প্রায় ছাব্বিশ হাজার চাকরিহারাদের পুনরায় পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। তার জন্য মে মাসের মধ্যেই বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার কথা বলেছিল আদালত। এই নিয়েই মঙ্গলবার নবান্ন থেকে গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা যারাই সরকার চালাই, আমাদের প্রত্যেককে আইন মেনে চলতে হয়। সংবিধান মেনে চলতে হয়। আইনের বাইরে গিয়ে আমরা যদি নিজেদের মতো করি, সেটা অন্যভাবে কোর্ট নিতে পারে। আমরা ইতিমধ্যে রিভিউ পিটিশন করেছি। সুপ্রিম কোর্টে গরমের ছুটি চলছে। আমরা সঠিক সময়ে রিভিউ পিটিশন করেছি। আগের অর্ডার যদি আমরা বহন না করি তাহলে যদি ওরা বলে তোমরা অর্ডার মানোনি, সব বাতিল। এটা আমরা চাই না। আমরা সুপ্রিম নির্দেশ অনুযায়ী চলব।
এরপরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, সুপ্রিম অর্ডার অনুযায়ী, ৩১শে মে-র মধ্যে নোটিফিকেশন বের করব। আর রিভিউ পিটিশনে যদি ভাল অর্ডার পাই, তাহলে সেই অনুযায়ী যাব। আমরা চাই চাকরিহারারা চাকরি ফিরে পাক। রাজ্য সরকারকে সকলের স্বার্থ দেখতে হয়। আমরা হাতে টাইম নিয়ে করেছি। নতুন পরীক্ষার জন্য ৩১ মে-র মধ্যে নোটিফিকেশন বের করতে বলা হয়েছে। তবে আমরা অপেক্ষা করছিলাম রিভিউ পিটিশনের শুনানির। যেহেতু রিভিউ হয়নি। রিভিউ পিটিশনের শুনানি হলে সেই অনুযায়ী যাব।
মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করে বলেন, ‘আমি প্রথমেই শিক্ষকদের বলব, আমরা এটা করতে বাধ্য হচ্ছি। আমরা চাই সকলে চাকরি ফিরে পাক। যে হেতু কোর্টের অর্ডার আছে ৩১ মে-র মধ্যে করতে হবে। ভেবেছিলাম, রাজ্যের তরফে করা রিভিউয়ে অন্য কিছু হতেও পারে। কিন্তু এখনও রিভিউ পিটিশন পেন্ডিং। কোর্টে গরমের ছুটি চলছে। এ দিকে ৩১ মে-র মধ্যে নোটিফিকেশন করতেই হবে। ৩০ মে বিজ্ঞাপন দেবো। তবে বার বার বলব রিভিউ অপশন হাতে আছে।’
অর্থাৎ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন স্পষ্ট করে দেন, শীর্ষ আদালতেরনির্দেশ মেনে ৩০ মে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে চলেছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ৩০ মে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর ১৬ জুন থেকে অনলাইনে আবেদন জমা নেওয়া হবে। ১৪ জুলাই পর্যন্ত আবেদন জমা নেওয়া হবে। ১৫ নভেম্বরের মধ্যে পরীক্ষা গ্রহণ ও ফল প্রকাশের প্রক্রিয়া শেষ হবে। এবং ২০ নভেম্বর থেকে কাউন্সেলিংয়ের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। রিভিউয়ে বিচার না পেলে লিখিত পরীক্ষা, স্ক্রুটিনি, চ্যালেঞ্জ, রেজাল্ট পাবলিকেশন, ইন্টারভিউ এই সময়সীমার মধ্যেই শেষ করা হবে বলে জানান মমতা।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মোতাবেক ২৪,২০৩ পদ শূন্য। ওই পদের জন্য নিয়োগ হবে। সেইসঙ্গে অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি করা হয়েছে। ১১,৫১৭ অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি হয়েছে নবম-দশমের জন্য। একাদশ-দ্বাদশের জন্য ৬,৯১২ অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি করা হচ্ছে। গ্রুপ-সির জন্য অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি হচ্ছে ৫৭১টি । গ্রুপ ডি’র জন্য অতিরিক্ত হাজার পদ করা হচ্ছে। মোট শূন্যপদ ৪৪ হাজার ২০৩।'
সেইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন যাঁরা চাকরি করেছেন, বয়স পেরিয়ে গিয়েছে, এ রকম অনেকে রয়েছেন। চাকরিহারাদের ক্ষেত্রে বয়সে ছাড় দেওয়া হব। বয়সের জন্য আটকাবে না। চাকরিহারারা বয়স পেরিয়ে গেলেও পরীক্ষায় বসতে পারবেন। যাঁরা কাজ করছেন অভিজ্ঞতার জন্য সুবিধা দেব।
মমতা জানান, যাঁদের টাকা ফেরত দিতে বলা হয়েছে, বলা হয়েছে চাকরির পরীক্ষায় বসতে পারবেন না, তাঁরা অন্য বিভাগে যোগ দিতে পারেন। কোর্ট বলেছে। শিক্ষা বিভাগে লোক প্রয়োজন। ঘর পরিষ্কার, ঘণ্টা বাজানোর লোক নেই। অতিরিক্ত গ্রুপ সি, ডি নিচ্ছি। ওরা শিক্ষা বিভাগে আবেদন করতে পারেন। তবে আলাদা ভাবে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে। সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন পোস্ট তৈরি করে নিয়োগ করা যাবে তাঁদের। গ্রুপ-সি , গ্রুপ ডির আলাদ ভাবে নিয়োগ করব।