আরজি কর কাণ্ডের একবছর পরেও সেই 'জাস্টিস'-এর দাবিতেই সোচ্চার নির্যাতিতা তরুণীর মা-বাবা। CBI-এর তদন্তে যে তাঁরা যারপরনাই অসন্তুষ্ট, দিল্লি থেকে ফিরে ক্ষোভ প্রকাশ করে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন তরুণী ডাক্তারের বাবা। তাঁদের বক্তব্য, সিবিআই এখন এই মামলা থেকে স্রেফ হাত গুটিয়ে নিতে চাইছে। একই সঙ্গে দিল্লির সরকারের দেওয়া পুরস্কারও ফিরিয়ে দিয়েছেন তাঁরা।
আরজি কর হাসপাতালে সেমিনার রুমে তরুণী ডাক্তারের অর্ধনগ্ন ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার
২০২৪ সালের ৮ অগাস্ট মধ্যরাতে আরজি কর হাসপাতালে সেমিনার রুমে তরুণী ডাক্তারের অর্ধনগ্ন ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়। ঘটনা প্রকাশ্যে আসে ৯ অগাস্ট সকালে। অভিযোগ ওঠে, ধামাচাপা দিতে সরকারের নির্দেশ পুলিশ সব তথ্যপ্রমাণ লোপাট করে দিয়েছে। সেই অভিযোগে শুরু হয় তীব্র প্রতিবাদ। গর্জে ওঠে কলকাতা সহ গোটা দেশ। আঁচ ছড়ায় আন্তর্জাতিক বিশ্বেও। ঘটনার প্রতিবাদে আজ অর্থাত্ ৮ অগাস্ট ও আগামিকাল ৯ অগাস্ট নানা কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে কলকাতা সহ গোটা রাজ্যে। জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের পাশাপাশি শনিবার নবান্ন অভিযানে নামছেন নির্যাতিতার মা-বাবা।
দিল্লির সরকারের পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়েছেন
ইতিমধ্যেই তাঁরা দিল্লিতে গিয়ে সিবিআই আধিকারিকদের সঙ্গে তদন্ত নিয়ে কথা বলেছেন। কলকাতায় ফিরে সিবিআই তদন্ত নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিলেন। নির্যাতিতা তরুণী ডাক্তারের মায়ের কথায়, 'CBI কিছু করবে না, আমাদের রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করতে হবে। আদালতেই আমাদের লড়াই চলবে। এর পেছনে নিশ্চয়ই রাজনৈতিক চাপ আছে। আর মেয়েটা মেডিক্যাল কলেজের দুর্নীতির কথা জানত, আমরাও জানতাম। ওকে টাকা চাইতে বলা হয়েছিল, কিন্তু আমার মেয়ে বলেছিল, আমি মেধার জোরে সুযোগ পাব, গোল্ড মেডেল পাব। আসলে ও একে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিল। এটাই ছিল ওর সবচেয়ে বড় ভুল।' তিনি আরও বলেন, 'আমরা দিল্লিতে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তার হাত থেকে ‘নারী শক্তি পুরস্কার’ পেয়েছিলাম। যদিও আমি সেই পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়েছি মুখ্যমন্ত্রীকে। আমি তাঁকে বলেছিলাম, যেদিন আমার মেয়ে ন্যায়বিচার পাবে, সেদিন আমি এই পুরস্কার গ্রহণ করব।'
সিবিআই অফিস বন্ধ করে দেওয়া উচিত
নির্যাতিতা তরুণীর বাবা এতটাই ক্ষুব্ধ যে, তিনি চাইছেন, সব সিবিআই অফিস বন্ধ করে দেওয়া উচিত। তিনি বলছেন, 'সিবিআই ডিরেক্টর নিজেই বলেছেন, সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেব। তিনি এই কথা তিনবার বলেছেন। আর একটি আশ্চর্যজনক কথা বলেছেন—যখন আমরা পালটা প্রশ্ন করছিলাম, তখন তারা বিরক্ত হয়ে বলে বসেন, আমরা এই মামলা থেকে সরে যাব। তারা আমাদের প্রশ্নের উত্তর দেননি, শুধু বললেন, আমরা কেস ছেড়ে দেব। তখন আমি বলি, আমাকে নয়, আদালতকে গিয়ে বলুন এই কথা। এরকম কথোপকথন হয়েছে আমাদের সঙ্গে সিবিআইয়ের। ভাবুন তো, ১৪০ কোটির প্রতিনিধি যে সংস্থা, তারা এক বছর পর এসে বলছে, কেস ছেড়ে দেব! তাহলে এক বছর ধরে করছিলেন কী? ঘাস কাটছিলেন? ঘাস তো যে কেউ কাটতে পারে, তাহলে কোটি কোটি টাকা খরচ করে এদের রাখার মানে কী? আমার মতে, প্রতিটি সিবিআই অফিসই বন্ধ করে দেওয়া উচিত।'