একটা বৈঠকেই কি গলল বরফ? ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের সঙ্গেই থাকছে 'পরামর্শদাতা সংস্থা' আইপ্যাক। বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে দলের বুথস্তরের কর্মীদের সঙ্গে বৈঠকে তা স্পষ্ট করে দিলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এও বলে দিলেন,'প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে এই আইপ্যাকের কোনও যোগ নেই'।
কয়েক মাস আগেও আইপ্যাক নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব ছিল না মমতার। দলীয় বিধায়কদের সঙ্গে আলোচনায় তাঁর 'প্যাক-ফ্যাক' মন্তব্যে জল্পনা তৈরি হয়েছিল, ওই সংস্থাকে সম্পর্ক ছিন্ন করতে চাইছে তৃণমূল! নেত্রীর আরও কয়েকটি সিদ্ধান্তে সেই জল্পনা জোরালো হয়। তবে চলতি মাসেই নবান্নে মমতার সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন আইপ্যাকের অন্যতম কর্ণধার প্রতীক জৈন। তার পর এ দিন মমতা বলেন,'পিকের আইপ্যাক এটা নয়। ওরা অন্য জায়গায় কাজ করে। এরা একটা নতুন দল। এদের সহযোগিতা করুন'। সেই সঙ্গে দলের নেতানেত্রীদের আইপ্যাক সম্পর্কে 'অনাঙ্ক্ষিত মন্তব্য' না করার নিদান দিয়েছেন মমতা। তাঁর বার্তা,'উল্টোপাল্টা বলা বন্ধ করুন। কাজটা একসঙ্গে করতে হবে'।
২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে বাংলায় বিজেপি পেয়েছিল ১৮টি আসন। তারপরই তৃণমূলে আগমন আইপ্যাকের। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের যুগলবন্দি শুরু হয় ঘাসফুল শিবিরে। ২০২১ সালে তৃণমূল বিরাট জয়লাভ করে। তারপর আইপ্যাক থেকে নিজেকে আলাদা করেন পিকে। এখন বিহারে রাজনৈতিক দল গড়ে ফেলেছেন। তবে তৃণমূলের সঙ্গে 'পরামর্শদাতা সংস্থা' আইপ্যাকের যোগ বিচ্ছিন্ন হয়নি। অতিসম্প্রতি তৃণমূলে আইপ্যাকের ভূমিকা অনেকখানিই খর্ব হয়েছে বলে খবর। বিধায়কদের উদ্দেশে নেত্রী মন্তব্য করেছিলেন,'কে কোথায় কী প্যাক-ফ্যাক করল, তা নিয়ে ভাবার দরকার নেই'। তারপরই শুরু হয় জল্পনা।
শোনা গিয়েছিল, আইপ্যাকের কাজকর্মে তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা একাধিকবার মমতার কাছে আপত্তি জানিয়েছেন। টাকা তোলা-সহ সাংগঠনিক কাজে অযাচিত হস্তক্ষেপের মতো অভিযোগ উঠেছে ওই পরামর্শ সংস্থার বিরুদ্ধে। কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র তো অভিযোগ করেছেন, টাকার বিনিময়ে মন্ত্রিত্ব পাইয়ে দেওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছে আইপ্যাক। মমতার 'প্যাক-ফ্যাক' মন্তব্য ছিল সে সব অভিযোগেরই প্রতিফলন, মত রাজনৈতিক মহলের। তাহলে কীভাবে আইপ্যাকের সঙ্গে বরফ গলল?
চলতি মাসেই নবান্নে গিয়ে মমতার সঙ্গে দেখা করেছেন আইপ্যাকের অন্যতম কর্ণধার প্রতীক জৈন। সংবাদ মাধ্যম সূত্রের খবর, ২০২৬ সালের ভোটের রণনীতি নিয়েই আলোচনা হয়েছে দু'জনের। সেই আলোচনা যে ফলপ্রসূ হয়েছে, তা স্পষ্ট হল বৃহস্পতিবার। মমতার বার্তা,'কাজটা একসঙ্গে করতে হবে'।