
তারাপীঠ। বাঙালির অন্যতম পর্যটন ক্ষেত্র। মা তারার মন্দিরের জন্য সেখানে প্রতিবার লাখ লাখ ভক্তের সমাগম হয়। ১৩ ও ১৪ সেপ্টেম্বর কৌশিকী অমাবস্য়া। এই দুই দিনে কয়েক লাখ ভক্তের সমাগম হয়। কিন্তু অনেকে তারাপীঠে যেতে চান না কারণ খরচ। তাঁরা মনে করেন, তারাপীঠ গেলেই খরচ অনেক। অন্তত কয়েক হাজার টাকা। তবে এই ধারণা ঠিক নয়। মাত্র ২০০ থেকে ২৫০ টাকা খরচে আপনি যেতে পারেন তারাপীঠ। সেখানে মায়ের দর্শন করে আসতে পারেন। আর থাকা খাওয়াও সম্পূর্ণ ফ্রি-তে করতে পারবেন। তারই হালহকিকত জানাব এই প্রতিবেদনে।
আপনারা জানেন যে তারাপীঠ বীরভূম জেলায় রামপুরহাটের কাছে অবস্থিত। রামপুরহাট স্টেশন তো আছেই আবার তারাপীঠ রোড রেল স্টেশনও রয়েছে। অর্থাৎ আপনি ট্রেনে গেলে এই দুই স্টেশনেই নামতে পারবেন। হাওড়া বা দক্ষিণবঙ্গের যে কোনও জেলা থেকে গেলে এই দুই স্টেশনে নামতে পারবেন। যে ট্রেনে আপনি যাচ্ছেন সেই ট্রেন যদি তারাপীঠ রোডে না থামে তাহলে আপনাকে রামপুরহাট স্টেশনে নামতে হবে। আবার যেতে পারেন বাসেও। কলকাতা থেকে গেলে আপনি ধর্মতলা থেকে বাস পাবেন। এছাড় দক্ষিণবঙ্গের যে কোনও জেলা থেকে আপনি বাস পেয়ে যাবেন।
এবার আসি ট্রেনের ভাড়াতে । যদি আপনি হাওড়া বা শিয়ালদা থেকে রামপুরহাট বা তারাপীঠ যান তাহলে ভাড়া পড়বে মাথাপিছু ৮০ থেকে ১০০ টাকা। অর্থাৎ যাওয়া আসার খরচ মাত্র ২০০ টাকা। আবার মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, দুই ২৪ পরগনা ইত্যাদি জেলা থেকে গেলে আপনাকে আরও কম ভাড়া দিতে হবে।
আবার যদি আপনি বাসে যান তাহলে ধর্মতলা থেকে বাস ধরতে পারেন। সেক্ষেত্রে ভাড়া দিতে হবে মাথাপিছু ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা। তবে বাসে পৌঁছতে ট্রেনের থেকে সময় বেশি লাগবে। বাস অনিয়মিতও। তাই ট্রেনে যাওয়া সাশ্রয়ী হবে।
রামপুরহাট তো পৌঁছলেন। সেখান থেকে আপনাকে পোঁছতে হবে তারাপীঠ মন্দিরে। স্টেশন থেকে মন্দিরের দূরত্ব মাত্র ৮ কিলোমিটার। অটো, রিক্সা বা শাটলে পৌঁছে যেতে পারেন মন্দিরে।
তারাপীঠে হোটেল অনেক। প্রতি রুমের ভাড়া ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা। আপনার যেমন বাজেট সেভাবে হোটেল পছন্দ করতে পারবেন। তবে বাজেট অল্প থাকলে বিনা পয়সায় থাকার ব্যবস্থাও রয়েছে। লা খুব সামান্য মূল্যে। তারাপীঠে রয়েছে ভারত সেবাশ্রম সংঘ। সেখানে মাত্র ৫০ টাকা দিলেই আপনি রাত্রিবাস করতে পারেন। আবার রামপুরহাট-তারাপীঠ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রয়েছে। সেখানে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে পর্যটকদের। নামমাত্র খরচে সেখানেও থাকতে পারেন। সুতরাং আপনাকে বিশাল খরচ করে হোটেলে থাকতে হবে না।
অপশন আরও আছে। যেমন, তারাপীঠ-রামপুরহাট উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বীরচন্দ্রপুরকে নতুনভাবে সাজিয়েছে। বীরচন্দ্রপুরে নিত্যানন্দ মহাপ্রভুর জন্মস্থান। সেখানে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী নিতাই বাড়ি, বাঁকারায় মন্দির, জগন্নাথ মন্দির, গৌড়ীয় মঠ, ইসকনের মন্দির, পঞ্চপাণ্ডব, মদনমোহন, শিব সহ বিভিন্ন মন্দির, নিত্যানন্দ, অদ্বৈত আচার্য ও গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর বিগ্রহ। সেখানেও অতিথিশালা রয়েছে। স্বল্প খরচে সেই অতিথিশালাতে থাকতে পারবেন।
অপশন আছে আরও। তারাপীঠের চারপাশে রয়েছে একাধিক গ্রাম। তার মধ্যে অন্যতম হল আটলা। এই গ্রামের দূরত্ব তারাপীঠ থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার। আটলা গ্রামে রয়েছে অনেক হোটেল। সেই সব হোটেলে থাকার খরচও সামান্যই। তারাপীঠে যে হোটেল রুমে নেয় ৫০০ টাকা, সেইরকম হোটেল রুমই আটলাতে পাবেন অর্ধেক টাকায়। তাই সেই গ্রামেও যেতে পারেন। বাড়তি পাওনা গ্রাম্য পরিবেশে থাকা।
তাহলে আর দেরি কেন। এই কৌশিকী অমাবস্যাতেই ঘুরে আসুন তারাপীঠ। এপ্রসঙ্গে বলে রাখা দরকার, যদি আপনি অফ সিজনে যান তাহলে খুব সস্তাতেই হোটেল পেয়ে যাবেন তারাপীঠে।