'দিদি আমাকে পাঠিয়েছেন। দিদিকে ফোন করুন। কারও কাছে নম্বর আছে। দিদি দিদি, সিএম দিদি।' ঠিক এই ভাষাতেই আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে দাদাগিরি এক যুবকের। তাঁর নাম আফসার আলি খান। নিজেকে অ্য়াডিশনাল সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন ওই যুবক। আরজি করে-এ তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের পর হাসপাতালের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ সামনে এসেছে। তার মধ্যেই এই 'দাদাগিরি'-র ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। আফসার আলি খান নামের ওই যুবক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের নাম করছেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ভিডিওটি এখন এতটাই ভাইরাল যে, নেটিজেনরা একাধিক প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। সন্দীপ ঘোষের আগে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ ছিলেন মানস কুমার মুখোপাধ্যায়। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, তিনি আরও কয়েকজন আধিকারিকের সঙ্গে বসে রয়েছেন। সেখানেই মুখ্যমন্ত্রীর নাম করে তাঁদের কার্যত শাসাচ্ছেন আফসার। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে, কেন সে রোজ আসে না, কেন নির্ধারিত পোশাক পরে আসে না। তখনই আফসার তাঁদের উদ্দেশে 'গলা তুলে' কথা বলতে শুরু করে।
নেটিজেনদের প্রশ্ন, একজন অ্যাডিশনাল সিকিউরিটি গার্ড কীভাবে এত ক্ষমতা পান? তাঁদের কি ডাক্তারদের নিরাপত্তা দেওয়ার বা ডাক্তারদের হুমকি দেওয়ার অধিকার রয়েছে?
জানা যায়, এই আফসার প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের ঘনিষ্ঠ। আরজি কর আসার আগে মানসবাবু সেখানকার অধ্যক্ষ ছিলেন।
কথোপকথনে কী আছে?
আরজি করে উপস্থিত সরকারি আধিকারিকরা ওই যুবককে জিজ্ঞাসা করেন, কতজন আছেন?
আফসার : আমি জানি না। আমি এসব খবর রাখি না। আপনারা দিদিকে কল করে নিতে পারেন। দিদির নম্বর আছে কারও কাছে?
কে দিদি?
আফসার : দিদি দিদি, সিএম দিদি।
এই ভিডিওটিকে এখন অস্ত্র করেছে রাজ্য বিজেপি। শেয়ার করেছেন অমিত মালব্যও।
আরজি কর হাসপাতালের আধিকারিকদের সূত্রে খবর, বেলগাছিয়ার বিধায়ক অতীন ঘোষের ঘনিষ্ঠ আফসার। বিধায়কই নাকি ওই যুবককে চাকরি পাইয়ে দিয়েছিলেন।
যদিও এই নিয়ে অতীন ঘোষ বলেন, 'আমি বেলগাছিয়া বস্তিতে যায় সপ্তাহে দুইবার। সেখানে শয়ে শয়ে মানুষ রয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে ওঁকে চিনতাম না।'
হাসপাতাল সূত্রে খবর, এরকম অ্যাডিশনাল সিকিউরিটি প্রতিটি হাসপাতালে থাকে। এটাই নিয়ম। তবে এক্ষেত্রে আফসারের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।
আরজি কর কাণ্ড সামনে আসার পর এই আফসার আলি খানের বিরুদ্ধে হাসপাতালের জৈব বর্জ্য বিক্রির অভিযোগও উঠেছে। অভিযোগ, বাংলাদেশের একজনকে সেই সব বিক্রি করতেন আফসার। তার মধ্যে থাকত সিরিঞ্জ, গ্লাভস ইত্যাদি।
সূত্রের খবর, সেদিনের ওই ঘটনার পর এই আফসারি আলির বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করা হয়। তাঁকে কাজ থেকে বরখাস্তও করা হয়। কিন্তু সন্দীপ ঘোষ অধ্যক্ষ হওয়ার পর ফের আফসার আলিকে কাজে ফিরিয়ে আনা হয়।