শনিবার থেকে উদ্বেগে রয়েছেন রাজ্যের মানুষ। গুরুতর অসুস্থ বাংলার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের চিকিৎসা চলছে আলিপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে। রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমার পাশাপাশি তাঁর শ্বাসকষ্টের সমস্যাও দেখা দিয়েছিল। রবিবার সকালে কেমন আছেন তিনি? হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হবে রজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে। এখনও সঙ্কটজনক অবস্থায় রয়েছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।
গতকাল শারীরিক অবস্থার অবনগি ঘটায় হাসপাতালে ভরতি করতে হয়েছিল রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের চিকিৎসার জন্য মেডিক্যাল বোর্ডও গঠন করা হয়েছে। সেই মেডিক্যাল বোর্ডের তত্ত্বাবধানেই চিকিৎসা চলছে বুদ্ধদেববাবুর। শনিবাপর রাতে ইনভেসিভ ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে। জানা যাচ্ছে, বাইলেটারাল নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। উডল্যান্ডস হাসপাতালে রয়েছেন ফুল ইনভেসিভ ভেন্টিলেশনে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, শ্বাসনালিতে সংক্রমণের পাশাপাশি, ফুসফুসেও সংক্রমণ রয়েছে বুদ্ধবাবুর। হাই ডোজ অ্যান্টিবায়োটিক চলছে তাঁর।
জানা যাচ্ছে, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর শরীরে ক্লেবশিয়েলা নামক একটি ব্যাক্টেরিয়া পাওয়া গিয়েছে। এই ব্যাক্টিরিয়াটা নাকি 'মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স'। অর্থাৎ, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে। পাশাপাশি কোনও ওষুধের প্রতিক্রিয়াও হতে দেয় না শরীরে। এই আবহে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে যে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হচ্ছিল, সেটি নাকি বদল করা হয়েছে। চিকিৎসক জানাচ্ছেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর জন্য।
হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হবে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে। পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে আট সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড। রবিবার সকাল ১১টায় ফের একবার বৈঠকে বসবে বোর্ড। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর বাঁদিকের ফুসফুসে সংক্রমণ খুব বেশি। সংক্রমণ হয়েছে ডানদিকের ফুসফুসেও। ফুসফুসে জমে থাকা কফ বের করতে নেবুলাইজেশন করা হয়েছে। কী ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ জানতে, রক্তপরীক্ষা হয়েছে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে ইতিমধ্যেই দু’ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছে বুদ্ধবাবুকে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের রক্তে ক্রিয়েটিনের মাত্রা বেশি। যে মাপকাঠি থেকে সংক্রমণের মাত্রা বোঝা যায়, তার থেকে প্রায় ৬০ গুণ বেশি ক্রিয়েটিন তাঁর শরীরে আছে। এই আবহে তাঁর শরীরে সংক্রমণ বাসা বেঁধেছে। রক্তচাপও কমছিল তাঁর। তাই তাঁকে পুরোপুরি ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়। জানা গিয়েছে, বুদ্ধবাবুর 'টাইপ ২ রেসপিরেটরি ফেলিয়োর' হয়েছে। অর্থাৎ, রক্তে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা বেশি আছে, অক্সিজেনের মাত্রা কমে গিয়েছে।
প্রসঙ্গত, বুধবার থেকে জ্বরে ভুগছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। শনিবার দুপুরে শ্বাসকষ্ট বাড়ায় ঝুঁকি নিতে চাননি চিকিৎসকরা। পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতে ক্রিটিক্যাল কেয়ার অ্যাম্বুল্যান্স পাঠিয়ে,গ্রিন করিডর করে আনা হয় উডল্যান্ডসে। হাসপাতালের ৫১৬ নম্বর কেবিনে ভর্তি রয়েছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। দীর্ঘদিন ধরেই শ্বাসকষ্টের সমস্যা রয়েছে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। পরিবার সূত্রে খবর, শনিবার দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পর অসুস্থ বোধ করতে শুরু করেন তিনি। গত চার দিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন তিনি। শ্বাসনালীর পাশাপাশি সংক্রমণ ছড়ায় ফুসফুসেও। শরীরে অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমতে কমতে ৬৮ শতাংশে নেমে যায়। বাড়তে থাকে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ।