প্রতি বছর কালীপুজো ও দীপাবলি উদযাপনের আগেই কলকাতার আকাশ যেন দূষণের কুয়াশায় ঢেকে যায়। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। কালীপুজোর আগের দিন বুধবার সন্ধ্যায় কলকাতা ও হাওড়ার বিভিন্ন অংশে যেভাবে বাজি ফাটানো হয়েছে, তাতে শহরের বাতাসে দূষণের মাত্রা একধাক্কায় বেড়ে গিয়েছে। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সন্ধ্যার মধ্যে কলকাতার বেশ কয়েকটি স্থানে বায়ুর মান সূচক (AQI) ১০০ পেরিয়ে গেছে, যা বিশেষজ্ঞদের মতে জনস্বাস্থ্যের জন্য গুরুতর বিপদের ইঙ্গিত দেয়।
কোথায় কতটা দূষণ
বুধবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৯টার মধ্যে বেশ কয়েকটি স্থানে বাতাসের মান সূচক ছিল অস্বাভাবিক। মার্কিন দূতাবাস সংলগ্ন অঞ্চলে AQI ছিল সবচেয়ে বেশি, যেখানে সূচক পৌঁছে গিয়েছিল ১৪৯-এ। এই দূষণের মাত্রা রাতের দিকে কিছুটা কমে ১০৭-এ নামলেও, তা এখনও বিপদসীমার ওপরে। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, যাদবপুর, বালিগঞ্জ, রবীন্দ্র সরোবর এবং কুলিয়া অঞ্চলে সূচক ১০০ ছাড়িয়ে গিয়েছিল, যেখানে বালিগঞ্জ ও যাদবপুর অঞ্চলে সূচক ৯৪-৯৯-র মধ্যে রয়ে গেছে।
হাওড়া ও তার আশেপাশের দূষণ পরিস্থিতি
হাওড়ার পদ্মপুকুর ও বেলুড় মঠ সংলগ্ন অঞ্চলেও AQI ১০০-র উপরে, যা স্পষ্টভাবে জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ধরা হয়। বিশেষ করে বালি অঞ্চলে বাতাসের মান সূচক ১০০-১০৫ এবং পদ্মপুকুরে ১০০-১০২-এর মধ্যে ঘোরাফেরা করেছে। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ অনুযায়ী, বাতাসের মান সূচক ১০১-২০০ এর মধ্যে থাকলে তা বিশেষত সংবেদনশীল এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ নির্দেশ করে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতি বছর আলোর উৎসবের আগে থেকেই বাজি ফাটানোর কারণে দূষণের মাত্রা বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে, শহরের বয়স্ক ও শিশুদের শ্বাসকষ্ট এবং অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রজনিত সমস্যার ঝুঁকি বাড়ে। তারা শহরবাসীকে উৎসবের সময় বাজি ব্যবহারে সংযমী হতে এবং প্রাকৃতিক উপায়ে উদযাপনের আহ্বান জানাচ্ছেন।
উৎসবের দিনগুলিতে কী হতে পারে?
বাতাসের মান সূচক কালীপুজোর আগেই অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় পৌঁছে যাওয়ায় দীপাবলির দিনগুলি কেমন হবে, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে আশঙ্কা বাড়ছে। বাজির অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে বায়ুদূষণের মাত্রা আরও বেড়ে গেলে, শহরের আকাশে আরও ঘন বিষাক্ত ধোঁয়ার কুয়াশা দেখা যাবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বায়ুর এই অবস্থা শুধু পরিবেশের জন্যই নয়, বরং প্রতিটি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্যও হুমকিস্বরূপ। সঠিক নির্দেশিকা মেনে এবং সচেতনভাবে উৎসব উদযাপনের মাধ্যমে দূষণের মাত্রা কমানোর চেষ্টা করলে, সকলেরই স্বাস্থ্য সুরক্ষিত থাকবে বলে তারা পরামর্শ দিয়েছেন।