scorecardresearch
 

What Is Aparajita Bill : যৌন অপরাধীদের যাবজ্জীবন-মৃত্যুদণ্ডের সাজা আগেই ছিল, তাহলে রাজ্য সরকারের বিলে নতুন কী আছে?

আরজি কর হাসপাতালের ৩১ বছর বয়সী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের জেরে বিধানসভায় নতুন ধর্ষণ বিরোধী বিল এনেছে রাজ্য সরকার। যা পাশও হয়েছে। এই বিলে ধর্ষণ সংক্রান্ত আইন আরও কঠোর করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। নয়া বিলে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা বা BNS, ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা বা BNSS-এর যৌন অপরাধ থেকে শিশুদের সুরক্ষা আইন (POCSO)-কে সংশোধন করেছে।

Advertisement
Anti Rape Bill Anti Rape Bill
হাইলাইটস
  • আরজি কর হাসপাতালের ৩১ বছর বয়সী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের জেরে বিধানসভায় নতুন ধর্ষণ বিরোধী বিল এনেছে রাজ্য সরকার
  • এই বিলে কী রয়েছে? আসুন জেনে নিই।

আরজি কর হাসপাতালের ৩১ বছর বয়সী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের জেরে বিধানসভায় নতুন ধর্ষণ বিরোধী বিল এনেছে রাজ্য সরকার। যা পাশও হয়েছে। এই বিলে ধর্ষণ সংক্রান্ত আইন আরও কঠোর করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। নয়া বিলে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা বা BNS, ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা বা BNSS-এর যৌন অপরাধ থেকে শিশুদের সুরক্ষা আইন (POCSO)-কে সংশোধন করেছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আনা নয়া বিলের নাম, 'অপরাজিতা নারী ও শিশু (ওয়েস্ট বেঙ্গল ক্রিমিনাল ল অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল ২০২৪'। যা আইনে পরিণত হলে সারা বাংলায় কার্যকর হবে। এই সংশোধনীর মাধ্যমে নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে যাবতীয় যৌন অপরাধকে জামিন অযোগ্য ধারায় অন্তর্গত করা হয়েছে। এই বিল আইনে পরিণত হলে পুলিশ কোনও ওয়ারেন্ট ছাড়াই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে পারবে। সেক্ষেত্রে অভিযুক্তর জামিন মেলাও কঠিন হবে। শুধু তাই নয়, এই বিলে সব যৌন অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। তবে ভারতীয় বিচারবিধিতে ধর্ষণ সংক্রান্ত সমস্ত অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের বিধান নেই।

বিলটিতে কী কী প্রস্তাব রয়েছে? 

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নতুন বিলে ভারতীয় ন্য়ায় সংহিতার (BNS) কয়েকটি ধারা সংশোধনের প্রস্তাব রয়েছে। এর মধ্যে ৬৪, ৬৬, ৬৮, ৭০, ৭১, ৭২, ৭৩ ও ১২৪ ধারাগুলোতে সংশোধনীর প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়াও, ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা বা BNSS-এর ১৯৩ এবং ৩৪৬ ধারা সংশোধন করার প্রস্তাব রয়েছে। যেখানে, POCSO আইনের ধারা ৪, ৬, ৮, ১০ এবং ৩৫-এ সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। 

আরও পড়ুন

রাজ্য সরকারের বিল বিএনএস থেকে কীভাবে আলাদা? 

১. ধর্ষণের শাস্তি - 

বিএনএস-এ কী রয়েছে?

৬৪ নম্বর ধারায় ধর্ষণের জন্য শাস্তির বিধান রয়েছে। ন্যূনতম ১০ বছরের শাস্তির বিধান রয়েছে। যা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে। এতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের অর্থ হল, আসামি যতদিন জীবিত থাকবেন ততদিন তাকে কারাগারে কাটাতে হবে। জরিমানার বিধানও রয়েছে। 

Advertisement

রাজ্য সরকারের বিলে কী রয়েছে? পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান আছে। আবার মৃত্যুদণ্ড ও জরিমানার বিধানও রয়েছে। 

২. ধর্ষণের পর হত্যার শাস্তি

বিএনএস-এ কী রয়েছে?: ৬৬ ধারায় এর উল্লেখ রয়েছে। যদি ধর্ষণের পর নিগৃহীতা মারা যায় বা কোমাতে থাকে, তাহলে ন্যূনতম ২০ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। তা বাড়ানও যেতে পারে। হতে পারে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা। মৃত্যুদণ্ডেরও বিধান রয়েছে।

রাজ্য সরকারের বিলে কী রয়েছে? এই ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড হবে। জরিমানাও করা হবে। 

৩. গণধর্ষণে শাস্তি - 

বিএনএসে কী আছে?: ৭০(১)-এ ধারায় এই নিয়ে বলা হয়েছে কোনও নারীকে গণধর্ষণ করা হলে সব অপরাধীরই ন্যূনতম ২০ বছরের সাজা হবে। যা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে। নির্যাতিতার বয়স ১৮ বছরের কম হলে সকল অপরাধীর কমপক্ষে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হবে। সব অপরাধীর মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে। 

রাজ্য সরকারের বিলে কী?: গণধর্ষণ মামলার সব দোষীকে ন্যূনতম যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হবে। এতেও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের অর্থ হবে অপরাধী জীবিত অবস্থায় জেল থেকে বের হতে পারবে না। মৃত্যুদণ্ডেরও বিধান রয়েছে। জরিমানাও করা হবে। 

৪. পুনরাবৃত্তি অপরাধীদের জন্য শাস্তি 

BNS-এ কী?: ৭১ নম্বর ধারায় এর উল্লেখ রয়েছে। যদি একজন ব্যক্তি ফের  ধর্ষণ করে তাহলে তাকে কমপক্ষে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। মৃত্যুদণ্ডও দেওয়া যেতে পারে। জরিমানাও করা হবে।

রাজ্যের বিলে কী রয়েছে? দোষী ব্যক্তিকে সারা জীবন জেলে কাটাতে হবে। তার মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে। জরিমানার বিধানও রয়েছে। 

৫. ভিকটিমের পরিচয় প্রকাশের শাস্তি - 

বিএনএস-এ কী?: যদি কোনও ব্যক্তি ধর্ষণ বা গণধর্ষণের শিকার ব্যক্তির পরিচয় প্রকাশ করে, তাহলে দোষী প্রমাণিত হলে, ২ বছরের জেল এবং জরিমানা করার বিধান রয়েছে। 

মমতা সরকারের বিলে কী আছে?: এই ধরনের ক্ষেত্রে দোষী প্রমাণিত হলে ৩ থেকে ৫ বছরের শাস্তির বিধান করা হয়েছে। এর পাশাপাশি জরিমানাও করা হবে। 

৬. আদালতের কাজকর্ম প্রকাশের শাস্তি - 

বিএনএস-এ কী? এই ধরনের ক্ষেত্রে, অনুমোদন ছাড়াই আদালতের কার্যপ্রণালী প্রকাশ করলে ২ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। পাশাপাশি জরিমানাও করা যেতে পারে। ৭৩ ধারায় এর বিধান রয়েছে। 

রাজ্য সরকারের বিলে কী আছে? নয়া বিলে ৩ থেকে ৫ বছরের জেল ও জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। 

নাবালিকাদের উপর অত্যাচারের কী সাজা? 

ভারতীয় ন্য়ায় সংহিতার ৬৫(১), ৬৫(২) এবং ৭০(২)- ধারায় নাবালিকাকে ধর্ষণ এবং গণধর্ষণ করার অপরাধের জন্য শাস্তি প্রদান করে। ৬৫(১) নম্বর ধারায় ১৬ বছরের কম বয়সী মেয়েকে ধর্ষণের জন্য শাস্তির বিধান রয়েছে। ন্যূনতম ২০ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে, যা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে। ৬৫(২) ধারায় উল্লেখ, যদি কোনও ব্যক্তি 12 বছরের কম বয়সী কোনও মেয়েকে ধর্ষণের জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়, তবে তিনি সর্বনিম্ন ২০ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। যা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে। মৃত্যুদণ্ডের বিধানও রাখা হয়েছে।

BNS এর ৭০(২) ধারায় ১৮ বছরের কম বয়সীকে গণধর্ষণের শাস্তির বিধান রয়েছে। এ ধরনের মামলায় দোষী প্রমাণিত হলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। রাজ্য সরকার এই তিনটি ধারা অপসারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। বরং ধর্ষণের সব অপরাধীর জন্য একই শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। 

Advertisement

শিশুদের বিরুদ্ধে অত্যাচারের সাজায় কী পরিবর্তন? 

রাজ্য সরকারের বিলে ২০১২ সালের POCSO আইনের কিছু ধারায় সংশোধনীরও প্রস্তাব করেছে। POCSO আইনের ধারা ৪ এর অধীনে, যদি কোনও ব্যক্তি ১৬ বছরের কম বয়সী কোনও শিশুর সঙ্গে যৌন অপরাধ করে তার ২০ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। যদি ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সী কারও সঙ্গে যৌন অপরাধ করে তবে তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হবে। রাজ্য সরকার তাদের বিলে উভয় ক্ষেত্রেই দোষীদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রেখেছে।  একইভাবে, যদি কোনও ব্যক্তি ১৮ বছরের কম বয়সী কোনও শিশুর উপর যৌন আক্রমণ করে, তাহলে POCSO আইনের ৬ ধারার অধীনে দোষী সাব্যস্ত হলে শাস্তি হিসেবে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। রাজ্য সরকারের এই বিলে যাবজ্জীবন সাজা ও মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। 

১০ দিনে ফাঁসির সাজা? 

বিলে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, শিশুদের বিরুদ্ধে যৌন অপরাধের ক্ষেত্রে পুলিশকে সাত দিনের মধ্যে আদালতে প্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে। আদালতকে এক বছরের মধ্যে বিচার শেষ করতে হবে। তবে ১০ দিনের মধ্যে অপরাধীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার জন্য বাংলা সরকারের বিলে কোথাও উল্লেখ নেই। BNSS-এ সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যার কারণে পুলিশ তদন্ত এবং বিচার শেষ করার সময়সীমা কমানো হয়েছে। 

নয়া বিলে বলা হয়েছে, প্রথম তথ্য পাওয়ার পর পুলিশকে ২১ দিনের মধ্যে তাদের তদন্ত শেষ করতে হবে। ২১ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ না হলে আদালত আরও ১৫ দিনের সময় দিতে পারে, তবে এ জন্য পুলিশকে লিখিতভাবে বিলম্বের কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে। অন্যদিকে বিএনএসএস পুলিশকে দুই মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করার সময় দিয়েছে। দুই মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ না হলে আরও ২১ দিনের সময় দেওয়া হতে পারে। এ ছাড়া রাজ্য সরকারের বিলে এমনও বিধান রয়েছে, মহিলা ও  শিশুদের উপর অপরাধের ক্ষেত্রে চার্জশিট দাখিলের এক মাসের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করতে হবে। সেখানে BNSS-এ সময় দেওয়া হয়েছে দুই মাস। 

প্রসঙ্গত, বর্তমানে এই বিলটি বিধানসভায় পাস করেছে রাজ্য সরকার। এখন তা রাজ্যপালের কাছে পাঠানো হবে। রাজ্যপালের অনুমোদনের পর তা রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পরই এই বিল আইনে পরিণত হবে।

Advertisement