নতুন মেয়র পেয়ে গেলে কলকাতা। ফের একবার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। বৃহস্পতিবার তৃণমূলের (TMC) দলীয় বৈঠকে ফিরহাদ হাকিমের (Firhad Hakim) নাম প্রস্তাব করা হয়। একইসঙ্গে ডেপুটি মেয়র, পুরসভার চেয়ারম্যান এবং মেয়র ইন কাউন্সিলদের নামও প্রস্তাব করা হয়। এদিন নাম প্রস্তাবের আগে জয়ী প্রার্থীদের বার্তা দেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একনজরে দেখে নেওয়া যাক এদিন ঠিক কী কী বললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)।
কাউন্সিলরদের অভিনন্দন
এদিন দলের জয়ী ১৩৪ জন জয়ী প্রার্থীকে অভিনন্দন জানান তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একইসঙ্গে বিরোধী দলের জীয় প্রার্থীদেরও স্বাগত জানান তিনি। মমতা বলেন, "এই জয় তৃণমূলের জয় নয়, তৃণমূলের সম্পর্ক মাটির সঙ্গে। অনেক কুৎসা অপপ্রচারের পরেও মানুষ ভরসা রেখেছেন। আজ তাঁদের জন্য জিততে পেরেছি। এই জয় মা মাটি মানুষকে নিবেদিত ও সমর্পিত।"
'সুব্রত দা'কে মিস করছি'
মমতা বলেন, "১০ বছর ধরে আপনারা কাজ করেছেন। আগামিদিনে আরও ভাল করে করতে হবে। সুব্রত দা'কে মিস করছি।" স্মৃতি রোমন্থন করে মমতা আরও বলেন, "আমার মনে আছে ৭২ ঘণ্টা নিজাম প্যালেসে রাখতে হয়েছিল কাউন্সিলরদের। মেজরিটি কম ছিল। বোর্ডকে রক্ষা করার জন্য আমি ও সুব্রত দা কাজ করেছিলাম। তাঁর মৃত্যু আমাদের কাছে গ্রেট লস।"
অহঙ্কারের জায়গা নেই
তৃণমূল নেত্রী বলেন, "এত শান্তিপূর্ণ নির্বাচন ভারতবর্ষে কেউ করে দেখাতে পারেনি। নির্বাচনটা গণতন্ত্রের উৎসব। এই উৎসবে মানষের ওপর ভরসা রাখতে হবে। যত জিতব তত বেশি নম্র হতে হবে। অহঙ্কারের কোনও জায়গা তৃণমূল কংগ্রেস নেই। মাটিই আমাদের সব।"
নির্দলদের বার্তা
মমতা আরও বলেন, "আমি খুশি এই নির্বাচনে ৪২ শতাংশের বেশি মহিলা প্রার্থী দেওয়া হয়েছিল। একজন ছাড়া সবাই জিতেছেন। ওই একজন যে নির্দল প্রার্থীর কাছে হেরেছেন তাঁর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আগে ছিল, তাঁরাও যোগাযোগ করছেন। কিন্তু আমি চাই না যাঁরা নির্দল হয়ে জিতেছেন তাঁরা দলে আসুন। কারণ আমি ও আমার কর্মীরা যদি হেরেও যাই তাঁর সঙ্গেই জীবন যাপন করতে হবে। কেউ যদি মনে করেন দলকে সাবোটেজ করে জিতে গিয়ে ফের ঢোকা যাবে তবে অপেক্ষা করতে হবে। যে ১০ জন হেরেছেন তাঁদেরও পুরসভার বিভিন্ন কাজে লাগাতে হবে। পুরসভায় অনেক সুযোগ আছে কাজ করার। আর যাঁরা ভাল লড়াই করেছেন তাঁদেরও অভিনন্দন।"
'নতুনদের কাজ শিখতে হবে'
তৃণমূল নেত্রী বলেন, "এবছর অনেক নতুন মুখ এসেছেন। প্রায় ৪০ জন নতুন জিতেছেন, তাঁদের ভাল করে সুন্দরভাবে কাজ শিখতে হবে। আপনি ভাল কাজ করলে মানুষ প্রশংসা করবে, সেটা আপনার গর্ব। আর খারাপ কাজ করলে সেই বার্তা পৌঁছে যাবে। আপনাদের অনেক আশা করে টিকিট দেওয়া হয়েছে।"
এলাকা পরিস্কারের নির্দেশ
জয়ী প্রার্থীদের মমতার নির্দেশ, "যদিও আপনারা সরকারি ভাবে শপথ নেননি, তবুও আজ থেকেই এলাকা ক্লিন করতে শুরু করুন। সমস্ত হোর্ডিং-পোস্টার খুলে যত্ন করে রাখুন। এলাক যাতে পরিস্কার থাকে।"
১ জানুয়ারি থেকে দুয়ারে সরকার
এদিন মুখ্যমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দেন,"সব কাজ অনলাইনে করা হচ্ছে, যাতে মানুষকে পরিষেবার জন্য ঘুরতে না হয়। একইসঙ্গে পাড়ায় পাড়ায় সমাধান ও দুয়ারে সরকার আবার ১ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে বলেও জানিয়ে দেন তিনি।"
'জনগণের পয়সার হিসেব রাখতে হয়'
জয়ী প্রার্থীদের মমতা বলেন, "ক্রেডিট দেখাতে গিয়ে পার্টিকে ছোট করে, সরকারকে ছোট করে নিজে বড় হয়ে গেলাম এটা লক্ষ্য নয়। মনে রাখতে হবে, সরকারেও টাকার সীমাবদ্ধতা আছে। এটা জনগণের পয়সা। জনগণের টাকার ১ পয়সারও হিসেব রাখতে হয়।"
সংখ্যালঘু বস্তি উন্নয়নের নির্দেশ
এদিন সংখ্যালঘু বস্তিগুলির উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, "সংখ্যালঘু বস্তিগুলিকে উন্নয়ন করতে হবে। তার জন্য সংখ্যালঘু কাউন্সিলররা যাঁরা আছেন তাঁরা আলোচনা করে দেখুন কীভাবে করা হয়। চটপট করতে হবে, ফেলে রাখলে হবে না। ৬ মাস পরে রিপোর্ট কার্ড নেব। প্রতি ৬ মাস পরে রিভিউ হবে। যে কাজ করতে পারবে না তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বেশি সময় লাগবে না। কথা কম কাজ বেশি। নিজের ইমেজ তৈরি করতে গিয়ে এমন কিছু বলবেন না যাতে আখেরে দলের ক্ষতি হয়।"
দুর্গাপুজোয় ১০ দিন আগে থেকে ফেস্টিভ্যাল
ইউনেস্কো দুর্গাপুজোকে হেরিটেজ তকমা দেওয়ার প্রেক্ষিতে মমতা বলেন, "কলকাতাকে বেস্ট হতে হবে। আমি চাই সারা পৃথিবীতে কলকাতা বেস্ট হোক। যেদিন সেটা হবে সেদিন কাজ ফুরোবে। দুর্গোপজোয় দেখেছেন, আমার ইউনেস্কোর হেরিটেজ আদায় করে নিয়েছি। এটাকে ডেডিকেট করে আগামী বছর ১০ দিন আগে থেকে ফেস্টিভ্যাল শুরু করব।"