস্থ্য দফতর তাঁকে অন্য একটি সরকারি হাসপাতালে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ করলেও সেখানে ফের আন্দোলনের মুখে পড়তে হয়। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে তাঁকে লম্বা ছুটিতে পাঠানো হয়।
সিবিআই সন্দীপ ঘোষকে পাঁচবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। মঙ্গলবার সকালেও তিনি সিজিও কমপ্লেক্সে গিয়েছেন, তবে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়বস্তু এখনও স্পষ্ট নয়। সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে আখতার আলির করা অভিযোগের বিষয়ে তাঁর কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।