গুপ্তযুগের স্বর্ণমুদ্রা। দেড় থেকে তিনহাজার বছরের পুরনো সেই সব মুদ্রার কোনওটায় বাঘ বা গন্ডার শিকার করছেন প্রথম কুমারগুপ্ত, কোথাও বীণা বাজাচ্ছেন সমুদ্রগুপ্ত। কোনও মুদ্রায় খোদাই চক্রধারী বিষ্ণু। সেসবই দেখা যাবে শহরে। উজ্জয়ীনির শকেদের প্রবর্তিত রুপোর মুদ্রার নাম ছিল রূপক। ৩২-৩৬ শস্যদানার ওজনে ওই মুদ্রা। যদিও ফা হিয়েনের মতে, গুপ্তযুগে মূলত কড়ির মাধ্যমেই বেচা-কেনা হত।
গত ২৪ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে একক ভাবে মুদ্রা প্রদর্শনী করছে কলকাতা মুদ্রা পর্ষদ। এবার প্রতিষ্ঠানটির ২৫ বছর। এ বারও মুদ্রা প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে তারা। বালিগঞ্জের একটি ব্যাঙ্কোয়েট হলে শুরু হচ্ছে ২২ ডিসেম্বর। চলবে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রবেশ অবাধ। এবারের থিম "মহাবীরের নির্বাণের ২৫৫০ বছর" প্রদর্শনীতে রয়েছে পাঁচশো জনেরও বেশি প্রাচীন মুদ্রার সংগ্রাহকের দুষ্প্রাপ্র্য মুদ্রা।
ইতিহাসবিদদের লেখা অনুযায়ী, রাজকার্য চালানোর ক্ষেত্রে নতুন নতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে ভালবাসতেন মহম্মদ বিন তুঘলক। মুদ্রা নিয়েও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছিলেন। তাঁর রাজত্বে রুপোর মুদ্রার সঙ্গে চালু হয়েছিল তামার মুদ্রাও। মহম্মদ বিন তুঘলকের সেই তামার মুদ্রা থাকবে প্রদর্শনীতে। বালিগঞ্জ পার্কে আইস স্কেটিং রিঙ্ক-এর কাছে একটি ব্যাঙ্কোয়েট হলে হবে ওই মুদ্রা উৎসব। সেখানে দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে বিরল সব মুদ্রার সংগ্রহ নিয়ে আসবেন সংগ্রাহকেরা।
কলকাতা মুদ্রা পর্ষদের সেক্রেটারি তথা মুদ্রা সংগ্রাহক রবিশঙ্কর শর্মা বলেন, 'এবারের প্রদর্শনীতে আরও পুরোনো মুদ্রা থাকছে। মোঘল আমল থেকে শুরু করে গুপ্তযুগে মুদ্রা সবই থাকবে। মুদ্রাগুলি খুবই দুষ্প্রাপ্র্য। মিউজিয়ামেও নেই, এরকম কিছু মুদ্রাও চাক্ষুস করতে পারবেন সমজদার ও ইতিহাসবিদরা।'
রবিশঙ্কর জানিয়েছেন, মুদ্রা সংগ্রাহকদের কাছে রয়েছে, খ্রিস্টের জন্মের ৬০০ বছরেরও আগের বিভিন্ন ভারতীয় মুদ্রা। থাকবে মুঘল আমলের মুদ্রার সংগ্রহ। মুঘল রাজাদের মধ্যে জাহাঙ্গির চালু করেছিলেন তাঁর স্ত্রী নুরজাহানের ছবি দেওয়া মুদ্রা। মুঘল মুদ্রার পাশাপাশি থাকবে গুপ্ত যুগের স্বর্ণমুদ্রা। যার বেশিরভাগই সোনার।
প্রাচীন ভারতের স্বর্ণমুদ্রা নিয়ে প্রদর্শনীতে আসবেন দীপঙ্কর কুমার। তিনি বললেন, 'মোট ২০টি স্বর্ণমুদ্রা নিয়ে আসব আমি। বেশিরভাগই কুষাণ যুগ ও গুপ্তযুগের। যেগুলির মধ্যে অনেক মুদ্রাই ৩ হাজার বছর পুরোনো।'