কসবা কাণ্ডে তদন্ত ঘিরে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্য অর্চনা মজুমদার। ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে তিনি সরাসরি অভিযোগ করেন, পুলিশ প্রশাসন তাঁর তদন্তে সহায়তা করেনি, এবং ভিকটিম ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে দেখা করতেও বাধা দেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার কসবায় কলেজ ছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর থেকেই তোলপাড় রাজ্য। গত ২৫ তারিখের এই ঘটনায় রবিবার কসবা থানা ও কসবার সেই আইন কলেজ পরিদর্শনে যায় জাতীয় মহিলা কমিশনের (NCW) টিম। কমিশনের সদস্য অর্চনা মজুমদার-সহ তিন সদস্য সেখানে যান। যদিও প্লেস অফ অকারেন্সে অর্চনা মজুমদারকে প্রথমে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
#WATCH | Kolkata | NCW member Archana Majumdar reached the South Calcutta Law College, where three men allegedly gangraped a student on the college premises pic.twitter.com/n1uAy5CQKm
— ANI (@ANI) June 29, 2025
মহিলা কমিশনের সদস্য অর্চনা মজুমদার ও তাঁর দুই সঙ্গীকে এদিন প্রথমে পুলিশের তরফে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। ঘটনার অকুস্থলের কোনও ছবি তোলা যাবে না বলেও জানানো হয়। তবে অনেক বাদানুবাদের পর পুলিশের তরফে জাতীয় মহিলা কমিশনকে ভিতরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে দেওয়া হয় একাধিক শর্ত, খানিক দূর থেকে দেখতে হবে ঘটনাস্থল। সিল করা গার্ড রুমের ভিতর যাওয়া যাবে না। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অর্চনা মজুমদার বলেন, 'সকাল থেকে চেষ্টা করছি, কিন্তু কোথাও প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। চারপাশে ব্যারিকেড করে রাখা হয়েছে। উপরের তলা থেকে নিচ পর্যন্ত সমস্ত ঘরে তালা ঝুলছে। গতকাল রাত ১২টা পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় পুলিশি তৎপরতা চলেছে, অথচ আজ ডেপুটি কমিশনার জানাচ্ছেন—ভিকটিম কোথায় আছেন, পুলিশ জানে না।'
অর্চনা মজুমদার আরও দাবি করেন, ভিকটিমকে 'লুকিয়ে রাখা হয়েছে', যাতে তিনি বা সংবাদমাধ্যমের কেউই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারেন। জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্যের বক্তব্য, 'ভিকটিমের বাবার সঙ্গে কাল অন্তত পাঁচবার কথা হয়েছে। পরিবার আতঙ্কে রয়েছে। যারা মেডিকেল করিয়েছে, তারাও এখন জানে না ভিকটিম কোথায়! ভিকটিমের বাড়িতে তালা মেরে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা পরিকল্পিত পদক্ষেপ।'
#WATCH | Kolkata | NCW member Archana Majumdar reached the South Calcutta Law College, where three men allegedly gangraped a student on the college premises pic.twitter.com/n1uAy5CQKm
— ANI (@ANI) June 29, 2025
প্রসঙ্গত, দক্ষিণ কলকাতার ল কলেজে এক পড়ুয়াকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। ইউনিয়ন রুমের ভিতরে তৃণমূলের দাপুটে নেতা যৌন নিগ্রহ করেছেন বলে অভিযোগ করেন নির্যাতিতা। এই ঘটনার পরই গ্রেফতার হয়েছেন একাধিক। পুলিশের পাশাপাশি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ঘটনার তদন্ত করছে জাতীয় মহিলা কমিশনও। সেই মতোই রবিবার দক্ষিণ কলকাতার ল কলেজে যান অর্চনা ও মহিলা কমিশনের অন্যান্য সদস্যরা। যেখানে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল অর্থাৎ অকুস্থলে প্রবেশ করতে চান তাঁরা। ঘটনাস্থল স্বচক্ষে দেখার পাশাপাশি ছবি-ভিডিয়ো করতে চায় জাতীয় মহিলা কমিশন। কিন্তু তখনই পুলিশের তরফে আপত্তি জানানো হয়। কারণ, ঘটনার অকুস্থল যেহেতু ঘিরে রাখা হয়েছে, সেইখানে প্রবেশাধিকার নেই। সেই কারণেই তৈরি হয় বাদানুবাদ। এ দিকে, বিষয়টি নিয়ে পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেন অর্চনা মজুমদার। কেন তাঁদের ঘটনাস্থল ঘুরে দেখা উচিত, সেই বিষয়টি পুলিশকে জানান তাঁরা। অর্চনা মজুমদারকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনারা গুগল করুন। দেখবেন জাতীয় মহিলা কমিশন কোথায়-কোথায় যেতে পারেন।’ বস্তুত, এ দিন অর্চনা মজুমদার কসবা থানায় গিয়েছিলেন। OC-র সঙ্গে কথা বলেন তিনি। খুব অল্প সময় ছিলেন সেখানে। এই ঘটনায় রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্য অর্চনা মজুমদার।
এদিকে কসবার কলেজে গণধর্ষণের ঘটনায় বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করেছে কলকাতা পুলিশ। পাঁচ সদস্যের ওই তদন্তকারী দলের নেতৃত্বে রয়েছেন কলকাতা পুলিশের অ্যাসিস্ট্যান্ট পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ শহরতলি) প্রদীপকুমার ঘোষাল। এবার ল কলেজ গণধর্ষণ মামলার তদন্তের জন্য কলকাতা পুলিশের বিশেষ তদন্ত দলে সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করা হল । পুলিশ সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, মামলার গুরুত্ব বিবেচনা করে এবং সিটে আরও ৪ জন সদস্য যুক্ত করা হয়েছে। জানা যাচ্ছে, অভিযুক্তদের পোশাক, মোবাইল, সিসিটিভি ফুটেজ বাজেয়াপ্ত করেছে সিট, ল্যাবরেটরিতে পাঠানো পোশাক, ফরেনসিক রিপোর্টের অপেক্ষায় রয়েছেন তদন্তকারীরা।