mohua moitra লোকসভার ‘ঘুষ নিয়ে প্রশ্ন’ বিতর্কে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে লক্ষ্য করে তদন্ত আরও এক ধাপ এগোল। কৃষ্ণনগরের সাংসদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিলের জন্য সিবিআইকে অনুমতি দিল লোকপাল। নির্দেশ অনুযায়ী, আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে কেন্দ্রীয় সংস্থাকে সংশ্লিষ্ট আদালতে চার্জশিট জমা দিতে হবে। সেই নথির একটি প্রতিলিপি পৌঁছতে হবে লোকপাল দফতরেও।
গত ১২ নভেম্বর লোকপালের পূর্ণ বেঞ্চে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে শনিবার বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবেকে লিখিতভাবে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়। তাঁর অভিযোগের জেরেই মহুয়ার বিরুদ্ধে প্রথমে লোকপাল সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল বলে দাবি করেছিলেন নিশিকান্ত।
লোকপালের নির্দেশ পাওয়ার পর সিবিআই গত বছর থেকেই অভিযোগের খোঁজখবর শুরু করে। প্রায় ছ’মাস ধরে সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহের পর রিপোর্ট জমা পড়ে লোকপাল দফতরে। সেই রিপোর্টে সিবিআই স্পষ্ট জানায়, মহুয়ার বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করতে হলে চার্জশিট দাখিলের অনুমতি প্রয়োজন। সেই অনুরোধই এবার মঞ্জুর হয়েছে।
তবে এখনই আদালতে মামলার পরবর্তী ধাপ শুরু করার ছাড়পত্র মেলেনি। লোকপাল জানিয়েছে, চার্জশিট আদালতে জমা দেওয়ার পরই সিবিআইয়ের দ্বিতীয় আবেদন বিবেচনায় নেওয়া হবে। তার আগে নয়। আদালতকেই প্রথমে জানাতে হবে সিবিআই কোন কোন অভিযোগকে প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরছে।
মহুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল দুবাইয়ের শিল্পপতি দর্শন হীরানন্দানির কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে সংসদে প্রশ্ন তুলেছিলেন মহুয়া। তাতে সরাসরি নিশানা করা হয়েছিল শিল্পপতি গৌতম আদানিকে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে রাজনৈতিকভাবে অস্বস্তিতে ফেলাই ছিল মহুয়ার উদ্দেশ্য, এমনটাই নিশিকান্ত দুবের দাবি। এই অভিযোগ জানিয়ে লোকসভা স্পিকারের কাছেও তিনি মহুয়ার সাংসদ পদ খারিজের আবেদন করেছিলেন। পাশাপাশি মহুয়ার প্রাক্তন বন্ধু জয় অনন্ত দেহাদ্রাইও প্রকাশ্যে অভিযোগে সুর মেলান।
তদন্তে নেমে সিবিআই মোট ২৬ জন সাক্ষীর বক্তব্য সংগ্রহ করে। প্রমাণ হিসাবে নেয় ৩৮টি নথি। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী, মহুয়া মোট ৬১টি প্রশ্ন সংসদে তুলেছিলেন যা ঘুষের বিনিময়ে করা হয়েছিল বলে দাবি সিবিআইয়ের। এর মধ্যে তিনটি প্রশ্ন ব্যক্তিগতভাবে, মতামত প্রকাশ করে পেশ করেছিলেন। বাকি প্রশ্নগুলি অনলাইনে লগ ইন করে আপলোড করা হয়।
হীরানন্দানি নিজেই হলফনামা দিয়ে জানান, মহুয়ার সংসদীয় লগ ইন আইডি তাঁর জানা ছিল এবং সেই আইডি ব্যবহার করে তিনি প্রশ্ন পোস্ট করতেন। যদিও ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।
এথিক্স কমিটির সুপারিশে গত ৮ ডিসেম্বর লোকসভায় মহুয়ার সাংসদ পদ বাতিল হয়ে যায়। পরে সুপ্রিম কোর্টে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করেন তৃণমূল নেত্রী। তবে সেই আইনি লড়াইয়ের মাঝে তিনি আবারও কৃষ্ণনগর কেন্দ্র থেকে জিতে সাংসদ হয়ে ফিরেছেন। লোকপালের সর্বশেষ নির্দেশে এখন নজর আদালতের দিকে। আদালতে চার্জশিট জমা পড়লেই মামলার পরবর্তী ধাপ শুরু হবে।