পারিবারিক সম্পত্তি বৃদ্ধির অভিযোগ নিয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর সভাতেই বিরোধীদের জবাব দিয়েছিলেন দলনেত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ্য জনসভায় জানান, 'বাইরে গেলে চা-টাও পয়সা দিয়ে খাই। সরকারের গাড়ি চড়ার ভাগ্য কম হয় বিপদে না পড়লে।’ তিনি বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে সম্পত্তি বৃদ্ধি নিয়ে কোর্টে মামলা হয়েছে। তবে তৃণমূলনেত্রীর ব্যাখ্যা, একদিন পরিবার ছোট ছিল, পরে পরিবার বড় হয়েছে, সবাই নিজের নিজের মতো থাকে। উৎসবে সম্পর্ক রাখেন। এরপরই তিনি কটাক্ষ করে বলেন, তাঁর সম্পত্তির বিচার আন্তর্জাতিক আদালতে হওয়া উচিত। এখানে বিজেপি যা শিখিয়ে দেবে তাই বলবে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মেয়ো রোডের সভায় দাবি করেছেন , ১২ বছর প্রতি মাসে ১ লক্ষ টাকা করে এমপি পেনশন পেতেন, তা তিনি নেননি। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মাসে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা করে পান সেটাও তিনি নেন না। এরপরই সিপিএমকে কটাক্ষ করে মমতা বলেন, ‘যে বাড়িতে থাকি সেটাও ঠিকা শর্তের ভিত্তিতে।’ ১৯৯১ সালের পর থেকে কোনও দিন এগজিকিউটিভ ক্লাসে চড়েননি বলেও দাবি করেন তিনি। এদিকে 'টালির চালায় থেকে এত সম্পত্তি কীভাবে', প্রশ্ন তুলে মুখ্যমন্ত্রীর পরিবারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হল কলকাতা হাইকোর্টে।
মুখ্যমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের সম্পত্তির হিসেব চেয়ে মামলা
এদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবারের সদস্যদের সম্পত্তির হিসেব চেয়ে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হল কলকাতা হাইকোর্টে । মামলা দায়ের করলেন আইনজীবী তথা বিজেপি নেতা তরুণজ্যোতি তিওয়ারি। মামলাকারীর অভিযোগ, ২০১১ সালে মমতা মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর বেড়েছে পরিবারের সম্পত্তি। মুখ্যমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যরা কম দামে সরকারি জমি কিনেছে। তাঁরা সকলেই ২০১৩ সালে সেই সম্পত্তি কিনেছে। কোটি কোটি টাকা ট্রাস্টের মাধ্যমে হস্তান্তর হওয়ার অভিযোগ তুলেছেন তিনি। পাশাপাশি এই মামলায় সিবিআই, ইডি আয়কর দফতরকে দিয়ে তদন্তের দাবি জানান হয়েছে । সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে এই মামলাটি দায়ের হয়।
মামলাকারীর বক্তব্য
আইনজীবী তরুণজ্যোতি তিওয়ারি জানান, মুখ্যমন্ত্রীর রাজনৈতিক উত্থান অনেকের অনুপ্রেরণা। কিন্তু বিশেষ করে ২০১৩-র পর থেকে তাঁর পরিবারের সম্পত্তিবৃদ্ধির রকেট গতি দেখা গিয়েছে। আর সেই বছরেই চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে সর্বস্বান্ত হয়েছেন সাধারণ মানুষ। আর এই ঘটনার পর কুণাল ঘোষ বলেছিলেন, চিটফান্ডের সব টাকা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে লুকোনো রয়েছে। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর ভ্রাতৃবধূ ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন। সেই সময় জানা গিয়েছিল তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ৫ কোটি টাকা। যদিও মুখ্যমন্ত্রীর ভ্রাতৃবধূ নিজেকে সমাজসেবী বলে দাবি করেন। আইনজীবী তরুণ তরুণজ্যোতি তিওয়ারি বলেন, 'আমার মামলায় দুটি আবেদন করা হয়েছে। প্রথমে যারা সমাজকর্মী বলে দাবি করেন তাঁদের এহেন সম্পত্তিবৃদ্ধি কারণ কী? আয়কর দফতর বিষয়টার তদন্ত করুক, আর দুই ইডি-কে দিয়ে এই বিপুল তহবিলের উৎস সন্ধান করা হোক।' আগামী ৬ তারিখ এই মামলার পরবর্তী শুনানি, সংবাদমাধ্যমকে এমনটাই জানান তরুণজ্যোতিবাবু। প্রসঙ্গত, ইতিমধ্যেই রাজ্যের বিভিন্ন দলের একাধিক নেতার বিরুদ্ধে হিসাব বর্হিভূত সম্পত্তি নিয়ে হাইকোর্টে মামলা দায়ের হয়েছে ৷ এবার হাইকোর্টে মুখ্যামন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের হল ।