জানুয়ারি মাসের শুরুতেই লালন শেখের মৃত্যু তদন্তের মামলা থেকে অব্যাহতি নিয়েছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থা। আর সোমবার সপ্তাহের শুরুতেই রাজশেখর মান্থার এজলাস বয়কট করলেন তৃণমূলপন্থী আইনজীবীরা। যাকে ঘিরে উত্তাল হল হাইকোর্ট চত্বর।
এদিন কলকাতা হাইকোর্টে যাকে বলে নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে। বিচারপতি রাজশেখর মান্থার এজলাসে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তৃণমূল কংগ্রেসপন্থী আইনজীবীরা। বিক্ষোভের জেরে এজলাস ছেড়ে চলে যান বিচারপতি। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। এই বিক্ষোভের বিরোধিতা করেন কংগ্রেসের আইনজীবী কৌস্তভ বাগচীও।
সোমবার বিচারপতি রাজশেখর মান্থার এজলাসের বাইরে তৃণমূলপন্থী আইনজীবীদের একাংশ অবস্থান বিক্ষোভে বসে। এজলাসের বাইরে গেট আটকে কোর্ট বয়কট করেন আইনজীবীদের একাংশ। এর ফলে স্তব্ধ হয়ে যায় বিচারপতি মান্থার বেঞ্চে বিচারপ্রক্রিয়া। এরপরেই কলকাতা হাইকোর্টের ১৩ নম্বর আদালত কক্ষ বন্ধ থাকা নিয়ে প্রতিবাদ জানান আইনজীবীদের একাংশ। তাঁরা জোর করে এজলাসে ঢুকতে গেলে বাধা দেন তৃণমূলপন্থী আইনজীবীরা। দু’পক্ষের মধ্যে শুরু হয়ে যায় ধস্তাধস্তা, হাতাহাতি। তৃণমূলের মহিলা আইনজীবীদের একাংশ এজলাসের গেট বন্ধ করে দেন। এই পরিস্থিতিতে নিজের এজলাস ছেড়ে উঠে যান প্রধান বিচারপতিও। বন্ধ হয়ে যায় প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের শুনানি।
উল্লেখ্য বিচারপতি রাজশেখর মান্থাই শুভেন্দু অধিকারীর রক্ষাকবচের মেয়াদ বাড়িয়েছেন। এরপরেই বিচারপতি রাজশেখর মান্থার এজলাস বয়কট করেন তৃণমূলপন্থী আইনজীবীরা। তাঁদের অভিযোগ, বিচারপতি মান্থা একনায়কের মতো আচরণ করছেন। বিচারপতির এজলাসে কোনও আইনজীবীকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না বলে খবর। শুধু তাই নয়, আটকে রাখা হয়েছে কক্ষের গেটও। কোনওরকম আগাম ঘোষণা ছাড়া এই ধরণের কর্মসূচিতে শোরগোল পড়ে গিয়েছে আদালত চত্বরে।
জানা গিয়েছে, গোটা ঘটনায় ক্ষুব্ধ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি। অ্যান্টর্নি জেনারেলকে ডেকে এই নিয়ে কার্যত ধমকও দিয়েছেন তিনি। জানা গিয়েছে, প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, "যারা এইভাবে বিচারপতির এজলাস বন্ধ করে রেখেছেন, কোর্ট তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে সামলাতে পারবেন তো?" কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এদিন গোটা ঘটনা শুনে বলেন, "এই ভাবে চলতে পারে না। আমরা কোনও পদক্ষেপ করলে তারা কি করবে? সেটা ভেবে দেখতে বলুন। বার অ্যাসোসিয়েশনের কি করছে? প্রেসিডেন্টকে দেখা করতে বলুন।" এরপর অ্যান্টর্নি জেনারেল তাঁর এজলাসে এসে বলেন, "আমি সবেমাত্র বিষয়টি জানতে পারলাম।" প্রধান বিচারপতির কথা শোনার পর তিনি বিক্ষোভরত আইনজীবীদের বলেন, “এটা ভালো হচ্ছে না। এগুলো করা উচিত নয়। অবস্থান বিক্ষোভ তুলে নিন। আমি অনুরোধ করছি।” প্রধান বিচারপতি একটি নির্দিষ্ট সময় দেন, তার মধ্যে বিক্ষওভ তুলে না নিলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান তিনি। এদিকে তৃণমূলপন্থী বিক্ষোভকারী আইনজীবীদের একাংশ পালটা এজিকে বলেন, “অনেক মামলায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। পুনরায় মামলা খারিজ হয়ে গেলে তখন তার দায়িত্ব কে নেবে?”
জানা যাচ্ছে, বিচারপতি রাজশেখর মান্থার বাড়ির আশেপাশেও লাগানো হয়েছে পোস্টার। যোধপুর পার্ক এলাকায় বিচারপতির বাড়ির আশেপাশে পোস্টারে ছয়লাপ। পোস্টারে বিচারপতি রাজশেখর মান্থার নামে বিভিন্ন অভিযোগ তোলা হয়েছে। তবে কারা এই পোস্টার লাগিয়েছে, তার উল্লেখ নেই। রাতে কয়েকজন এসে পোস্টার লাগায়, এমনটাই দাবি বিচারপতির বাড়ির নিরাপত্তারক্ষীর। এরপরেই ঘটনার তদন্তে নেমেছে লেক থানার পুলিশ।