
আরজিকর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সাম্প্রতিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে, তা এখনও চলছে। ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করতে তদন্তকারীরা এখনো ধন্দে রয়েছেন। এর ফলে রাজ্যজুড়ে দফায় দফায় আন্দোলন চলছে, যা সবথেকে বেশি সমস্যায় ফেলেছে সাধারণ রোগীদের। রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা রোগীরা চিকিৎসা না পেয়ে চরম দুর্দশার সম্মুখীন হচ্ছেন। অভিযোগ উঠেছে, শিশুর করুণ মুখ দেখেও ডাক্তাররা হাত গুটিয়ে বসে আছেন। মুমূর্ষু রোগীদের স্ট্রেচারে পড়ে থাকতে হচ্ছে চিকিৎসা ছাড়াই। এই দৃশ্য শুধু আরজিকর নয়, নীলরতন মেডিক্যাল কলেজ ও এসএসকেএম হাসপাতালেও একই রকম দেখা যাচ্ছে।
নীলরতনে দেখা গেল, এক বৃদ্ধ রোগীকে স্ট্রেচারে শুইয়ে রাখা হয়েছে, নাকে নল লাগানো অবস্থায় তিনি ধুঁকছেন। তাঁর ছেলে, উলুবেড়িয়ার বাসিন্দা দিবাকর দাস, উদভ্রান্তের মতো ফোনে বলতে শোনা গেল, "কলকাতার সব হাসপাতালই তো প্রায় ঘুরে ফেললাম! আর কত? এ বার তো আর বাবা বাঁচবে না!" দিবাকরের বাবা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে আক্রান্ত। শনিবার থেকে তিনি ডাক্তারদের কাছে অনুনয়-বিনয় করছেন, তবে চিকিৎসা হচ্ছে নামমাত্র। তাঁর আর্তি, "রাত দখলের দিন আমিও পথে নেমেছিলাম। আমিও বিচার চাই। কিন্তু আমাদের তো আগে বাঁচতে হবে।"
একই ধরনের কষ্টকর অভিজ্ঞতা বনগাঁর বাসিন্দা পরিমল সামন্তের। তিনি তাঁর ৯ বছরের মেয়েকে নিয়ে প্রথমে এসএসকেএম হাসপাতালে যান, কিন্তু সেখানে ভর্তি নেওয়া হয়নি। পরে এম আর বাঙুর হাসপাতালে গেলেও একই ফল হয়। শেষমেষ তিনি নীলরতনে আসেন, কিন্তু চিকিৎসা সঠিকভাবে হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, "কোথাও ডাক্তার নেই। তাহলে আমরা যাব কোথায়?"
কলকাতার মেডিক্যাল কলেজগুলিতে চলা জুনিয়র চিকিৎসকদের লাগাতার কর্মবিরতির ফলে রোগীদের দুর্ভোগ ক্রমাগত বাড়ছে। প্রতিদিনই বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে রোগীদের ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। সোমবারও তার ব্যতিক্রম ছিল না। কবে এই ভোগান্তি শেষ হবে, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।
আরজিকর হাসপাতালের ঘটনায় সিবিআই তদন্ত চালাচ্ছে এবং আদালত সিআইএসএফ মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছে। তবুও কর্মবিরতি চলতে থাকায় প্রশ্ন উঠছে, আন্দোলনকারীদের আরও কি দাবি রয়েছে? নীলরতন হাসপাতালের চিকিৎসক রবি শঙ্কর জানান, "আমাদের দাবি ছিল প্রকৃত দোষীদের গ্রেফতার করা ও শাস্তি দেওয়া। সর্বত্র নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে। অনেকেই সন্দেহ করছেন, এই ঘটনায় একাধিক ব্যক্তি জড়িত। সেক্ষেত্রে খুনিরা এখনও বাইরে ঘুরছে। তাই দোষীরা গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি প্রত্যাহার করা সম্ভব নয়। তবে ওপিডি খোলা রয়েছে এবং বয়স্ক ও বাচ্চাদের তক্ষণাৎ চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।"
কিছু চিকিৎসাকর্মী স্বীকার করেছেন, এই কর্মবিরতির ফলে রোগী পরিষেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষত, ক্যানসার, হৃদ্রোগ, স্নায়ুরোগের মতো জটিল রোগের চিকিৎসা মূলত মেডিক্যাল কলেজগুলিতেই পাওয়া যায়, এবং সেই পরিষেবার অভাবে রোগীদের দুর্ভোগ বাড়ছে। বহু রোগী বলছেন, "আমরাও বিচার চাই, রাত দখলের দিন আমরাও পথে নেমেছিলাম। কিন্তু আমরা তো গরিব, চিকিৎসা না পেলে কোথায় যাব?"