গত বৃহস্পতিবার পটনার একটি হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে আইসিইউতে ভর্তি থাকা এক রোগীকে গুলি করে খুন করে একদল দুষ্কৃতী। মৃত ব্যক্তি নিজেও ছিলেন গ্যাংস্টার। সেই ঘটনায় কলকাতার গেস্ট হাউস থেকে ৫ জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ।
সিসিটিভির ফুটেজে পাওয়া পটনার দুষ্কৃতীদের একটি সাদা রঙের গাড়ির সূত্র ধরে এসটিএফ ৫ জনকে গ্রেফতার করে বিহার পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। অভিযুক্তদের জেরা করা হচ্ছে পুলিশের তরফে। পটনার পারস হাসপাতালে চন্দন মিশ্র হত্যাকাণ্ডে জড়িত পাঁচ শুটার তৌসিফ, নিশু সহ ৫ জনকে কলকাতা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দুষ্কৃতীরা খুনের পর সটান কলকাতায় পালিয়ে এসে উঠেছিল আনন্দপুরের অতিথি আবাসে। শনিবার রাতে বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে তাঁদের প্রথমে আটক করে। ঘটনার পর থেকেই গোটা এলাকা থমথমে। রীতিমতো আতঙ্কে সিঁটিয়ে রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার সকালে পটনার পারস হাসপাতালের আইসিইউতে ঢুকে ২০৯ নম্বর কেবিনে শুয়ে থাকা কুখ্যাত দুষ্কৃতী চন্দন মিশ্রকে লক্ষ্য করে পরপর গুলি ছোড়ে মূল শুটার তৌসিফ রাজা ও তার চার সঙ্গী। হাসপাতালের বেডেই গুলিতে মৃত্যু হয় চন্দনের। পুলিশ সূত্রের খবর, খুনের পর পানার হাসপাতাল থেকে একটি সাদা রঙের গাড়ি করে খুনিরা পালিয়ে যায়। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের একটি টোল প্লাজার সিসিটিভির ফুটেজে ওই গাড়িটির ছবি ধরা পড়ে। সেই সূত্রের খবর পেয়ে রাজ্য পুলিশ ও কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা হাইওয়ের বেশ কিছু ফুটেজ ধরে জানতে পারে, সেটি পূর্ব কলকাতার আনন্দপুরের একটি নামী বহুতল আবাসনে প্রবেশ করেছে। কিন্তু ওই আবাসনে তল্লাশি চালিয়ে গাড়িটির সন্ধান মেলেনি। সিসিটিভি ফুটেজ এর মাধ্যমে গোয়েন্দারা জানতে পারেন যে, সেখান থেকে বেরিয়ে গাড়িটি বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ফের যায় আনন্দপুরের একটি গেস্ট হাউসে। তার সামনে থেকেই গাড়িটির সন্ধান মেলে। তারই সূত্র ধরে গেস্ট হাউসের ভিতর থেকে ৫ জনকে আটক করে এসটিএফ। গেস্ট হাউসের মালিক জানিয়েছেন, এই ৫ জনের সঙ্গে একজন মহিলাও ছিলেন তাঁকেও আটক করেছে পুলিশ।
এর আগে, বিহার পুলিশ এবং পশ্চিমবঙ্গ এসটিএফের একটি যৌথ দল একই মামলায় নিউ টাউন থেকে পাঁচজনকে আটক করেছিল। এক আধিকারিক বলেন যে গেস্ট হাউসে পাওয়া সন্দেহভাজনদের মধ্যে একজনের পায়ে আঘাত লেগেছে এবং তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই মামলায় এসটিএফ পটনা এবং বক্সার থেকে আরও তিনজন সাহায্যকারীকে গ্রেফতার করেছে।
পটনার হাসপাতালে খুনের মূল কারণ, প্রাক্তন দুই সঙ্গী চন্দন মিশ্র ও শেরু গ্যাংয়ের নেতৃত্ব শেরুর মধ্যে পুরনো দ্বন্দ্ব। জেলে থাকাকালীন তাঁদের মধ্যে বিবাদ শুরু হয়, চন্দন পরে ‘শেরু গ্যাং’ নাম ব্যবহার করেই পৃথক গোষ্ঠী গড়ে তোলে। সেই জেরেই এই হামলা, অনুমান পুলিশের। সেই রেষারেষিতেই কি মৃত্যু, আর কে বা কারা এই ঘটনায় যুক্ত রয়েছে তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত এখনও চলছে। কলকাতা এবং পাটনার পুলিশের যৌথ অভিযান অব্যাহত বলেই জানিয়েছে পুলিশ। প্রসঙ্গত, এই গুলি চালানোর ঘটনায় নিহত চন্দন মিশ্র নিজেও একজন গ্যাংস্টার ছিলেন । তাঁর বিরুদ্ধে ১২ টি খুনের মামলা চলছিল। পুলিশি নিরাপত্তায় ওই হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল তার। কিন্তু সেই নিরাপত্তা বলয় ভেদ করে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ এক দল দুষ্কৃতী হাসপাতালের আইসিইউতে ঢুকে পড়ে এবং গুলি করে হত্যা করে চন্দনকে। এরপর দুটি বাইকে করে চম্পট দেয় তারা।