আগামী বছর রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে তৃণমূলের এটাই শেষ ২১ জুলাই। ধর্মতলায় তৈরি হয়েছে তৃণমূলের শহিদ সমাবেশের ত্রিস্তরীয় মঞ্চ। জেলা থেকে কলকাতামুখী কর্মী-সমর্থকরা। প্রসঙ্গত, ২১ জুলাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক জীবনে এক উল্লেখযোগ্য মাইলস্টোন। ২১ মানেই মমতার কাছে স্মৃতি রোমন্থন, অতীতকে ফিরে দেখা, শহিদদের শ্রদ্ধাজ্ঞাপণ। পাশাপাশি এ দিনের গুরুত্বের কথা বিবেচনা করেই তৃণমূলনেত্রী আগামীতে দলের পথ চলার পথনির্দেশিকাও দেন।
পশ্চিমবঙ্গের হিন্দিভাষীরা বাংলায় কথা বলেন। তা শ্রদ্ধা করি। কিন্তু বাংলা ভাষাকে আক্রমণ করলে ছেড়ে কথা বলা হবে না : মমতা
বাংলায় ভাষা আন্দোলন শুরু হল। ২৭ জুলাই থেকে ভাষা আন্দোলনের ডাক মমতার
মমতা বলেন, 'বিজেপির আমলে ১ কোটিরও বেশি কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। তবে বিজেপির আমল তো সুপার এমারজেন্সি। বাংলায় কথা বলা মানে বাংলাদেশি নয়। সেটাও বুঝতে হব। ওরা বলছে ১৭ লাখ লোকের নাম কাটতে হবে। ওদের জ্ঞান নেই। সোশ্যাল নেটওয়ার্কে অনেক মিথ্যা কথা ছড়ানো হয়। সেগুলো বিশ্বাস করবেন না। বাংলার নিজস্ব সংস্কৃতি আছে।'
মমতা বলেন, 'কথায় কথায় নবান্ন অভিযান করছে বিরোধীরা। আমার বাড়ির দিক অভিযান করছে। এবার থেকে বিজেপি নেতাদের বাড়ির সামনে বসে পড়বেন। এবারের স্লোগান জব্দ হবে, স্তব্ধ হবে।'
এবার থেকে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা সভা করলে পাল্টা করবে তৃণমূল। ওরাই এই পথ তৈরি করে দিয়েছে।
ফের খেলা হবে বললেন মমতা। তাঁর কথায়, 'বাংলা ভাষার সম্মান রক্ষা করা হবে। সর্বধর্ম ঐক্য রাখার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হবে। এবারের খেলায় বোল্ড আউট করতে হবে। ছক্কাও মারতে হবে। আর বিজেপিকে বোল্ড আউট করে সিপিআইএমকে মহাশূন্যে পাঠাতে হবে।'
'ভাষার উপর আঘাত মানব না। তৃণমূলের দর্শন, বিজেপি-বাম বিসর্জন। মহারাষ্ট্রে জোর করে হারিয়েছে। এভাবে ক্ষমতায় এসেছে। বাংলাকে এখন টার্গেট করছে গেরুয়া শিবির। তবে আমরাও জবাব দেব।'
মমতা জানান, 'জগন্নাথ দেবের ধামের মতো দুর্গাঅঙ্গন হবে বাংলায়। আগের থেকে বাংলার মানুষ ভালো আছে। ২৭ জুলাই নানুর দিবসের দিন থেকে বাংলা ভাষার উপর যে সন্ত্রাস, অপমান তার প্রতিবাদে মিছিল করুন।'
মমতা বলেন, 'অনুপ্রবেশকারী কেন্দ্র ঢোকায়। কারণ তাদের হাতেই তো বিএসএফ, সিআইএসএফ। একদিন চ্যালেঞ্জ হয়ে যাক, কত লোককে জেলে জায়গা দিতে পারেন, সেটাই দেখব। ২০২৬-এ জিতবেন তো?' প্রশ্ন মমতার।
মমতার কথায়, 'বিজেপি বদলে যাবে। তবে তৃণমূল একই থাকবে। কারণ, আমরা মানুষের সঙ্গে আছি। লড়াই করতে হবে। সাধারণ মানুষই সৈনিক আমাদের। সেজন্য লড়াই করতে হবে। তৃণমূল যখন জন্ম নিয়েছিল বলেছিলেন গোরুতে খেয়ে নেবে। তবে তৃণমূলকে শেষ করা অত সহজ নয়। সোশ্যাল মিডিয়াতে তারা বাড়বেন। কিন্তু ভোটের বাক্সে শূন্য হবেন। কাউকে চোর বললে এবার থেকে পাল্টা আন্দোলন করতে হবে। বাংলায় আমার পোস্টার ছেড়া হয়েছে।'
মমতার কথায়, 'প্রয়োজনে ফের ভাষা আন্দোলন হবে। ভারতবর্ষ কোথায় এসে ঠেকেছে। আপনাদের নিয়ন্ত্রণ করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। কেন পাক অধিকৃত কাশ্মীর দখল করতে পারলেন না?'
'বাংলায় ৩০ শতাংশ মুসলমান, ২৬ শতাংশ তপশিলি। তারা হিন্দু নয়? আমি সাগরিকাদের টিমকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি তারা যমুনানগরে গিয়েছিল। পহেলগাঁওয়ে আমাদের দল গিয়েছিল। হিমন্ত বিশ্বশর্মাকে হুঁশিয়ারি, নাক গলাবেন না বাংলা নিয়ে। না হলে আন্দোলন হবে। আমরাও যাব অসমে। আন্দোলন করব।' বলেন মমতা।
মমতার দাবি, 'সবথেকে বেশি কাটমানি খাই বিজেপি। আগে সিপিএম খেত। ২০২৬ সালে আরও অনেক বেশি সিট নিয়ে জিততে হবে। তারপর দিল্লিতে লড়াই করতে হবে।'
'বাংলা যা করতে পারে অর কেউ পারে না। ডবল ইঞ্জিন সরকার ভাঙতে হবে। সিপিআইএম-কে সরাতে হবে। আমরা মানুষকে অসম্মান করি না। লক্ষ লক্ষ মানুষ এখানে আসতে পারেনি। বাংলা ভাষা বলবার জন্য যদি গ্রেফতার করা হয় তাহলে ছেড়ে কথা বলা হবে না। আমি ধরলে ছাড়ি না। আমার লেখা বই পড়ুন। তাহলে অনেক কিছু জানতে পারবেন। তৃণমূল কংগ্রেস অনেক লড়াইয়ের ফসল।' বলেন মমতা।
'দিল্লিতে যমুনানগরে বাঙালিদের বিদ্যুতের সংযোগ কেটে দেওয়া হয়েছিল। অথচ ভোটের আগে দলিত, মতুয়াদের বাড়ি যান বিজেপি নেতারা। খেলোয়াড়ের উপর অত্যাচার করা হল। সেউ ব্রিজভূষণকে ভোটে টিকিট দেওয়া হল। ওরা বলে বাংলায় কাজ নেই বলে সবাই বাইরে চলে গেছে। ২০১৪ থেকে ১৮ সালে ২৩ হাজার লোক দেশ ছেড়েছে। ২০২৪ সালে ৪ হাজার ৩০০ লোক দেশ ছেড়ে গিয়েছে। বাংলা থেকে কোনও শিল্পপতিতে পালাতে হয়নি। কারণ বাংলায় ব্যবসা বাড়ছে, তাজপুর বন্দর, স্কাইওয়াক, কঙ্কালিতলা হয়েছে। গোটা বাংলাজুড়ে কাজ হয়েছে।' বলেন মমতা।
মমতার দাবি, 'বাংলা ভাষায় কথা বললে বিজেপি ভয় পায়। বাংলাতে মণীষীরা জন্মেছেন। সেজন্য ওরা বাংলাকে ভয় পায়। জাতীয় সঙ্গীত, বন্দেমাতরম, জয়হিন্দ সব বাংলা থেকে জন্মেছে। বাংলার লোকেদের প্রতি আপনাদের কোনও সম্মান নেই। বিহারে ৪০ লাখেরও বেশি মানুষের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। বাংলায় তেমন হলে আমরা ঘেরাও করব। আন্দোলন হবে।'
'অসম থেকে রাজবংশী ভাই উত্তমকে এনআরসি নোটিশ পাঠিয়েছে। এর জবাব কী আছে কেন্দ্রীয় সরকারের? এখানে দুই ছাত্রীর উপর অত্যাচার হয়েছে। আমরা পদক্ষেপ করেছি। কিন্তু ওড়িশায় ছাত্রী সম্মান রক্ষা করতে গিয়ে রাস্তায় পুড়িয়ে মেরেছে। উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, মালদা, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার-সব জেলার মানুষকে জেলে ভরে দিচ্ছেন? গণতান্ত্রিকভাবে মানুষ জেলে ভরে দিলে তখন কী করবেন? ব্যাঙ্কে ১৫ লাখ টাকা দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেটা তো পূরণ করেনি এই সরকার।' বললেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়।
'ওরা বলছে বাংলা ভাষায় নাকি কথা বলা যাবে না। তবে বাংলা এসব মানবে না। সব মানুষের অধিকার এখানে সংরক্ষিত থাকবে।' বলেন মমতা।
মমতা বলেন, 'বিজেপির চক্রান্ত চলছে। নির্বাচন কমিশন চক্রান্ত করছে। বিজেপি যে চক্রান্ত করেছে তার কথা কেউ তুলে ধরে না। এই সার্কুলার বিজেপি শাসিত রাজ্যে পাঠানো হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, সন্দেহবশত কাউকে এক মাস জেলে রাখা যেতে পারে। প্রায় ১ হাজার লোককে গ্রেফতার করা হয়েছে। জুলাই মাসে আর একটা চিঠি পাঠিয়েছে কেন্দ্র। আমাদের কাছে যেটা লেটেস্ট এসেছে সেখানে বলেছে নোডাল অফিসার তৈরি করতে।'
'জগন্নাথ ধাম, কালী মন্দির ও ফুরফুরা শরিফের উন্নয়ন করা হয়েছে। সর্বধর্ম সমন্বয়ের নীতি মেনে চলি। ১২ লক্ষ সেল্ফ হেল্প গ্রুপ করা হয়েছে। ২ কোটি মানুষকে দারিদ্র সীমার উপরে আনা হয়েছে।'
৯৪টা সরকারি প্রকল্প চলছে। এর মধ্যে স্বাস্থ্য সাথী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারর মতো প্রকল্প আছে। ৪০ শতাংশ বেকারত্ব কমানো হয়েছে। বিজেপি বলেছিল ২ কোটি চাকরি দেবে। পারেনি। বাংলায় কর্মশ্রী হয়েছে। ৭৭ লাখ জবকার্ড হোল্ডার কাজ পেয়েছেন। ২ কোটি ২০ লক্ষের বেশি মানুষ কাস্ট সার্টিফিকেট পেয়েছেন। লাখ লাখ মানুষকে নানা প্রকল্পের সুবিধা দেওয়া হয়েছে। ৮ কোটি ৭২ লক্ষ মানুষকে স্বাস্থ্য সাথী দিয়েছি। পাট্টা দেওয়া হয়েছে। এরকম অনেক প্রকল্প আছে। বাংলার বাড়ি আগে হয়েছিল ৪৫ লক্ষ। ১২ লক্ষ দেওয়া হয়েছে। ডিসেম্বরে ১৬ লক্ষ দেওয়া হবে। বিধবা ভাতা দেওয়া হয়েছে ২০ লক্ষ ৬৪ হাজার।
'এই দিনটি গত ৩৩ বছর ধরে পালন করে আসছি। ১৯৯৩ সাল থেকে মা-মাটি-মানুষ ও গণতান্ত্রিক দিবস হিসেবে পালন হচ্ছে। ১৩টি প্রাণ নিজেদের শহিদ করে সেদিন গণতন্ত্রকে জিতিয়েছি। সেই সংগ্রাম আজও চলছে। যেদিন বিজেপিকে দিল্লির ক্ষমতা থেকে সরাতে পারব সেদিন আমাদের আন্দোলন থামবে। বামেদের কথা বলব না। ওরা অপপ্রচার করছে। এখন রাম-বাম-শ্যাম একসঙ্গে কাজ করছে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে।'
সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, একুশের জুলাইয়ের শহিদদের পরিবারের সদস্যদের সম্মান জানালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রতীক্ষার অবসান। মঞ্চে বক্তব্য রাখতে উঠলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে এটাই শেষ ২১ জুলাই।
আমরা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করি না। মানবতা হল তৃণমূলের ধর্ম। ২৬ সালে বিজেপিকে শূন্য করতে হবে। সেটাই লক্ষ্য।
ইডি ও ইলেকশন কমিশনকে কাজে লাগাচ্ছে বিজেপি। ইডি-কে দিয়ে গ্রেফতার করাচ্ছে আর কমিশনকে দিয়ে ভোটার কার্ডে কারচুপি করাচ্ছে। বাংলা ভাষাকে বিজেপি অপমানিত করছে। আমরা বৈষম্যের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। আমরা বৈচিত্রের মধ্যে একতার মন্ত্রে বিশ্বাস করি। আমাদের মাটিতে দুর্গা, কালী পুজো হয়। রামনবমীও হয়। ইদও পালন করি। যে আগুন নিয়ে খেলবে তারা নিজেরাই ধ্বংস হয়ে যাবে। কর্মীদের বলছি, এক ইঞ্চি জায়গাও ছাড়বেন না। আত্মতুষ্টিতে ভুগবেন না। দেখি এদের কত ক্ষমতা। বাংলার মানুষকে ডিটেনশন ক্যাম্পে নিয়ে যেতে চায়। ৭০ টা বিধানসভায় জিতে আর ১২ লোকসভায় জিতে দিল্লিতে বাঙালিদের উপর অত্যাচার করা হচ্ছে। বস্তি, ঝুপড়ি থেকে বাঙালিদের তাড়ানো হচ্ছে।
আগে জয়শ্রীরাম বলত। এখন বলছে জয় মা দুর্গা। আমি বলছি ২১৬ সালের পর জয় বাংলা বলাব ওদের। এখন তো ওরা জয়মা দূর্গা বলছে। ওদের বলাতে হবে। অথচ ওরা দুর্গাপুজোর বিরোধীতা করে এসেছে। বাংলা পথ দেখিয়েছে দেশকে। পদ্মফুল উপড়ে ফেলা হবে। যে কজন আবর্জনা রয়েছে তারা শপথ নিন। নিজের বুথে ফিরে কাজে নেমে পড়ুন। মানুষের মধ্যে প্রচার করুন। তাঁদের জানান, কীভাবে বাঙালিদের উপর অত্যাচার করা হচ্ছে। বাংলায় কথা বললে অত্যাচার করা হচ্ছে। হিমন্ত বিশ্বশর্মা বাংলায় কথা বললে তাঁদের সন্ত্রাসবাদী বলা হচ্ছে। তাঁর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। এবার তো সংসদে আমরা বাংলায় কথা বলব। গলা টিপে দিলেও জয় বাংলা বেরোবে।
আমরা ব্রিগেডে দেখিয়ে দিয়েছিলাম তৃণমূলের শক্তি। এই বিজেপিকে বাংলা বিরোধী প্রথম বলেছেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়। যে বিজেপি ১৯ সালের ভোটে এই উত্তর কলকাতায় বিদ্য়াসাগরের মূর্তি ভেঙেছিল, রবীন্দ্রনাথকে বামপন্থীদের বলে, যে বিজেপির নেতারা লড়াইয়ে জিততে না পেরে বাংলাকে ভাতে মারার চেষ্টা করে তারা বাংলা বিরোধী। আমি আগের মাসে ডায়মন্ডহারবারে বলেছিলাম ৫০ টা সিট পেরোবে না বিজেপি। আমি ভবিষ্যৎ করি না কারও। যে কজন আছে বিরোধী তাদের ঝেঁটিয়ে বিদায় করতে হবে। আজ থেকে ৩২ বছর আগে নির্বাচনের সচিত্র পরিচয়পত্র নিয়ে আন্দোলন হয়েছিল। এবারও ভোটার কার্ড নিয়ে কারচুপি করতে দেব না। প্রয়োজনে প্রাণ দেব। দিল্লিতে আন্দোলন গড়ে তুলব।
ধর্মতলার বুকে ইতিহাস তৈরি হল। এই ভিড় গত বছরের একুশে জুলাইকে ছাপিয়ে গেছে। এটাই এই দিনের বৈশিষ্ট্য। বিজেপি ও তৃণমূল সম্মুখ সমরে লড়াই করছে। কিন্তু বিজেপির কাছে একাধিক এজেন্সি, সিবিআই, ইডি, নির্বাচন কমিশনের একটা অংশ থাকলেও তৃণমূলের মতো কর্মী নেই বিজেপির। আগামী ১০০ বছরেও তৈরি হবে না। সকাল থেকে বসে, দাঁড়িয়ে রয়েছেন কর্মীরা। তাঁগের নমমস্তকে কুর্নিশ।
মঞ্চে বক্তব্য রাখতে উঠলেন অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্যায়। এরপর বক্তব্য রাখবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রতিবারের মতো এবারও একুশের মঞ্চে সঙ্গীত পরিবেশন করলেন নচিকেতা চক্রবর্তী। যখন সময় থমকে দাঁড়ায় গানটি গাইলেন তিনি।
একুশের মঞ্চে উপস্থিত শহিদ জওয়ান ঝন্টু আলি শেখের বাবা ও পহেলগাঁওয়ের বিতান অধিকারীর বাবা ও মা। তাঁদের শ্রদ্ধা জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়। তাঁদের হাতে এক লাখ টাকা করে সাহায্য তুলে দেন মমতা।
ধর্মতলায় ২১ মঞ্চে উপস্থিত হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মঞ্চে এলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। তিনি আসামাত্র তাঁকে স্বাগত জানান, তৃণমূলেন নেতারা। উঠে দাঁড়ান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা দলের নেতাদের সঙ্গে দেখা করেন। জনতার উদ্দেশে হাত নাড়ান।
আজকের সভা ঐতিহাসিক, বললেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। তাঁর কথায়, 'মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিকনির্দেশ করবেন। তাঁর কথামতো আমরা লড়ব। ২০২৬ সালে বিজেপি-কে ছাব্বিশে নামিয়ে আনব। কারণ ওরা বাংলা বিরোধী, বাংলা ভাষা বিরোধী। বিজেপি বাংলাকে শেষ করতে চাইছে। আমাদের হকের টাকা দিচ্ছে না কেন্দ্রীয় সরকার। এক লক্ষ ৯৭ হাজার কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। তবে উন্নয়ন থামেনি। ৯৪ টা সামাজিক প্রকল্প চলছে। কেন্দ্রীয় সরকার চক্রান্ত করলেও তারা বারবার ব্যর্থ হয়েছে। বাংলা বললে গ্রেফতার করা হচ্ছে বিভিন্ন রাজ্যে।'
অরূপ বিশ্বাস: কেন্দ্রীয় সরকারকে জানিয়ে দিতে চাই, আমাদের প্রাপ্য টাকা আটকে রাখ, বাংলার উন্নয়ন আটকে রাখা যাবে না। কারণ কথায় আছে, যে খায় চিনি, জোগায় চিন্তামণি।
বিজেপিকে আক্রমণ ফিরহাদের আক্রমণ, 'বাংলাকে অপমান করবেন না। বাংলা যদি ভারতের স্বাধীনতা আনতে পারে। তাহলে নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে উৎখাত করার ক্ষমতা আছে বাংলার। বাংলার বিজেপি হল ছাগলের তৃতীয় বাচ্চা। এদের কোনও সংগঠন নেই।'
'জয় বাংলা' স্লোগান দিয়ে বক্তব্য শুরু করলেন ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেন,'বিজেপি যেদিন থেকে বাংলায় এসেছে সেদিন থেকে বাংলায় সাম্প্রদায়িক উস্কানি বেড়েছে। আমাদের দল থেকে একজন পাল্টু চাচা ওইদিকে গিয়েছে। সে এখন সাম্প্রদায়িক। এই বাংলা স্বামী বিবেকানন্দের, রামকৃষ্ণের বাংলা। ৫০ হাজার ছেলে গুলি খেয়ে মারা গেছে এই বাংলায়। ২১ জুলাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন। আরও দরকার হলে রক্ত দেব। মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ের আদর্শ হল অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করা। আজকের লড়াই বাঙালি অবমাননার লড়াই। যেখানে যেখানে ডবল ইঞ্জিন সরকার সেখানেই সমস্যা হচ্ছে। বাংলাভাষাতে কথা বললেই বাংলাদেশি বলা হচ্ছে। এই মাটিতেই আমার কবর হবে। যাদের যাদের উপর বাংলায় অত্যাচার হচ্ছে গর্জে উঠুন। আমাদের শ্রমিকরা অনেকে বাইরে যায়। একইভাবে অন্য রাজ্যের অনেকে এখানে থাকে। আমরা একসঙ্গে থাকি।'
মেঘালয়ের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা তৃণমূলের মঞ্চে বক্তব্য রাখলেন। বললেন, অসমের মাটির কথা ভাল ভাবে তুলে ধরেছেন সুস্মিতা। মেঘালয়ের জন্যও এটা প্রযোজ্য।
'আমাদের থেকে একজন পাল্টু চাচা ওইদিকে গেছে, সে আচমকা সাম্প্রদায়িক হয়ে গেছে। এটা রামকৃষ্ণ, রবীন্দ্রনাথ ও বিবেকানন্দের বাংলা। আমরা বাংলার মানুষের পাশে আছি।'
তৃণমূলের উত্তরপ্রদেশের নেতা ললিতেশ ত্রিপাঠী মঞ্চে বক্তব্য রাখলেন। তিনি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘তাড়াাড়ি বাংলা শিখে নেব। বাংলায় বলতে চাই। আমাকে লোকসভা ভোটে লড়ার সুযোগ দিয়েছে তৃণমূল। আমি মমতা-অভিষেকের হাত শক্ত করার জন্য লড়াই করেছি। এ বারে হয়নি। আমি উত্তরপ্রদেশ থেকে তৃণমূলের প্রথম সাংসদ হয়ে দেখাব।'
সভাস্থলের দিকে রওনা দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিছুক্ষণ পরেই ২১ মঞ্চ থেকে ভাষণ দেবেন তিনি।
একুশের মঞ্চে বক্তব্য রাখছেন উত্তরপ্রদেশের তৃণমূল নেতা ললিতেশ ত্রিপাঠী। তিনি বলেন, 'আমি শহিদদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি সম্মান জানাচ্ছি। তিনি আমাকে দলে এনেছেন। আমি এখনও বাংলা শিখতে পারিনি। সেজন্য ক্ষমাপ্রার্থী। আমি উত্তরপ্রদেশ থেকে তৃণমূলের টিকিটে লড়েছিলাম। উত্তরপ্রদেশে ঘাসফুল ফোটাতে চাই। ২০২৯ সালে উত্তরপ্রদেশ থেকে জিতব। এই কথা দিয়ে যাচ্ছি।
২১ জুলাইয়ের মঞ্চে এসে উপস্থিত হলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
একুশে জুলাইয়ের সমাবেশে যোগ দিতে ধর্মতলায় পৌঁছে গেলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
ভারতীয় জনতা পার্টি অসম রাজ্যের অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে কী পদক্ষেপ করেছে? এই প্রশ্ন করতে চাই বিজেপি-কে। অসম রাজ্য এনআরসি মেনে নিয়েছিলাম। তার ঐতিহাসিক কারণ ছিল। আমরা টানা ৬ বছর কাগজ দেখিয়েছি। তাতেও সমাধান হয়নি। ২০১৯ সালের এনআরসি-তে ১৯ লাখ বাদ পড়েছিল। এদের মধ্যে হিন্দু বাঙালি, মতুয়া, বৌদ্ধরা ছিল। ২০২৬ সালে মমতাকে জেতাতে হবে। না হলে বাংলা ভাষাকে নিষিদ্ধ করবে ভারতীয় জনতা পার্টি। বললেন সুস্মিতা দেব।
'বিজেপি সরকার বিভাজনের রাজনীতি করছেন। প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই, অসমে শুধু মিথ্যার রাজনীতি করেছেন। এই দেশের ইতিহাসে আছে, এই দেশের সবথেকে বড় ডিটেনশন ক্যাম্প অসমে রয়েছে।'
আমি অসমের। রাজ্যসভায় জায়গা দেওয়ার জন্য মমতা ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ। অসমের বাসিন্দা হিসেবে বলতে বাধ্য, অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে সবথেকে বেশি রাজনীতি হয় অসমে।
২১ জুলাই কর্মসূচিতে মানুষের অংশগ্রহণ নজর কেড়েছে।
ধর্মতলায় ব্যাপক ভিড়। ছাব্বিশের ভোটের আগে শেষ একুশে জুলাই জনসভায় তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তা শুনতে মানুষের ঢল। রাজ্যের মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা বললেন, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে আদিবাসীদের উপর অত্যাচার চলছে। একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারেই আদিবাসীরা শান্তিতে বাস করছেন। আদিবাসীদের উন্নয়ন হচ্ছে।
ধর্মতলায় লক্ষাধিক জনতা, ছবি পোস্ট করে দাবি তৃণমূলের।
সকাল থেকে ধর্মতলা চত্বরে ক্রমেই বাড়ছে ভিড়।
#WATCH | Kolkata, West Bengal: CM Mamata Banerjee will address the Shaheed Diwas rally. The rally commemorates the death of several youths in 1993 after police opened fire at the protestors demanding that voter IDs be made the sole document required for voting. pic.twitter.com/lGsAJZ2L1v
— ANI (@ANI) July 21, 2025
শহিদ সমাবেশের আগে যান নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সন্তুষ্ট, কলকাতা পুলিশকে সার্টিফিকেট হাইকোর্টের। সোমবার সকালে রাস্তার হাল নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে আদালত।
রবিবার রাত থেকেই ধর্মতলায় দলীয় কর্মী-সমর্থকরা আসতে শুরু করেছিলেন। বেলা যত গড়িয়েছে লোকও বাড়তে শুরু করেছে। সভা শুরু হবে আর কিছুক্ষণ পরেই। এবার সভাস্থলে আসতে শুরু করেছেন তৃণমূলেন শীর্ষস্থানীয় নেতারা। অতীন ঘোষ, সুজিত বসু, শশী পাঁজা ইতিমধ্যেই পৌঁছেছেন।
শহিদ সমাবেশের আগে ফেসবুকে নিজের বার্তা শেয়ার করলেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ফেসবুকে তিনি লেখেন, ‘শহিদ দিবসে আমরা স্মরণ করি: বুলেট শরীরকে হত্যা করতে পারে, কিন্তু বিশ্বাসকে নয়। স্বৈরাচার বাংলার চেতনাকে চূর্ণ করতে পারে না।'
শহরের একাধিক জায়গায় গণপরিবহণ না মেলার অভিযোগ। শিয়ালদহ, মৌলালি, শোভাবাজার এলাকায় বাস, অটো অমিল বলে অভিযোগ করছেন একাধিক যাত্রীর। এদিকে, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে সকাল ১১টার পর থেকে ফের বিভিন্ন প্রান্তের মিছিল ধর্মতলামুখী হয়েছে।
তৃণমূলের ২১ জুলাই নিয়ে খোঁচা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারের। বললেন, এটাই TMC-র শেষ শহিদ দিবস।
#WATCH | Kolkata, West Bengal: On the TMC Shaheed Diwas rally, Union Minister Sukanta Majumdar says, "This is the last 21 July of Trinamool Congress, which they are observing while in power. This was the Shaheed Diwas of the Congress; they have stolen it from them. In the coming… pic.twitter.com/8SV0h3eX2a
— ANI (@ANI) July 21, 2025
তৃণমূলের যে সভা হচ্ছে সেটা আসলে শহিদ দিবসের সভা নয়। ওটা পাগলু ডান্সের সভা। জোর করে লোকজনকে আনা হচ্ছে। হাওড়া স্টেশন থেকে অনেকে পালিয়েছেন।
উত্তরবঙ্গ যাওয়ার পথে তৃণমূল কংগ্রেসের একুশে জুলাইয়ের সভাকে তীব্র কটাক্ষ করলেন। বললেন, 'ওটা সভা নাকি! ওটা তো পাগলু ডান্স। দেখছেন না, কীকরম নাচতে নাচতে যাচ্ছে সব। বেশির ভাগ লোককে তো জোর করে এনেছে। পুরুলিয়া থেকে যাঁদের এনেছিল, সবাই সকালেই আবার পুরুলিয়া ফিরে গিয়েছেন। জোর করে আনা লোক দিয়ে সভা।'
প্রতিবারের মতো এবারেও ধর্মতলার পথে বিভিন্ন সাজে দেখা গেল উৎসাহী তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের। কাউকে কাউকে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো সাজেও দেখা গেল।
বাঙালি অস্মিতা ও বাঙালিদের উপর হেনস্থা নিয়ে সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওদিকে বিজেপি-র দাবি, বাঙালি অস্মিতা আসলে ভাঁওতা। মুর্শিদাবাদের একুশে জুলাই মিছিলের একটি ভিডিও পোস্ট করে বিজেপি-র দাবি, ভোজপুরী ও হিন্দি গান বাজানো চলছে। ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করেনি bangla.aajtak.in।
Today, Mamata Banerjee will try to mislead Bengalis in the name of paying tribute to the martyrs, so the TMC has already begun preparations.
— BJP West Bengal (@BJP4Bengal) July 21, 2025
Meanwhile, from Murshidabad, TMC buses have started arriving, blasting everything from Hindi songs like Chikni Chameli to Bhojpuri tracks… pic.twitter.com/dYUkvmKoRY
ধর্মতলায় অনুষ্ঠিত মেগা সমাবেশে ১ লক্ষেরও বেশি লোকের সমাগম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যেই উত্তরবঙ্গ থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ কলকাতায় পৌঁছেছেন।
হাতেগোনা বাস চলছে মধ্য কলকাতায়, সেগুলিতে প্রচুর ভিড়। অনেকে উঠতে পারছেন না। শিয়ালদহ থেকে মৌলালির রাস্তায় যানজট
তৃণমূলের সমাবেশের জেরে রাস্তায় নেমে নাকাল নিত্যযাত্রীরা। ক্যাব, অটো, যাত্রীবাহী বাস রাস্তায় সেভাবে মিলছে না। ফলে শহরের প্রধান প্রধান সড়কে সাধারণ মানুষের ভিড়। অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করেও মিলছে না যানবাহন।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাওড়া স্টেশনে ভিড় বাড়ছে TMC কর্মী সমর্থকদের। সেখান থেকে হাওড়া ফেরিঘাটে যাচ্ছেন। লঞ্চে করে রওনা দিচ্ছেন। অনেকে আবার পায়ে হেঁটেই পাড়ি দিচ্ছেন ধর্মতলার উদ্দেশে। দলীয় কর্মীদের সহায়তার জন্য হাওড়া স্টেশনে হেল্প ডেস্কও খুলেছে তৃণমূল কংগ্রেস।
আগামী বছরেবিধানসভা নির্বাচন, তৃণমূলের লক্ষ্য বিরোধীদের পর্যুদস্ত করে নবান্নের মসনদ আবারও নিজেদের দখলে রাখা। এই লক্ষ্য পূরণের ক্ষেত্রে কোন কোন অস্ত্রে লড়বে জোড়াফুল শিবির? সেই দিশাই আজ দেখাবেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। নেত্রীর বার্তার অপেক্ষায় কর্মী সমর্থকেরা।
বিভিন্ন জেলা থেকে যে কর্মী-সমর্থকেরা ধর্মতলার উদ্দেশে যাচ্ছেন তাঁদের জন্য পানীয় জল ও খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শিয়ালদা চত্বরে রাস্তাতেই রান্না চলছে।
কলকাতায় বাস কম চলছে। তবে এখনও পর্যন্ত যানজট সে ভাবে চোখে পড়েনি। কিন্তু বাসে ভিড় চোখে পড়ার মতো। তৃণমূল কর্মীদের পাশাপাশি রাস্তায় আছেন তারকেশ্বরগামী পুণ্যার্থীরাও। কারণ আজ শ্রাবণ মাসের প্রথম সোমবার। প্রচুর পরিমাণে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে রাস্তার মোড়ে মোড়ে।
কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশের পর নদিয়ার পলাশিতে ২১ জুলাই পালন করবে কংগ্রেস।
২১ জুলাইয়ের সভাকে কেন্দ্র করে শহরে ভিড় রয়েছে। তবে মধ্য কলকাতায় যানজট নেই এখনও। ধর্মতলা, রাজভবনের দিক থেকে মা উড়ালপুলের দিকের রাস্তায় ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণে। শেক্সপিয়ার সরণি অন্যান্য় দিনের তুলনায় ফাঁকা। একাধিক রাস্তায় পুলিশ ব্যারিকেড করে দিয়েছে। গাড়ি অন্যত্র ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে অন্যান্য দিনের তুলনায় রাস্তায় বাস বা বেশ কম। এর ফলে সাধারণ মানুষকে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
শহিদ দিবসে তাঁকে তৃণমূল কংগ্রেসের মঞ্চে দেখা যেতে পারে বলে জল্পনার মধ্যেই ফের গোটা বিষয়টি অস্পষ্ট রাখলেন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তৃণমূল কংগ্রেসকে রীতিমতো কটাক্ষ করে বললেন, এটাই তৃণমূল কংগ্রেসের অন্তিম শহিদ দিবস। এরপর তৃণমূল দলটাই শহিদ হয়ে যাবে।
সকাল থেকেই ধর্মতলা চত্বর সরগরম। ভোর থেকেই সভা চত্বরে ভিড় জমিয়েছেন কর্মী সমর্থকেরা। তবে বাস কম চলছে শহরে। ফলে বাসে নিত্যযাত্রীদের ভিড়ও চোখে পড়ার মতো।
যানজটে জেরবার হলে ১০৭৩, ৯৮৩০৮১১১১১, ৯৮৩০০১০০০০ নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে কলকাতা পুলিশের তরফে।
হাওড়া এবং শিয়ালদা স্টেশনে সোমবার সকাল থেকে তৃণমূল সমর্থকদের ভিড়। বিভিন্ন জেলা থেকে তাঁরা ট্রেনে কলকাতায় পৌঁছোচ্ছেন। ধর্মতলায় ভিড় বাড়তে শুরু করেছে। রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা কলকাতায় আসছেন।
২১ জুলাইয়ের কর্মসূচিতে যোগ দিতে জেলা থেকে কর্মী-সমর্থকদের ভিড় কলকাতায়। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কর্মী-সমর্থকরা হাজির হচ্ছেন ধর্মতলায়।
২১ জুলাই তৃণমূলের শহিদ দিবসেই উত্তরকন্যা অভিযানে বিজেপি, হাইকোর্টের অনুমতি নিয়ে বিজেপি যুব মোর্চার এই উত্তরকন্যা অভিযান। সামিল হবেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
শিয়ালদা থেকে এজেসি বোস রোড, এস এন ব্যানার্জি রোড হয়ে ধর্মতলা আসবে একটি মিছিল। হাওড়া ব্রিজ থেকে ব্রেবোর্ন রোড, ডালহৌসি হয়ে ধর্মতলা আসবে মিছিল। পার্ক সার্কাস সেভেন পয়েন্ট থেকে সিআইটি রোড, মৌলালি, এস এন ব্যানার্জি রোড হয়ে ধর্মতলা। হাজরা মোড় থেকে আশুতোষ মুখার্জি রোড, জওহরলাল নেহরু রোড হয়ে ধর্মতলা ফ্রি স্কুল স্ট্রিট, রিপন স্ট্রিট থেকে জওহরলাল নেহরু রোড হয়ে ধর্মতলা। শ্যামবাজার থেকে এপিসি রোড, শিয়ালদা ফ্লাইওভার পেরিয়ে এজেসি বোস রোড, মৌলালি হয়ে ধর্মতলা আসবে মিছিল। বিবেকানন্দ রোড, পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিট, গিরিশ পার্ক থেকে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ হয়ে ধর্মতলা আসবে একটি মিছিল।
সমস্যায় পড়লে কলকাতা পুলিশের ৩টি হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করা যাবে। ৩টি টোল ফ্রি নম্বর 1073, 98308-11111, 98300-10000.
পণ্যবাহী গাড়ি শহরে নিষিদ্ধ ভোর - ৩টে থেকে রাত ৮টা। বেশ কিছু রাস্তায় যাত্রিবাহী যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ - ৪টে থেকে রাত ৯টা। পার্কিং নিষিদ্ধ - হেস্টিংস ক্রসিং, ক্যাসুরিনা অ্যাভিনিউ, ক্যাথিড্রাল রোড, লাভার্স লেন, হসপিটাল রোডে। শহরের ২২ টি স্থানে জমায়েতের সম্ভাবনা। প্রতিটি স্থানে থাকবেন একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার পদমর্যাদার অফিসার। মিছিলের শুরু ও শেষে থাকবে পুলিশ বাহিনী।
সভামঞ্চের নিরাপত্তার জন্য ধর্মতলার ২০টি উঁচু বিল্ডিং থেকে নজরদারি চালাবে পুলিশ। মঞ্চের আশেপাশে থাকছে ৪০টিরও বেশি সিসিটিভি ক্যামেরা। থাকছে ১৮টি অ্যাম্বুল্যান্স ও ৬টি কুইক রেসপন্স টিম। পাশাপাশি অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা। দমকলের ইঞ্জিন ছাড়াও থাকছে মোবাইল কন্ট্রোল রুম ভ্যান ও দমকলের মোটরসাইকেল।
তৃণমূল কংগ্রেসের শহিদ দিবস পালন করা হয় ধর্মতলায়। কলকাতা প্রায় প্রাণকেন্দ্র এই ধর্মতলা। ১৯৯৩ সালের পর থেকে প্রতিবছরই এই দিনটি গুরুত্ব দিয়ে পালন করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২১ জুলাই বর্তমান রাজ্য সরকারও গুরুত্ব দিয়ে পালন করে। তবে এই বিষয়ে অর্থ দফতর কোনও ছুটি ঘোষণা করেনি। রাজ্য সরকারের সমস্ত দফতরই খোলা থাকবে। ২১ জুলাই উপলক্ষ্যের কলকাতার কয়েকটি স্কুল বন্ধ রাখার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। কিছু স্কুল অনলাইন ক্লাসের ঘোষণা করেছে। যানজটের জন্যই এই ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এবার একুশে জুলাই সমাবেশের মূল মঞ্চটি ত্রিস্তরীয় এবং আড়ে-বহরে অনেকটা বড়। ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে তিন ধাপে তৈরি মঞ্চে বসবেন শীর্ষ নেতৃত্ব, অতিথি, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, শহিদ পরিবারের সদস্যরা। প্রথম মঞ্চটি মাটি থেকে ১১ ফুট উঁচু, দ্বিতীয় ও তৃতীয়টির উচ্চতা যথাক্রমে ১২ ও ১৩ ফুট। মঞ্চের দৈর্ঘ্য ৮০ ফুট, প্রস্থ ৪২ ফুট। গোটা মঞ্চ ঘিরে ফেলা হয়েছে দলীয় পতাকা তেরঙ্গার রঙে। তিনটি মঞ্চের প্রথমটিতে থাকবেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের প্রথম সারির শীর্ষ নেতারা। দ্বিতীয় মঞ্চে থাকবেন শহিদ পরিবারের সদস্যরা। আর মঞ্চের তৃতীয়ভাগে থাকবেন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা।