কলকাতার সোনাগাছি এলাকা।-ফাইল ছবিকলকাতার সোনাগাছি, এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ যৌনপল্লী। সেখানে এখন ছায়া ফেলেছে এক নতুন আতঙ্ক। ভোটার তালিকা পর্যালোচনার বিশেষ উদ্যোগ, অর্থাৎ এসআইআর (Special Intensive Revision) প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছেন বহু যৌনকর্মী। আশঙ্কা, দীর্ঘ লড়াইয়ের পর যে ভোটাধিকার অর্জিত হয়েছিল, তা কি এবার কেড়ে নেওয়া হবে?
দুর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতির সদস্যরা জানিয়েছেন, সোনাগাছির বহু মহিলা প্রত্যন্ত গ্রাম ছেড়ে পেটের টানে এখানে এসেছিলেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই বহু বছর ধরে পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন। ফলে জন্মসনদ, বাসস্থান বা নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র নেই হাতে। এই পরিস্থিতিতে এসআইআর যাচাই প্রক্রিয়ায় তাঁদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ার আশঙ্কা প্রবল।
দুর্বারের সম্পাদক বিশাখা লস্কর বলেন, 'যাদের আর বাড়ি ফেরা সম্ভব নয়, বা যাদের কোনও প্রমাণপত্র নেই, তাদের নাম মুছে যাওয়ার ভয় রয়েছে। ২০০২ সালে প্রথম এখানে ভোটার কার্ড হয়েছিল। তখন সবার নাম অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়নি। এখন সেইসব নাম নিয়েই বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। তাই নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হওয়ার চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে।'
এর পাশাপাশি উঠে আসছে আরও একটি গুরুতর অভিযোগ, বাংলাদেশি যৌনকর্মীদের সোনাগাছিতে অবৈধ উপস্থিতি। সূত্রের দাবি, প্রতিবছরই সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশ থেকে কিছু মহিলা অবৈধভাবে এপারে এসে যৌনপল্লীতে কাজ শুরু করেন। তাঁদের মধ্যে অনেকে নকল পরিচয়পত্রও তৈরি করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ।
বিশাখা লস্কর এ বিষয়ে স্পষ্টভাবে বলেন, 'যদি কেউ বাংলাদেশ থেকে লুকিয়ে এসে থাকে, সেটা প্রশাসনের দেখা উচিত। আমরা কোনওভাবেই এটা সমর্থন করি না।'
‘আমরা পদাতিক’ (যৌনকর্মীদের সন্তানদের সংগঠন)-এর তরফে আইনজীবী মহাশ্বেতা মুখোপাধ্যায় বললেন, 'যারা বহু বছর ধরে এখানে রয়েছেন, তাঁদের কাছে সব বৈধ নথি রয়েছে। তবে বসিরহাট বা বনগাঁর মতো সীমান্ত এলাকার যেসব মেয়ে কাজের জন্য এখানে আসে, তাঁদের ভুল করে বাংলাদেশি তকমা দেওয়া হচ্ছে না তো, সেটাও খতিয়ে দেখা দরকার। অবৈধভাবে প্রবেশের বিষয়টি প্রশাসনেরই দেখা উচিত।'