scorecardresearch
 

Kolkata Tram: শহরের 'বোঝা'? ট্রাম তুলে দেওয়ারই সিদ্ধান্ত, হাইকোর্টের দিকে তাকিয়ে 'ক্ষুব্ধ' যাত্রী সংগঠন

কলকাতা থেকে শতাব্দীপ্রাচীন ট্রাম পরিষেবা তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার, সূত্রে এমনটাই জানা যাচ্ছে। জানা গেছে, আদালতের নির্দেশে রাজ্য সরকারের ট্রাম-নীতি জানতে চাওয়া হয়। নবান্ন সূত্রে খবর, প্রশাসনের শীর্ষস্তরের অনুমোদনক্রমে শহর থেকে ট্রাম তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং পরিবহণ দফতর লিখিতভাবে তা আদালতকে জানিয়ে দেবে।

Advertisement
কলকাতায় ট্রাফিকের গড় গতির চেয়ে ৩ গুণ জোরে ছুটতে পারে ট্রাম! তবুও কিসের বাধা? কলকাতায় ট্রাফিকের গড় গতির চেয়ে ৩ গুণ জোরে ছুটতে পারে ট্রাম! তবুও কিসের বাধা?
হাইলাইটস
  • সত্যজিৎ রায়ের 'মহানগর' থেকে সুজিত সরকারের 'পিকু', মণি রত্নমের 'যুবা', সুজয় ঘোষের 'কাহানি', তিগমাংশু ধুলিয়ার 'বুলেট রাজা', দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'ব্যোমকেশ বক্সি', টলিউড-বলিউড থেকে শুরু করে দেশের ছায়াছবিতে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে ব্যবহার হয়েছে কলকাতার
  • সেই কলকাতার ট্রাম চিরতরে তুলে দেওয়া হতে পারে।

সত্যজিৎ রায়ের 'মহানগর' থেকে সুজিত সরকারের 'পিকু', মণি রত্নমের 'যুবা', সুজয় ঘোষের 'কাহানি', তিগমাংশু ধুলিয়ার 'বুলেট রাজা', দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'ব্যোমকেশ বক্সি', টলিউড-বলিউড থেকে শুরু করে দেশের ছায়াছবিতে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে ব্যবহার হয়েছে কলকাতার ট্রাম। সেই কলকাতার ট্রাম চিরতরে তুলে দেওয়া হতে পারে। চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ট্রাম ১৫১ বছরে পা দিয়েছে।  নস্টালজিয়া সঙ্গী করে আর ক’দিনের মধ্যে শহর থেকে হারিয়ে যেতে পারে ট্রাম? প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। 

কলকাতা থেকে শতাব্দীপ্রাচীন ট্রাম পরিষেবা তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার, সূত্রে এমনটাই জানা যাচ্ছে। জানা গেছে, আদালতের নির্দেশে রাজ্য সরকারের ট্রাম-নীতি জানতে চাওয়া হয়। নবান্ন সূত্রে খবর, প্রশাসনের শীর্ষস্তরের অনুমোদনক্রমে শহর থেকে ট্রাম তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং পরিবহণ দফতর লিখিতভাবে তা আদালতকে জানিয়ে দেবে।

পরিবহণ দফতর সূত্রে খবর, শতাব্দীপ্রাচীন এই যান বর্তমানে গুরুত্ব হারিয়েছে। ট্রামলাইনের জন্য প্রায়শই দুর্ঘটনা ঘটছে। হচ্ছে তীব্র যানযটও। এই প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে আর আপস করা হবে না। সমস্ত ট্রাম রুট বন্ধ করে দেওয়া হবে। অচল রুটগুলির ট্রামলাইন তুলে ফেলা হবে। তবে সুদীর্ঘ ঐতিহ্যের কথা মাথায় রেখে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য ধর্মতলা থেকে ময়দান পর্যন্ত লুপ লাইনে ট্রামের জয় রাইডের ব্যবস্থা থাকবে।

আরও পড়ুন

উল্লেখ্য, ট্রামের ‘স্বর্ণযুগে’ কলকাতায় গমগম করে চলত ২৭-২৮টি রুট। দেড় দশক আগেও এক ডজন রুটে সচল ছিল ট্রাম। ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর মাঝেরহাট ব্রিজ ভেঙে পড়ার পর ট্রামের গুরুত্ব আরও কমে যায়। ওই ঘটনার পর সরকার শহরের ব্রিজগুলির স্বাস্থ্যপরীক্ষা শুরু করে। উড়ালপুলগুলির ওপরে থাকা সমস্ত ট্রামলাইন তুলে দেওয়ার সুপারিশ করে পূর্তদপ্তর। তারপর ট্রামের চলাচল আরও সীমাবদ্ধ করে দেওয়া হয়। এই মুহূর্তে মাত্র তিনটি রুটে যাত্রীরা ট্রাম পরিষেবা পান। টালিগঞ্জ-বালিগঞ্জ, গড়িয়াহাট-ধর্মতলা এবং ধর্মতলা-শ্যামবাজার। নবান্নের সিদ্ধান্তে কলকাতা হাইকোর্টের সিলমোহর পড়লে এই তিন রুট থেকেও ট্রাম বিদায় নেবে।

Advertisement

বিষয়টিতে  ক্যালকাটা ট্রাম ইউজারস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বড় আন্দোলনে নামতে প্রস্তুত। ক্যালকাটা ট্রাম ইউজারস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক মহাদের শীল বলেন, 'কলকাতার ঐতিহ্যবাহী ট্রাম শুধুমাত্র একটি যানবাহন নয়, এটি শহরের সংস্কৃতির একটি অংশ। এটি কলকাতার মানুষের স্মৃতি এবং আবেগের সঙ্গে জড়িত। এই সিদ্ধান্ত শহরের ঐতিহ্যকে ধ্বংস করবে। আমরা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামব।'

মহাদেববাবু আরও বলেন, 'তবে হাইকোর্টের এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। কারণ হাইকোর্ট একটা কমিটি গড়ে দিয়েছেন। সেই কমিটিতে আমিও রয়েছি। এটা বিশেষজ্ঞদের কমিটি। নবান্নের হলফনামার পর কোর্ট কী নির্দেশ দেয়, তার অপেক্ষায় রয়েছি আমরা'

অন্যদিকে, অনেকেই মনে করছেন, ট্রাম পরিষেবা বন্ধ হলে যানজট এবং দুর্ঘটনার হার কমবে। প্রশাসনের মতে, ট্রামলাইনের জন্য দুর্ঘটনার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ট্রাম চলাচলের জন্য যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। তবে, ট্রাম প্রেমীদের দাবি, শহরের যানজটের জন্য শুধুমাত্র ট্রাম দায়ী নয়। শহরের অন্যান্য যানবাহনের অব্যবস্থাপনাও যানজটের একটি প্রধান কারণ। 
কলকাতার মানুষ এবং ট্রাম প্রেমীদের মধ্যে এই সিদ্ধান্তের প্রভাব নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। এই মুহূর্তে শহরের একটি বড় অংশের মানুষের মন খারাপ এবং তারা শহরের ঐতিহ্যবাহী ট্রামকে বিদায় জানাতে মন থেকে প্রস্তুত নয়।

 

Advertisement