ঘরে ঘরে সর্দি-কাশি নিয়ে জেরবার বাচ্চা থেকে বুড়ো। আবহাওয়া পরিবর্তন, নাকি দূষণ? নাকি নতুন কোনও ভাইরাসের উপস্থিতি! ভাবাচ্ছে চিকিৎসকদেরই। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে ঘরে ঘরে ঠান্ডা-জ্বরের হানা নতুন নয়। কিন্তু কাশি কমছে না, কেন? জ্বরজ্বালা কমে গেলেও কাশি থেকে যাচ্ছে। অনেককেই দু থেকে তিনমাস ঘুশঘুশে কাশি ভোগাচ্ছে। পরিস্থিতি সামলাতে নিতে হচ্ছে ইনহেলার। বিষয়টিতে কী বলছেন বিশিষ্ট চিকিৎসকরা?
রাজ্যে ফি বছর ডেঙ্গি ও ভাইরাল জ্বরে মৃত্যু হয় অনেকের। তবে এ বারের চিত্র কিছুটা আলাদা। অনেক সময় জ্বর হলেও কী ধরনের জ্বর, তা বুঝতেই কেটে যায় অনেকগুলি দিন। কিছু দিন আগে পর্যন্ত জ্বর হলেই ধরে নেওয়া হচ্ছিল, কোভিড হয়েছে। আরটি-পিসিআর পরীক্ষাতেও পজিটিভ রিপোর্ট আসছিল। কিন্তু এখন করোনা পরিস্থিতি অনেকটা স্থিতিশীল। সংক্রমণের হারও প্রায় শূন্য।
তবু ঘরে ঘরে বিভিন্ন বয়সের মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন অজানা ঠান্ডা-জ্বরে। এ ক্ষেত্রে অনেকের মধ্যে কোভিড পরীক্ষা করিয়ে নেওয়ার অনীহা দেখা দিচ্ছে। আবার পরীক্ষা করলেও তার ফলাফল আসছে নেগেটিভ। ফলে এই জ্বরের কারণ করোনা নয় বলেই মত চিকিৎসকদের। কিন্তু কাশির ভোগান্তি চলছেই। গলা ভেঙে আওয়াজ বেরোচ্ছে চিঁ চিঁ করে। কারও মুখ নড়ছে। কিন্তু শব্দ বেরোচ্ছে ছিটেফোঁটা। অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে রয়েছে নাক দিয়ে জল গড়ানো। দমক দিয়ে কাশি।
বিশিষ্ট চিকিৎসক কুণাল সরকারের বক্তব্য, 'যখন আবহাওয়া পরিবর্তন হয়, তখন বাতাসের গুণমানও পাল্টে যায়। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণেরও হেরফের দেখা যায়। এই সময়ে স্বাভাবিক কারণেই কিছু ভাইরাস আক্রমণ করে। আমাদের শরীরেই কিছু ভাইরাস থাকে। যেগুলো জেগে ওঠে। ফলে ইনফেকশন হয়। আর তা থেকেই সর্দি-কাশি শুরু হয়।'
এরসঙ্গে কোভিডের কোনও সম্পর্ক রয়েছে কি?
কুণাল সরকারের বক্তব্য, 'এখনও কোভিডের কালশিটের দাগ এখনও যায়নি। এই সাধারণ সর্দি-কাশির মধ্যে কোভিড এখনও হচ্ছে। এটা নতুন কিছু নয়, প্রতিবছরই হয়। যাদের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বেশি, তাঁদের ভয় কম। এছাড়াও কোভিড ভ্যাকসিন নেওয়া থাকলে সমস্যা কম হয়। তবে কোভিড ভ্যাকসিনের কাজ থমকে রয়েছে। বহু তরুণ-তরুণীও ওই সমস্যায় ভুগছে। তাই ভ্যাকসিন নেওয়া দরকার। কোভিডের পর শরীরে প্রতিক্রিয়া করছে। তবে কার ক্ষেত্রে কী হবে, সেটা বলা যায় না। তবে এটাকে মারাত্মক বলা যায় না। তবে পুরোপুরি হেলাফেলা করা উচিত নয়। জ্বর, গা ম্যাজম্যাজ, সর্দি-কাশি যদি না কমে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।'
বেলেঘাটা আইডির চিকিৎসক কৌশিক চৌধুরীর কথায়, 'মূলত ভাইরাল ফ্লু-তে আক্রান্ত হচ্ছেন অধিকাংশ। চিন্তা করার কিছু নেই। সাতদিনের মধ্যে চাঙ্গা হচ্ছে শরীর। খুব কাশি হলে, চিকিৎসকের পরামর্শে নিতে হবে নেবুলাইজার বা ইনহেলার। তবে এখন দেখা যাচ্ছে কাশিটা কমছে না। যেটা একটু চিন্তার। জ্বর কমে গেলেও কাশি, সর্দির মতো কিছু উপসর্গ কিছু দিন থেকে যাচ্ছে। এই ধরনের জ্বরে আক্রান্তদের মধ্যে গলা এবং শ্বাসযন্ত্রজনিত সমস্যা বেশি দেখা যাচ্ছে।'
তিনি আরও বলেন, 'তবে কোভিড এখনও বেশি হয়নি। অ্যাডিনো ভাইরাস বেশি পাওয়া যাচ্ছে। আর হচ্ছে সিজিনাল ফ্লু। আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণেই এমন হচ্ছে মূলত। তবে কাশি না কমলে খুব একটা নিশ্চিন্ত না হওয়াই ভালো। বয়স্কদের ঝুঁকি বেশি। কাশি না কমলে জেনারেল ফিজিশিয়ান। তারপর তাঁর পরামর্শে চেস্ট ফিজিশিয়ান দেখানো উচিত।'
কৌশিক চৌধুরীও বললেন, 'লক্ষ্যণীয় বিষয় কাশিটা কমছে না। অ্যান্টি অ্যালার্জিক ওষুধ বা অ্যান্টিবায়োটিকে নাও কমতে পারে। সেক্ষেত্রে ইনহেলার নিতে হতে পারে। নিজে থেকে গার্গেল, ভাপ নেওয়া, জ্বর হলে প্যারাসিটামল খাওয়া ছাড়া অন্য কোনও ওষুধ নেওয়া উচিত নয়। তবে বাতাসের গুণমান ঠিক থাকলে এই রোগ অনেকটাই কম হবে। দূষণও কাশির অন্যতম কারণ।'
আরও পড়ুন-Prevent cold and cough: ঠান্ডায় কাবু? রইল শীতে সর্দি-কাশি প্রতিরোধে ঘরোয়া উপায়