কলকাতার সাম্প্রতিক ধর্ষণ ও হত্যা মামলা নিয়ে গোটা রাজ্য তোলপাড়। এই ঘটনায় দোষীদের শাস্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে—ধর্ষকদের কি মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে, নাকি তারা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে? পশ্চিমবঙ্গ সরকার ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের বিধান চালু করতে চায় এবং এর জন্য একটি সংশোধিত বিল পেশ করার উদ্যোগ নিচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, রাজ্যপাল যদি এই বিল অনুমোদনে দেরি করেন, তাহলে তিনি রাজভবনের বাইরে ধর্নায় বসবেন।
মৃত্যুদণ্ড কী?
মৃত্যুদণ্ড হলো শাস্তির কঠোরতম রূপ, যেখানে দোষী ব্যক্তিকে মৃত্যুর দণ্ড দেওয়া হয়। এটি সাধারণত হত্যা, ধর্ষণ, রাষ্ট্রদ্রোহ এবং অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মতো গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে দেওয়া হয়। তবে মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতাও প্রচুর রয়েছে, বিশেষ করে মানবাধিকারের ভিত্তিতে। অনেকেই মনে করেন, এই শাস্তি অমানবিক এবং একে বাতিল করা উচিত। ভারতের আইন কমিশনও কিছু অপরাধের ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ড বাতিল করার সুপারিশ করেছিল, যদিও এখনও বেশ কিছু অপরাধের জন্য এই শাস্তি বহাল রয়েছে।
২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতে ৫৩৯ জন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দী ছিল। বর্তমানে, নাবালিকাদের ধর্ষণের ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে এবং অন্যান্য ধর্ষণের ক্ষেত্রে ২০ বছরের কারাদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড কী?
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড মানে হলো দোষী ব্যক্তিকে তার বাকি জীবন কারাগারে কাটাতে হবে। আইন অনুযায়ী, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের শাস্তি হলো অপরাধীর আজীবন কারাবাস। তবে বন্দীর ভালো আচরণের ওপর ভিত্তি করে ১৪ বছর কারাবাসের পর তার মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে আদালত পুরো জীবন কারাগারে কাটানোর নির্দেশও দিতে পারে, যেখানে মুক্তির কোনও সুযোগ থাকে না।
ফাঁসি কী?
ফাঁসি হলো মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার একটি পদ্ধতি। এটি মৃত্যুদণ্ডের অন্যতম প্রচলিত পদ্ধতি, যেখানে অপরাধীকে ফাঁসির দড়ি দিয়ে মৃত্যুর মুখোমুখি করা হয়। ভারতে ২০২০ সালের ২০ মার্চ শেষবারের মতো কাউকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল।
কলকাতার এই ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় দোষীদের শাস্তি নিয়ে বিতর্ক চলছে। যদি পশ্চিমবঙ্গ সরকার ধর্ষণের জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিল পেশ করে এবং সেটি অনুমোদিত হয়, তবে এই শাস্তি আরও কঠোর হবে। তবে মৃত্যুদণ্ড এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মধ্যে পার্থক্য বোঝা জরুরি। মৃত্যুদণ্ড চূড়ান্ত এবং অপরিবর্তনীয়, যেখানে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে বন্দীর মুক্তির সুযোগ থাকে, যদিও তা খুবই সীমিত। এই মামলাটি রাজ্যের জনগণের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এবং দোষীদের জন্য উপযুক্ত শাস্তির দাবি আরও জোরালো হয়ে উঠেছে।