তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের মামলায় সোমবার রাতে সিবিআই-এর হাতে গ্রেফতার হয়েছেন আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ (Sandip Ghosh)। ১৫ দিন জিজ্ঞাসাবাদের পর আর্থিক দুর্নীতির মামলায় গ্রেএফতার করা হয়েছে সন্দীপকে। তাঁকে সোমবারও কলকাতার সল্টলেকের সিবিআই অফিসে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছিল। এরপর নিজাম প্যালেসে সিবিআই-এর দুর্নীতি দমন শাখায় নিয়ে যাওয়া হয় ও গ্রেফতার করা হয়। সন্দীপের সঙ্গে গ্রেফতার করা হয়েছে বিপ্লব সিং, সুমন হাজরা এবং আফসার আলি খানকেও।
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের প্রাক্তন ডেপুটি সুপার আখতার আলি সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। হাসপাতালের বেওয়ারিশ লাশ পাচার, বায়োমেডিকেল বর্জ্য অপসারণে দুর্নীতি, নির্মাণ টেন্ডারে স্বজনপ্রীতি এমন একাধিক অভিযোগ ওঠে। সূত্রের খবর, এই সব ঘটনার তদন্ত কলকাতা পুলিশ আগে করেছিল। তবে হাইকোর্টের নির্দেশে সিবিআই-এর হাতে তদন্ত হস্তান্তর করা হয়।
১৯ অগাস্ট, কলকাতা পুলিশ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে IPC-এর 120B, 420 ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, 1988-এর ধারা 7-এর অধীনে একটি মামলা দায়ের করে। এরপর হাইকোর্টের নির্দেশে সিবিআই ২৪ অগাস্ট তদন্তের দায়িত্ব নেয়। তাকে শুধু উপরোক্ত ধারায় গ্রেফতার করা হয়। যে ধারাগুলো সন্দীপ ঘোষকে দেওয়া হয়েছে, সেগুলো প্রমাণিত হলে তাঁর যাবজ্জীবন সাজা হতে পারে।
কোন ধারায় কী শাস্তি?
IPC-এর 120B ধারা- ভারতীয় দণ্ডবিধির 120B ধারা তখনই প্রযোজ্য হয় যখন সংগঠিতভাবে কোনও অপরাধ করা হয় বা তার ষড়যন্ত্র করা হয়। এক্ষেত্রে অভিযুক্করে নিজেই অপরাধ করতে হবে এমন নয়। সে নিজে ষড়যন্ত্রের অংশ হলেও এই ধারা প্রযোজ্য হবে।
শাস্তি- যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা ২ বছর বা তার বেশি সশ্রম কারাদণ্ড।
IPC-এর ধারা 420 – যারা প্রতারণা, জালিয়াতি এবং অসততার মাধ্যমে সম্পত্তি অর্জন করে তাদের বিরুদ্ধে এই ধারার অধীনে মামলা নথিভুক্ত করা হয়। কিন্তু এখন ভারতীয় বিচার বিভাগীয় কোড অর্থাৎ BNS এর অধীনে, যা ১ জুলাই থেকে কার্যকর হয়েছে। ফলে ৪২০ এর পরিবর্তে ৩১৮ ধারা ব্যবহার করা হচ্ছে।
সাজা- সাত বছরের কারাদণ্ড এবং জরিমানা।
দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৮৮ এর ধারা ৭ - এই ধারার অধীনে একটি মামলা নথিভুক্ত করা হয় যদি কোনও সরকারী কর্মকর্তা এবং কর্মচারী তাদের দফতরের কাজের সঙ্গে সম্পর্কিত বৈধ পারিশ্রমিক ব্যতীত অর্থ উপার্জন করেন।
শাস্তি: ৬ মাস থেকে সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ড ও জরিমানা।
প্রসঙ্গত, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে ১৫০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে জেরা করেছে সিবিআই। গত ৯ অগাস্ট সকালে যে তরুণীর মৃতদেহ উদ্ধার হয় তা নিয়েও তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সন্দীপের পলিগ্রাফ পরীক্ষাও করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। সূত্রের খবর, প্রথমবার পরীক্ষার সময় সন্দীপ সিবিআই-কে সন্তোষজনক উত্তর দেয়নি। সিবিআই অফিসাররা সন্দীপ ঘোষের বাড়ি ও হাসপাতালে গিয়ে তল্লাশি চালান। আর্থিক অনিয়মের তদন্তে তিনটি দল গঠন করা হয়েছিল বলে দাবি। প্রথম দল আরজি কর হাসপাতালের মর্গে গিয়ে তদন্ত করে। সেখানকার কাঠামো, মৃতদেহ নিরাপদে রাখা এবং ময়নাতদন্ত পরিচালনার প্রটোকল সম্পর্কে অনুসন্ধান করা হয়েছিল। পাঁচ সদস্যের দলটি হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে।