মঙ্গলবার শহরের পুজো কমিটিগুলো নিয়ে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বছর পুজোর সরকারি অনুদান ৬০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৭০ হাজার করে দিয়েছেন। তবে এই অনুদান অন্যান্য পুজো কমিটিগুলো গ্রহণ করলেও গত বছরের মতো এ বছরও সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার পুজো কমিটি ফিরিয়ে দিয়েছে এই সরকারি অনুদান।
মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণার পরই রাজ্য সরকারের এই সরকারি অনুদান ফিরিয়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন পুজো কমিটির অন্যতম সদস্য তথা বিজেপি নেতা সজল ঘোষ। ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়াতে সেই কথা জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। এই বিষয়ে bangla.aajtak.in-এর সঙ্গে কথা বললেন সজল ঘোষ। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে এই টাকা পাপের টাকা তাই তাঁদের কমিটি এই অনুদান গ্রহণ করবেন না।
সজল ঘোষ এ প্রসঙ্গে বলেন, 'গত বছর ৬০ হাজার দিয়েছিলেন, এ বছর ৭০ হাজার দিয়েছে, আমরা গত বছর নিই নি, এবারও নেব না। কারণ হতেই পারে ওই টাকাটা আমার টাকা, আমাদের টাকা, মুখ্যমন্ত্রী পৈতৃক টাকা দিচ্ছেন না, কিন্তু মুশকিল যেটা হচ্ছে সেটা হল ওই টাকায় বহু মানুষের চোখের জল আছে, অনেক ঘাম আছে, অনেক রক্ত আছে। মুখ্যমন্ত্রী একটা কথা বলেছেন যে আমাদের কাছে টাকা নেই, যে সরকারের কাছে টাকা নেই তার এই ধরনের বিলাসিতা করা, দানসত্ত্ব করা মানায় না। এটা একমাত্র আমরা ছবি বিশ্বাসকে দেখেছিলাম জলসাঘর সিনেমাতে করতে। ছবি বিশ্বাসের টাকা নেই অথচ বাঈজি নাচ দেখবেন, এখানেও মুখ্যমন্ত্রীর বিষয়টা সেরকম। সরকারের কাছে টাকা নেই অথছ সরকার ৩০০ কোটি টাকা এখানে খরচা করল।'
সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার পুজোর সেক্রটারি সজল ঘোষের কথানুয়ায়ী তিনি সরকারকে অনুরোধ করবেন যে টাকাটা তাঁরা ফিরিয়ে দিলেন তা দিয়ে যেন দুজন যারা প্রচণ্ডভাবে অভাবী, ধর্মতলায় যারা বসে আছেন, তাঁদের একমাসের করে মাইনে দিয়ে দেওযা হোক। অথবা কোনও একজন দুঃস্থ মানুষকে খুঁজে, যিনি মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ, যিনি ডিএ পাননি, এরকম কাউকে পাঁচমাসের ডিএ দিয়ে দেওয়া হোক। কিন্তু সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার সরকারের এই পাপের টাকা অনুদান হিসাবে গ্রহণ করবে না।
সজল ঘোষ শহরের তৃণমূলের মন্ত্রীদের পুজো কমিটিগুলোকে কটাক্ষ করে জানান যে সরকারের অনুদানের কি খুব প্রয়োজন রয়েছে তাঁদের। বিজেপি নেতা বলেন, 'তৃণমূলের পুজো উদ্যোক্তাদের কী এই টাকাটা খুব দরকার, যে পুজো উদ্যোক্তার টুকটুকে গার্লফ্রেন্ডের খাটের তলা থেকে টুকটুকে লাল নোট পাওয়া যায়, সেই পুজো কমিটি ওই টাকাটা হাত পেতে নেবে। অরূপ বিশ্বাসের টাকা লাগবে, সুজিত দার (সুজিত বসু) টাকা লাগবে, ববি দার (ফিরহাদ হাকিম) টাকা লাগবে। সরকারি এই অনুদানের টাকা যদি রাজ্য সরকার গ্রামের ছোট পুজোগুলিকে দিতেন এতে আমার কোনও আপত্তি থাকত না, তৃণমূলের পুজো কমিটিগুলোকে না দিয়ে, সাধারণ পুজোগুলিকে অনুদান দিলে খুশি হব।'
সজল ঘোষ মঙ্গলবারই তাঁর ফেসবুক পোস্টে লেখেন, 'মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ তিনি ইমাম ও পুরোহিত ভাতা বাড়িয়েছে। আজ পুজো কমিটিগুলোকে ৭০ হাজার টাকা অনুদান দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার সবিনয়ে এই অনুদান ফিরিয়ে দিল।' সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার সর্বজনীন পুজোর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত বিজেপি নেতা সজল ঘোষ। সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার সর্বজনীন পুজোর কলকাতায় বিশেষ আকর্ষণ থাকে দর্শকদের কাছে। প্রতি বছরই ভিড় উপচে পড়ে এই মণ্ডপে। এমনিতেই পুজো নিয়ে ক্লাব বা কমিটিগুলির রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা দীর্ঘদিনের। একাধিক পুজো কমিটির প্রধান পৃষ্টপোষক হিসেবে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা যুক্ত থাকেন।
গত বছর এই পুজোকে ঘিরে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল। এ বছর সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার বা লেবুতলা পার্কের পুজোর থিম অযোধ্যার রাম মন্দির। সেই আদলেই তৈরি হবে মণ্ডপ। শোনা যাচ্ছে, পুজো উদ্বোধনে আসতে পারেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।