নিজের অবস্থান থেকে অবশেষে সরে দাঁড়িয়ে সুর বদল অভিনেতা তথা তৃণমূল বিধায়ক কাঞ্চন মল্লিকের। সোমবার দিনভর সমালোচনার পর রাত নামতেই ক্ষমা চাইলেন উত্তরপাড়ার বিধায়ক তথা অভিনেতা কাঞ্চন মল্লিক। আরজি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিতর্কিত মন্তব্য করে তোপের মুখে পড়ত হয়েছিল তৃণমূল বিধায়ককে।
কী বললেন কাঞ্চন?
৬ মিনিটের ভিডিয়োয় বারবার কাঞ্চনকে বলতে শোনা গেল, “আমি লজ্জিত, আমি ক্ষমাপ্রার্থী।” সোমবার রাতে টি ভিডিও পোস্ট করেন কাঞ্চন মল্লিক বলেন, 'গতকাল (রবিবার) একটি ধর্নামঞ্চে আমি কিছু মন্তব্য করে ফেলি যার জন্য সেটা অত্যন্ত সমালোচিত হয় এবং আমি সেই কারণেই আজকে এই ভিডিওটা করছি। প্রথমেই আপনাদের জানাই যে আমি যা বলেছি তার জন্য আমি অত্যন্ত লজ্জিত ও দুঃখিত এবং আমি কোনও সাফাই গাওয়ার জন্য আজকে এই ভিডিওটা করছি না। বিশ্বাস করুন, অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে আমি বলছি যে এই ১৮টা দিন, সত্যি বলতে আমারও বাড়িতে মা ছিলেন, আমার স্ত্রী আছেন, সন্তান আছে, এবং আমার বাড়িতে একজন অসুস্থ বৃদ্ধ আছেন যাঁকে মেডিক্যাল সাপোর্ট দিতে হয়। আমি জানি যে আমার কাছে ডাক্তারের প্রয়োজন কতটা। এই কদিনে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু মানুষ আমার কাছে এসেছেন চিকিৎসার, হাসপাতালে ভর্তির সুপারিশের জন্য। আমি রেকমেন্ড করি। সত্যি বলছি আমার ফোন সারারাত খোলা থাকে। অনেকেই জরুরি ভিত্তিতে আসেন।'
কাঞ্চন আরও বলেন, 'ডাক্তার আমার কাছে সত্যিই ভগবান স্বরূপ। অন্তর থেকে বলছি আমি জুনিয়র সিনিয়র, ডাক্তারদের কোনও ভেদাভেদ করতে চাইনি। আন্দোলনকারী চিকিৎসকেদের এই আন্দোলন ২০০০ শতাংশ যুক্তিসঙ্গত ও ন্যায়সঙ্গত। তাঁদের আন্দোলনকে আমি কোনওভাবে ছোট করতে চাই না, আমার স্বপ্নেও আসে না এই কল্পনা। আমি জনপ্রতিনিধি হিসেবে বা শিল্পী হিসেবে না একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে বলছি, আমি একজন সন্তানের পিতা হিসেবে বলছি, আমার বাড়ির বোন-স্ত্রী-কন্যা সবটা নিয়েই বলছি, সত্যিই আমরা সকলেই বিচার চাই। আমি চাই দোষীদের কঠোরতম শাস্তি হোক, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।' অভিনেতা ভিডিওতে আরও বলেন, 'আমার এই মন্তব্যের পর আমার কর্মজগতের অনেক বন্ধু, অনেক সাংবাদিক বন্ধু, অনেক ডাক্তার বন্ধু আমাকে ফোন করেছেন। ফোন করাটাই সঙ্গত। তাঁরা বলেছেন, আমি মাথা পেতে স্বীকার করেছি যে হ্যাঁ আমার ভুল হয়েছে। আমার কাজের কোনও যুক্তি নেই। তবে একটা কথা বলছি, আমি লজ্জিত। আমি আপনাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। এই আন্দোলন ও আন্দোলনকারীদের প্রতি আমার সহস্র, কোটিবার সমর্থন রয়েছে। আমি আবারও বলছি, ক্ষমার থেকে বড় জিনিস হয় না, আমি সেই ক্ষমাটুকু আপনাদের থেকে ভিক্ষা চাইব। আমি আবার চাইব, যে চলে গেছে, সেই সন্তান-হারা পিতা-মাতা যেন সুবিচার পান। তাঁরা যেন দেখতে পান যে দোষীরা কঠোরতম শাস্তি পেয়েছে। আমি আবারও ক্ষমা চাইছি, আন্দোলন ও আন্দোলনকারীদের পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছি। We Wantr Justice।'
আরজি করের ঘটনায় কুকথা না বলার জন্য সোমবার রাতে নিজের এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিষেকের ওই পোস্টের কিছু পরেই সোমবার মধ্যরাতে ফেসবুক লাইভে এসে তৃণমূল বিধায়ক-অভিনেতা কাঞ্চন মল্লিক বলেন, "গতকাল একটি মন্তব্য করি, যার জন্য সমালোচিত হই। আমি যা বলেছি, তার জন্য লজ্জিত এবং দুঃখিত। আমি কোনও সাফাই গাওয়ার জন্য বলছি না। মাথা পেতে ভুল স্বীকার করছি।" কাঞ্চন এও বলেন, "ক্ষমার চেয়ে বড় কিছু হয় না। আমি সকলের কাছে হাতজোড় করে ক্ষমা চাইছি।" অভিষেকের ট্যুইটের পর বরের হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চান মিসেস কাঞ্চন মল্লিক শ্রীময়ীও।
আর জি কর কাণ্ডের পর প্রতিবাদে কর্মবিরতিতে রয়েছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। আর তাঁদেরকেই ‘বেতন নেবেন? বোনাস নেবেন না?’ কটাক্ষ করে রোষের মুখে পড়েন কাঞ্চন মল্লিক। রবিবার কোন্ননগরে বসে করা কাঞ্চনের এই বিবৃতি আগুন গতিতে ভাইরাল হয়। সোমবার দিনভর সোশ্যাল মিডিয়ায় কা়ঞ্চনকে ‘তুলোধনা’ করেছে সেলেব থেকে আম জনতা। কাঞ্চনের রবিবারের করা মন্তব্যের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় মুখ খোলেন তাঁর অভিনয় জগতের সহকর্মীরাও। নাম করেই তীব্র সমালোচনা করেন অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তী, একসঙ্গে করা নাটক বাতিল করেন নীল মুখোপাধ্যায়। নাম না করে কটাক্ষ করেন ঋত্বিক চক্রবর্তী। প্রতিবাদ জানান অভিনেত্রী তনিমা সেন-সহ অনেকেই। এরপরেই মন্তব্যের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সুর বদল উত্তরপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক কাঞ্চন মল্লিকের। নিজের মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইলেন তিনি।