জলপাইগুড়ির নাগরাকাটায় সোমবার BJP সাংসদ খগেন মুর্মু এবং বিধায়ক শঙ্কর ঘোষের উপর হামলার ঘটনা ঘিরে সরগরম রাজনীতি। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পাল্টা তাঁর বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর উদ্দেশে বার্তাও দেন তিনি। দার্জিলিং ধসের আবহে খগেন মুর্মুর উপর হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে নজিরবিহীন 'এক্স যুদ্ধ'-এ নেমে পড়লেন প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর তোপ
প্রথমে ইংরেজি এবং তারপর বাংলা ভাষায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, 'বন্যা ও ধসে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সেবা করতে গিয়ে আমাদের দলের বিধায়ক, সাংসদরা যে নৃশংস আক্রমণের শিকার হয়েছে, তা মর্মান্তিক এবং নিন্দনীয়। এই ঘটনা তৃণমূলের অমানবিকতা এবং রাজ্যের শোচনীয় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্পষ্ট ভাবে তুলে ধরছে।' তাঁর সংযোজন, 'আমার একান্ত কামনা পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও তৃণমূল কংগ্রেস এই কঠিন পরিস্থিতিতে হিংসায় লিপ্ত না হয়ে মানুষের সাহায্যে আরও মনোযোগী হোক।' একইসঙ্গে তিনি BJP কর্মকর্তাদের জনগণের পাশে থেকে চলতি উদ্ধার কাজে সহায়তা করে যাওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন।
পাল্টা জবাব মমতার
প্রধানমন্ত্রীর পোস্টের ২ ঘণ্টার মধ্যেই পাল্টা জবাব আসে মুখ্যমন্ত্রীর তরফে। এক্স পোস্টে তিনি লেখেন, 'অত্যন্ত দুঃখজনক এবং দুর্ভাগ্যজনক, প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে সামনে রেখে রাজনীতিকরণ করছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রমাণিত তথ্য, তদন্ত বা প্রশাসনিক রিপোর্ট ছাড়া সরাসরি তৃণমূল ও রাজ্য সরকারকে দোষারোপ করেছেন। এটা শুধু রাজনৈতিক শালীনতার নয়, বরং সাংবিধানিক নীতিরও লঙ্ঘন।' রাজ্য সরকারের কথা শোনার জন্যও প্রধানমন্ত্রীর কাছে আর্জি জানান তিনি।
নাগরাকাটার ঘটনার প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, 'ত্রাণ ও উদ্ধারকাজে যখন পুরো পুলিশ প্রশাসন ব্যস্ত সেই সময়ে BJP নেতারা কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা বেষ্টনী এবং বিশাল গাড়ি বহর নিয়ে বিধ্বস্ত এলাকায় গিয়েছেন। পুলিশ ও প্রশাসনকে খবর দেওয়া হয়নি। কীভাবে রাজ্য প্রশাসন, স্থানীয় পুলিশ বা তৃণমূলকে ঘটনাটির জন্য দোষী করা যায়? আমাদের একত্রিত হতে হবে, দলীয় লাইনের ঊর্ধ্বে মানুষের সেবায় – যে মানুষ এখন আমাদের সেবা সবচেয়ে বেশি চাইছে। রাজনীতি আরেকদিন হোক।'
এখানেই শেষ নয়। তীব্র আক্রমণ করে মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, 'যে প্রধানমন্ত্রী মণিপুরে জাতি হিংসা শুরু হবার ৯৬৪ দিন পরে সেখানে যাওয়ার অবকাশ পেয়েছিলেন, তাঁর কাছ থেকে বাংলার জন্য এই সহসা উদ্বেগ কোনও সমবেদনার পরিচয় নয়। বরঞ্চ, এটাকে সুবিধাবাদী রাজনৈতিক নাট্যের মতো মনে হচ্ছে। এটা রাজনৈতিক বুক-চাপড়ানোর সময় নয়। এটা সহায়তা ও নিরাময়ের সময়। আপনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী, কেবল BJP-র নন। আপনার দায়িত্ব দেশ-নির্মাণ, কাহিনি নির্মাণ নয়।'
ঠিক কী ঘটেছিল?
বন্যা ও ধসে বিপর্যস্ত নাগরাকাটার বামনডাঙায় ত্রাণ বিলি করতে গিয়েছিলেন BJP রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য। সঙ্গে ছিলেন খগেন মুর্মু, শঙ্কর ঘোষেরা। তাঁদের দু'জনকে দেখেই গ্রামবাসীরা ক্ষোভ উগরে দেন। উড়ে আসে ঢিল, জুতো। একটা সময়ে খগেন মুর্মুকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখা যায়। শঙ্কর ঘোষের অভিযোগ, 'কিছু লোক নিজেদের দিদির সৈনিক বলে তেড়ে এল। প্রথমে গালিগালাজ করল এবং তারপর বাটাম মারল। গাড়ির সিটের নীচে শুয়ে না পড়লে আমারও মাথা ফেটে যেত। নদী থেকে পাথর তুলে আমাদের গাড়ি লক্ষ্য করে ছোঁড়া হয়। তাতেই মাথা ফেটে যায় খগেনের। গলগল করে রক্ত বের হতে থাকে। ত্রাণ দিতে এসে আমাদের এমন অবস্থা হবে ভাবিনি।'
উল্লেখ্য, সোমবার উত্তরবঙ্গে পৌঁছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,'বন্যায় মানুষের সব হারিয়েছে। ওদের ক্ষোভ থাকতেই পারে। সে এলাকায় ৩০-৪০ গাড়ি নিয়ে যাওয়া উচিত নয়। মানুষ সব হারিয়ে বিক্ষুব্ধ হয়ে থাকবে, এটাই স্বাভাবিক।'
তবে উত্তরবঙ্গের বিপর্যয় ঘিরে মুখ্যমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর এমন ভার্চুয়াল যুদ্ধ ভোটের আগে নতুন করে রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়িয়ে দিল, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।