
দুর্গাপুজোর আগে এমন পরিস্থিতি কলকাতা দেখেনি। সোমবার রাত থেকে শুরু হওয়া প্রবল বর্ষণে কার্যত অচল হয়ে গিয়েছে শহর। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত টানা বৃষ্টি চলায় বিপর্যস্ত হয়েছে কলকাতার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। কলকাতা পুরসভার মেয়র পরিষদ (নিকাশি) তারক সিংহ জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতি অন্তত ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা স্থায়ী হতে পারে। অর্থাৎ, দ্রুত স্বস্তির আশা নেই শহরবাসীর।
টানা রাতভর বৃষ্টিতে কলকাতার একাধিক এলাকা হাঁটুজলের নীচে। রাস্তাঘাট, গলি, এমনকি বড় বড় চত্বরও প্লাবিত। দক্ষিণ ও উত্তর কলকাতার বিস্তীর্ণ অংশে জল ঢুকে পড়েছে ঘরে ঘরে। বহু বাড়ির একতলা ভেসে গিয়েছে, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হয়েছে একাধিক জায়গায়। রেললাইনে জল জমে ট্রেন চলাচলেও ব্যাপক ব্যাঘাত ঘটেছে।
এবারের বৃষ্টি সবচেয়ে বেশি ধাক্কা দিয়েছে পুজোর প্রস্তুতিতে। কোথাও মণ্ডপ ভেঙে পড়েছে, কোথাও ভেসে গিয়েছে সাজসজ্জার সামগ্রী। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মণ্ডপ তৈরির সরঞ্জাম এবং সামগ্রী জমে থাকায় অনেক নিকাশিনালা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তার ফলে জল জমার মাত্রা আরও বেড়েছে। অনেকে দাবি করছেন, সাম্প্রতিক সময়ে কলকাতায় এমন দুর্যোগ দেখা যায়নি। এর জেরে প্রশ্ন উঠেছে, শহরে মেঘভাঙা বৃষ্টি হয়েছে কি না।
আবহাওয়া দফতর আগেই প্রবল বৃষ্টির সতর্কতা দিয়েছিল। তবে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি যে তৈরি হবে, তা আঁচ করতে পারেননি কেউই। সোমবার রাতে বৃষ্টি শুরু হলেও মধ্যরাতের পর থেকে এর তীব্রতা বেড়ে যায়। ভোরের পর বৃষ্টির দাপট খানিকটা কমলেও তা পুরোপুরি থামেনি। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, মঙ্গলবার সারাদিন আকাশ মেঘলা থাকবে এবং হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি চলবে। তবে নতুন করে ভারী বর্ষণ হলে শহরের পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে।
পুর প্রশাসন ভোর থেকেই পাম্প চালিয়ে জল নামানোর চেষ্টা করছে। তবে বৃষ্টির পরিমাণ এত বেশি যে দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রশাসনের হিসাবে, দক্ষিণ কলকাতায় বৃষ্টির পরিমাণ উত্তর কলকাতার তুলনায় অনেক বেশি। ফলে দক্ষিণ শহরতলির পরিস্থিতি সবচেয়ে করুণ।
এর পাশাপাশি আবহাওয়া দফতর সতর্ক করেছে যে, সপ্তাহান্তে পুজোর শুরুতেই আরও একটি নিম্নচাপ তৈরি হতে পারে। এর ফলে আবারও প্রবল বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে জল না নামতেই নতুন করে বৃষ্টি নামলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিতে পারে।