কলকাতা-হাওড়ার সংযোগ আরও মজবুত করতে গঙ্গার তলা দিয়ে নতুন সুড়ঙ্গপথ নির্মাণের উদ্যোগ নিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। ইতিমধ্যেই মেট্রোরেলের সুড়ঙ্গ তৈরি করে কলকাতা ও হাওড়াকে যুক্ত করা হয়েছে। এবার পণ্যবাহী ট্রাক চলাচলের জন্য গঙ্গার নীচ দিয়ে ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সুড়ঙ্গ তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগ
‘প্রধানমন্ত্রী গতিশক্তি’ প্রকল্পের অধীনে এই সুড়ঙ্গ নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১১,০০০ কোটি টাকা। সুড়ঙ্গ-সহ রাস্তার মোট দৈর্ঘ্য হবে ১৫ কিলোমিটার। কলকাতার মেটিয়াবুরুজ থেকে হাওড়ার সংযোগকারী এই সুড়ঙ্গ ট্রাক চলাচলের জন্য বিশেষভাবে তৈরি হবে। এতে হাওড়া ব্রিজ এবং বিদ্যাসাগর সেতুর উপর থেকে ভারী যানবাহনের চাপ অনেকটাই কমবে।
সুড়ঙ্গ নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা
বন্দর এলাকা থেকে পণ্যবাহী ট্রাক সরাসরি জাতীয় সড়কে নিয়ে যাওয়ার ভাবনা বহুদিনের। বর্তমানে ট্রাকগুলিকে দ্বিতীয় হুগলি সেতু হয়ে কলকাতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এতে যানজট যেমন বাড়ে, তেমনই পরিবহন ব্যবস্থাও ধীরগতির হয়। সুড়ঙ্গটি তৈরি হলে গঙ্গার তলা দিয়ে ট্রাক চলাচল করতে পারবে, ফলে শহরের যানজট অনেকটাই কমবে।
কী বলছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী
কেন্দ্রীয় জাহাজ ও জলপথ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর জানিয়েছেন, প্রকল্পের জন্য সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে এবং আগামী বছর থেকেই কাজ শুরু হতে পারে। তিনি বলেন, ‘‘শুধু কলকাতা নয়, গোটা রাজ্যের জন্য এই সুড়ঙ্গ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি চালু হলে রাজ্যের যে কোনও জায়গায় সহজেই পণ্য পরিবহন সম্ভব হবে।’’
সুড়ঙ্গপথের সম্ভাব্যতা
গঙ্গার তলা দিয়ে সুড়ঙ্গ নির্মাণের সম্ভাব্যতা পরীক্ষা করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। ২০২২ সালে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বন্দর কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে একটি বেসরকারি সংস্থা এই পরীক্ষা চালায়। ইতিমধ্যেই সেই রিপোর্ট মন্ত্রকে জমা পড়েছে।
যানজট মুক্ত কলকাতার স্বপ্ন
বর্তমানে কলকাতায় যানজট কমাতে দিনে ৮ ঘণ্টা ভারী গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকে। তবুও রাস্তায় যানজট লেগেই থাকে। এই সুড়ঙ্গপথ চালু হলে যানজট থেকে শহর অনেকটাই মুক্তি পাবে। বন্দর থেকে কোনও ট্রাককে জাতীয় সড়কে যেতে হলে প্রধান পথ দ্বিতীয় হুগলি সেতু। সেই সেতু দিয়েই যাতায়াতের জন্য কলকাতা শহরে ঢুকতে হয় ট্রাককে।
শহরের যান চলাচলে যাতে ব্যাঘাত না ঘটে, তার জন্যই সুড়ঙ্গপথের প্রস্তাব কেন্দ্রীয় সড়কমন্ত্রী নিতিন গডকড়ীকে দিয়েছিলেন শান্তনু। বনগাঁর বিজেপি সাংসদ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হওয়ার পরেই ওই প্রস্তাব দেন। গঙ্গার তলা দিয়ে হাওড়ায় যাওয়ার সুবিধা হয়ে গেলে এ সব থেকে কলকাতা মুক্তি পাবে বলে দাবি শান্তনুর।