সম্প্রতি সব রকমের আলু রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। আলু চলাচলের এই নিষেধাজ্ঞা বিপর্যয় ঘটাতে পারে, এই নিয়ে সতর্ক করছে ওয়েস্ট বেঙ্গল কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন (WBCSA)। রাজ্যের হিমঘরগুলিতে এত আলু মজুত যে, তা কৃষক এবং বাজারের পক্ষে আশঙ্কাজনক, দাবি করেছে পশ্চিমবঙ্গ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন। প্রসঙ্গত, বাংলার বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে ভিনরাজ্যে আলু পাঠানো নিয়ে কড়াকড়ি শুরু করেছিল রাজ্য সরকার ৷ বাংলা থেকে বিভিন্ন রাজ্যে যাওয়ার পথে এই নিয়ে নাকাচেকিংও শুরু হয় ৷ কিন্তু সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে আসলে আলু ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে ৷
সংগঠনের সহ-সভাপতি শুভজিৎ সাহা মঙ্গলবার জানান, মোট ৪৭৫টি হিমঘরে ৪.১ লক্ষ টন আলু রয়েছে। অর্ধেকই অন্য রাজ্যে ব্যবহারের। কিন্তু ২৮ নভেম্বর থেকে রাজ্য সরকারের নির্দেশিকা অনুযায়ী বাইরের রাজ্যে তা পাঠানো বন্ধ। অবিলম্বে সীমানা না খুললে পরের বছর নতুন আলু ঢুকতে সমস্যা হবে। চাষিদের ক্ষতি হবে। দামও আরও বাড়তে পারে।
পশ্চিমবঙ্গে যে পরিমাণ আলু উৎপন্ন হয়,তার ৬০ শতাংশ রাজ্যের অন্দরেই বিক্রি হয়। বাকি ৪০ শতাংশ চলে যায় ভিনরাজ্যে। রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ার পর বর্ধমান, মেদিনীপুর, হুগলির মতো জেলাগুলিতে সমস্যা তৈরি হয়েছে। কোল্ড স্টোরেজে পড়ে রয়েছে বিক্রি না হওয়া আলু। এখন প্রশ্ন উঠছে, ডিসেম্বর নতুন আলু ওঠার পরও যদি বিক্রি না হয়, তাহলে কী হবে! সে ক্ষেত্রে কোল্ড স্টোরেজের আলু নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকছে। আর সেটা হলে, কৃষকেরও ক্ষতি, কোল্ড স্টোরেজেরও ক্ষতি। সাংবাদিক বৈঠক করে এমনটাই জানিয়েছেন কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা।
পশ্চিমবঙ্গ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি শুভজিৎ সাহা সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, অন্য রাজ্যে যেতে দেওয়ার পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গে ব্যবহারের জন্য রাখা আলু কিনুক সরকার। তাতে বাজারে দাম কমবে। হিমঘরের মজুতও ফুরোবে। তবে ব্যবসায়ীদের একাংশের অভিযোগ, দাম চড়িয়ে রাখতেই হিমঘর মালিকেরা কম আলু ছাড়ছেন। অভিযোগ উড়িয়ে অবশ্যশুভজিত সাহার জবাব, ‘‘এখন হিমঘরের গেটে আলুর কেজি ২৫-২৭ টাকা। অথচ বাজারে ৩৫-৪০ টাকা। কেন, তা জানা নেই।’’
পশ্চিমবঙ্গ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের দাবি ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে হিমঘরগুলি থেকে প্রায় ৪ লক্ষ মেট্রিক টন আলু বের করতে হবে ৷ হাতে আর বেশি সময় নেই ৷ সেই কারণেই, রাজ্য সরকারের উচিত অন্য রাজ্যে আলু সরবরাহ নিশ্চিত করার চেষ্টা করা ৷ অন্যথায় হিমঘর মালিকদের ক্ষতি হয়ে যাবে ৷ শুভজিৎ সাহা জানাচ্ছে, এখনও পর্যন্ত ২ লক্ষ মেট্রিক টন আলুই হিমঘর থেকে বেরিয়েছে ৷ তাঁর আরও দাবি, বাজারে আলুর দাম বৃদ্ধির জন্য হিমঘরের কোনও ভূমিকা নেই ৷ হিমঘর থেকে আলু বের হওয়ার পর বেশ কয়েক হাত ঘুরে তা বাজারে আসে ৷ সেই কারণেই দাম বেড়ে যাওয়ার জন্য হিমঘরকে দায়ী করা ঠিক নয় ৷ পাশাপাশি সংগঠনের দাবি, এখনও তাঁরা সরকার নির্ধারিত দামে আলু দিতে তৈরি ৷