আলিপুরদুয়ারের জনসভা থেকে ২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের ডঙ্কা বাজিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং শাসকদল তৃণমূলকে তীব্র আক্রমণ করে দুর্নীতি নিয়ে সরব হয়েছিলেন। প্রশ্ন তুলেছিলেন উন্নয়ন নিয়ও। এবার তাঁকে জবাব দিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। এক্স হ্যান্ডল পোস্টে বিস্তারিত উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রধানমন্ত্রীর উত্তরবঙ্গ সফরের পরদিনই আলিপুরদুয়ার জেলার জন্য রাজ্য সরকার কী কী উন্নয়ন করেছে, সেই খতিয়ান তুলে ধরলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে প্রচার করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
'আলিপুরদুয়ার জেলার মানুষের জন্য আমাদের সরকারের উল্লেখযোগ্য উন্নয়নমূলক কাজগুলিকে খাটো করে দেখানোর চেষ্টা হয়েছে। তাই আমি আলিপুরদুয়ারের জনগণের জন্য আমাদের প্রকৃত উদ্যোগ সম্পর্কে কিছু তথ্য দিতে চাই।' শুরুটা এভাবেই করেন মুখ্যমন্ত্রী। এরপর তিনি লেখেন, 'মানুষের আরও কাছাকাছি প্রশাসনকে আনতে ২০১৪ সালের জুন মাসে আলিপুরদুয়ার জেলাকে বাংলার ২০তম জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছি আমরা। তারপর জেলার বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নয়নমূলক অগ্রগতি হয়েছে। আলিপুরদুয়ারের প্রত্যেক বাসিন্দা অন্তত একটি করে রাজ্য সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছেন। আমরা সর্বদা বাংলার মানুষের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করি, তাই তাঁরা আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। আমরা ধর্ম, বর্ণ বা অন্য কোনও সঙ্কীর্ণতার ভিত্তিতে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ করি না। আমরা সর্বদা জনগণের জন্য কাজ করি। সর্বদা তাদের পাশে দাঁড়িয়ে থাকি।'
স্বাস্থ্য থেকে শুরু কররে শিক্ষা, গত কয়েক বছরে তাঁর সরকার কী কী করেছে, সে বর্ণনায় দীর্ঘ এক্স পোস্টে লেখেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা জানান, শুধু আলিপুরদুয়ারে লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের সুবিধা পান ৩ লক্ষ ৫৭ হাজার মহিলা। খাদ্যসাথী পান ১২ লক্ষ ৯১ হাজার উপভোক্তা, সবুজ সাথীর সাইকেল পেয়েছে ২ লক্ষ ৫৪ হাজার ছাত্রছাত্রী। রূপশ্রী পেয়েছেন ৪৬ হাজার মহিলা। আলিপুরদুয়ারে স্বাস্থ্য সাথীর সুবিধা পান ৪ লক্ষেরও বেশি মানুষ। শিক্ষাশ্রী পেয়েছে ৩ লক্ষ ১০ হাজার, ঐক্যশ্রী পেয়েছেন ২ লক্ষ ৫ হাজার, তরুণের স্বপ্ন প্রকল্পের আওতায় ট্যাবপ্রদান করা হয়েছে ৬৩ হাজার জনকে, জয় জোহর পেনশন যোজনা পেয়েছেন ১৫ হাজার ৩৯৬ জন, তপশিলি বন্ধু পেয়েছেন ২৯ হাজার ৪৮৬ জন, কৃষক বন্ধু পেয়েছেন ৯৫ হাজার, বাংলা শস্য বিমা পেয়েছেন ১ লক্ষ ১৮ হাজার জন, বিনামূল্যে সামাজিক সুরক্ষা পেয়েছেন ২ লক্ষ ৭৫ হাজার জন। আলিপুরদুয়ারে ৩৭,০০০-এর বেশি পাট্টা বিতরণ করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ১৭,০৭২টি জমির পাট্টা, ১২,৬১৪টি শরণার্থী পাট্টা, ৬,৩৯৭টি বনের পাট্টা এবং ১,১২৭টি চা সুন্দরী পাট্টা। তিনি আরও জানান, ২ লক্ষ ৮৪ হাজার মানুষের জন্য ১ কোটি ২৮ লক্ষ কর্মদিবস তৈরি করেছে তাঁর সরকার। সে জন্য ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা।
এখানেই শেষ নয়, শিল্পক্ষেত্র, যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নতি, চা-বাগান এবং শ্রমিকদের জীবনের মানোন্নয়ন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। শিল্প এবং পর্যটন ক্ষেত্র, জনজাতির উন্নয়ন, রাজবংশী এবং কামতাপুরী উন্নয়ন নিয়েও তথ্য দেন মমতা। তিনি লেখেন, ‘আলিপুরদুয়ারের সামগ্রিক উন্নয়নের প্রতি আমাদের অঙ্গীকারকে তুলে ধরা অনেক উদ্যোগের মধ্যে এগুলি কয়েকটি।’
মুখ্যমন্ত্রীর মতে, ক্ষমতা লাভের উদ্দেশ্যে আলিপুরদুয়ার থেকে প্রধানমন্ত্রী ‘স্বার্থপর এবং রাজনৈতিক ভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একটি জঘন্য এবং মিথ্যা প্রচার চালিয়েছেন।' আলিপুরদুয়ার জেলার বাসিন্দাদের কাছে বাংলার সরকারের উন্নয়নমূলক কাজগুলিকে তিনি খাটো করে দেখানোর চেষ্টা করেছেন বলে দাবি মমতার।