'আমি কিছু করিনি। আমাকে ভয় দেখানো হয়েছে। আমার কথা শোনেনি। আমি যখন বলেছি, আমার কথা শোনেনি। আমি কিন্তু রেপ-মার্ডার করিনি। এতদিন চুপচাপ ছিলাম। আমার কোনও কথা শোনেনি। আমায় ভয় দেখাচ্ছে, যে তুমি কিছু বলবে না। আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। আমাকে পুরো ভয় দেখানো হয়েছে। কাউকে বাঁচানোর জন্য আমায় ফাঁসানো হয়েছে। এটা কী কোনও ন্যায়, এটা ভারতের সংবিধানের ন্যায়। আমায় ওপর থেকে নীচে নামিয়ে আনা হল।'
সোমবার শিয়ালদা কোর্টে তোলার পর আরজি কর কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায় ঠিক এই কথাগুলোই বলেছে সংবাদ মাধ্যমের উদ্দেশে। কালো প্রিজন ভ্যানে করে সঞ্জয়কে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। সেই গাড়ির লোহার জালে মোড়া জানলা থেকে চিৎকার করে সংবাদমাধ্যমকে কিছু বলতে চাইছিল সে। সঙ্গে সঙ্গে সাংবাদিকরা সেই জানলার দিকে ছুটে যান। সেখানেই বার বার চিৎকার করে নিজেকে নির্দোষ হিসেবে দাবি করেন সঞ্জয়। তাকে ফাঁসানো হচ্ছে বলেও জানায় সে।
উল্লেখ্য, শিয়ালদা আদালতে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগে চার্জ গঠন করা হয় এদিন। অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালত -১ বিচারক অনির্বাণ দাসের এজলাসে সঞ্জয় রায়ের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬ (ধর্ষণ) ও ৩০২ (খুন) ধারায় চার্জ গঠন করা হয়েছে। মামলার শুনানি ১১ নভেম্বর থেকে হবে। অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার নিজেকে নির্দোষ দাবি করে। তবে সিবিআই তদন্তকারী দল সঞ্জয় রায়কে এই মামলার মূল অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং অভিযোগ করেছে যে, সঞ্জয়ের অপরাধ লুকোতে ষড়যন্ত্র হয়েছে।
ধর্ষণ-খুন মামলায় আরও দু'জন অভিযুক্ত রয়েছেন—আরজি কর হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডল। সিবিআইয়ের তদন্তে অভিযোগ করা হয়েছে, সন্দীপ ঘোষ ও অভিজিৎ মণ্ডল সঞ্জয় রায়কে আড়াল করতে ষড়যন্ত্র করেছিলেন। সিবিআইয়ের দাবি, এ দু’জন অভিযুক্ত মূল অপরাধের প্রমাণ লোপাট ও ষড়যন্ত্রে যুক্ত। তবে মামলার তদন্তে প্রমাণ সংগ্রহে কিছু সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে সিবিআই, যাদের বিরুদ্ধে সঠিক তথ্য তুলে ধরতে বাধ্য সিবিআই।
সূত্রের খবর, সিবিআই সঞ্জয় রায়ের মোবাইল কল রেকর্ড, হোয়াটসঅ্যাপ কল, ও অন্যান্য যোগাযোগের মাধ্যমের ওপর তদন্ত চালিয়েছে। পাশাপাশি, আরজি কর হাসপাতালে সিসিটিভি ফুটেজও খতিয়ে দেখা হয়েছে। তবে সন্দীপ ঘোষ ও অভিজিৎ মণ্ডলের সঙ্গে সঞ্জয়ের সরাসরি যোগাযোগের কোনও প্রমাণ এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। যদিও সন্দীপ ঘোষ ও অভিজিৎ মণ্ডলের মধ্যে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ হয়েছে, কিন্তু সঞ্জয় রায়ের সঙ্গে তাদের সরাসরি সংযোগের কোনও হদিস মেলেনি।
নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই সন্দীপ ও অভিজিৎ মণ্ডলের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করার প্রয়োজন হতে পারে। তবে সঞ্জয়ের গতিবিধি এবং তার সঙ্গে অন্য অভিযুক্তদের সম্পর্কের সুস্পষ্ট প্রমাণের অভাবে সিবিআইকে প্রমাণ দাখিলে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। সঞ্জয়ের দাবি অনুযায়ী, তিনি সন্দীপ ঘোষকে শুধুমাত্র দূর থেকে চিনতেন, এবং অভিজিৎ মণ্ডলের সঙ্গেও তার কোনও পরিচয় ছিল না।