এআই জেনারেটেড ছবি, গ্রাফিক্স: শুভঙ্কর মিত্রদেশের প্রথম মেট্রো রেল আজ পড়ল ৪১ বছরে। ১৯৮৪ সালের ২৪ অক্টোবর এসপ্ল্যানেড থেকে ভবানীপুর (বর্তমানে নেতাজি ভবন) পর্যন্ত মাত্র ৩.৪ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে যে যাত্রার সূচনা হয়েছিল, আজ তা হয়ে উঠেছে কলকাতার প্রাণপ্রবাহ। শুক্রবার নতুন এসপ্ল্যানেড মেট্রো স্টেশনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পালিত হলো কলকাতা মেট্রো রেলের জন্মদিন। অনুষ্ঠানে মেট্রোর সাফল্যের ইতিহাস তুলে ধরা হয়, এবং ভবিষ্যৎ সম্প্রসারণ পরিকল্পনাও ঘোষণা করেন কর্তৃপক্ষ।
ব্লু লাইনে আসছে বড়সড় সংস্কার
ছট পুজোর পরেই শুরু হচ্ছে কবি সুভাষ মেট্রো স্টেশনের পুনর্নির্মাণের কাজ। পাশাপাশি ক্ষুদিরাম মেট্রো ক্রসওভারের আটকে থাকা কাজও দ্রুত গতিতে শুরু হবে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী সপ্তাহ থেকেই ব্লু লাইনে রাইটস সংস্থা কাজ শুরু করবে। CBTC সিগন্যালিং সিস্টেম চালু করার প্রস্তুতিও প্রায় শেষ। সব কিছু পরিকল্পনামাফিক এগোলে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই অরেঞ্জ লাইনের পুরো অংশে পরিষেবা চালু হয়ে যাবে।
চিংড়িঘাটার কাজ শুরু নভেম্বরেই
দীর্ঘদিন আটকে থাকা চিংড়িঘাটা সম্প্রসারণ প্রকল্প আগামী নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু হবে। রাজ্য সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করেই দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়েছে। ফলে আশা করা হচ্ছে, ২০২৬ সালের শেষের মধ্যেই অরেঞ্জ লাইন পৌঁছে যাবে বিমানবন্দরে।
নতুন যাত্রাপথে ৫৭ কিলোমিটার যুক্ত
মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই নতুন ৫৭ কিলোমিটার সম্প্রসারণের অনুমতি মিলেছে। এর মধ্যে ২৯ কিলোমিটার কাজ ২০২৬ সালের মধ্যে সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে, এবং প্রায় ১৯ কিলোমিটার অংশে যাত্রী পরিষেবা চালু করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।
২০২৯-এর মধ্যে সম্পূর্ণ হবে পার্পল লাইন
বর্তমানে পার্পল লাইনের পরিষেবা চলছে জোকা থেকে মাঝেরহাট পর্যন্ত। খিদিরপুরে ইতিমধ্যেই মাটির নিচে টানেল বোরিং মেশিন কাজ শুরু করেছে। মেট্রোর জেনারেল ম্যানেজার শুভ্রাংশু শেখর মিশ্রর বক্তব্য, ২০২৯ সালের মধ্যে জোকা-ধর্মতলা পর্যন্ত পুরো পার্পল লাইন চালু হবে। একই সময়ে মাইকেল নগর থেকেও বিমানবন্দর পর্যন্ত সংযোগ স্থাপন করা হবে।
কলকাতা মেট্রোর ইতিহাস ও গুরুত্ব
ব্রিটিশ আমলে মেট্রো রেলের পরিকল্পনা করা হলেও প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয় ১৯৭২ সালে কাজ শুরুর মাধ্যমে। প্রযুক্তিগত ও আর্থিক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও ১৯৮৪ সালের ২৪ অক্টোবর কলকাতা পায় দেশের প্রথম মেট্রো পরিষেবা। আজ মেট্রো শুধু শহরের কেন্দ্রে সীমাবদ্ধ নয়, ছড়িয়ে পড়েছে শহরতলি পর্যন্ত। ব্লু, গ্রিন, পার্পল, ইয়েলো ও অরেঞ্জ লাইন—সব মিলিয়ে কলকাতা মেট্রো এখন প্রতিদিন লক্ষাধিক যাত্রীর নির্ভরযোগ্য যাতায়াতের মাধ্যম।
জন্মদিনে মেট্রোয় উৎসবের আমেজ
এসপ্ল্যানেড ছাড়াও শহরের বিভিন্ন স্টেশনে পালিত হচ্ছে ৪১তম প্রতিষ্ঠা দিবস। মেট্রো কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে যাত্রীদের শুভেচ্ছা জানানো হয়, আয়োজন করা হয় স্মারক প্রদর্শনী ও পুরনো ছবির প্রদর্শনীরও। শহরের নতুন প্রজন্মকে কলকাতা মেট্রোর ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়াই ছিল এই উদ্যাপনের উদ্দেশ্য।