
কাউকে শাস্তি পেতে দেব না, জনসভায় আগেই ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যা। সেই অবস্থানই বজায় রাখল রাজ্য সরকার। নির্বাচন কমিশন চারজন WBCS আধিকারিককে সাসপেন্ড করতে বলেছিল। সময়সীমাও বেঁধে দিয়েছিল ৷ সোমবার রা্জ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ নির্বাচন কমিশনকে যে চিঠি দিলেন, তাতে দু'জনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সুতরাং নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মেনে চারজনকে সাসপেন্ড বা পদক্ষেপ নেওয়া হল না। এই দু'জনকেও সাসপেন্ড করা হয়নি ৷ ভোটের কাজ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে মাত্র ৷
ভোটার তালিকায় অবৈধভাবে ভুয়ো ভোটারের নাম তোলার অভিযোগে ভারতের নির্বাচন কমিশন রাজ্যের চার সরকারি আধিকারিককে সাসপেন্ড করার জন্য রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিল। সোমবার দুপুর ৩ টের মধ্যে রাজ্যকে সিদ্ধান্ত জানাতে বলা হয়েছিল। কিন্তু কমিশনের সেই সিদ্ধান্ত মানল না রাজ্য। মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের চিঠিতে জানানো হয়েছে, অভিযুক্ত ৪ আধিকারিককে সাসপেন্ড করা হয়নি। তাদের ভোটের কাজ থেকে সরানো হল। রাজ্য অভ্যন্তরীণ তদন্ত করে দেখবে বলেও চিঠিতে জানানো হয়েছে।
মুখ্যসচিব মনোজ পন্থে চিঠিতে জানিয়েছেন, জাতীয় নির্বাচন কমিশনের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু হয়েছে, ৫ অগাস্ট ও ৮ অগাস্ট এর চিঠির ভিত্তিতে। আপনারা অবশ্যই অবগত আছেন যে ডিস্ট্রিক্ট লেভেল অফিসিয়াল এবং যারা ফিল্ড অফিসার তাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থাকে। বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থাকে সরকারের বিভিন্ন কাজের উপর। তার সঙ্গে ভোটার রোল সংশোধন নিয়ম তাদের কাজ থাকে। জাতীয় নির্বাচন কমিশনের চিঠির প্রেক্ষিতে পূর্ব মেদিনীপুরের ময়না বিধানসভার Additional Electoral Registration Officer, এবং বারুইপুর পূর্ব ডেটা এন্ট্রি অপারেটরকে নির্বাচন সংক্রান্ত সব দায়িত্ব থেকে তুলে নেওয়া হল। রাজ্য সরকারের পুরো তদন্তের পরই পুরোপুরি অ্যাকশন বা পদক্ষেপ নেওয়া হবে। অর্থাৎ চিঠিতে স্পষ্ট সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নিল না রাজ্য। আপাতত রাজ্য সরকার তদন্ত করবে তারপরেই তদন্ত রিপোর্ট উঠে আসার পরেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
কমিশনকে দেওয়া মুখ্যসচিবের চিঠি থেকে জানা যাচ্ছে, বারুইপুর পূর্ব (137) ও ময়না (206) বিধানসভা কেন্দ্রের ফর্ম-6 আবেদনপত্র নিষ্পত্তি সংক্রান্ত অনিয়মের অভিযোগে এক নির্বাচনী আধিকারিক ও এক ডেটা এন্ট্রি অপারেটরকে ভোটার তালিকা সংশোধন ও নির্বাচন-সম্পর্কিত সমস্ত দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে বলেও কমিশনকে জানিয়েছেন রাজ্য প্রশাসনের এই শীর্ষ কর্তা ৷ মুখ্যসচিবের পাঠানো চিঠিটি পেয়েছেন নির্বাচন কমিশনের সচিব সুজিত কুমার মিশ্র। সোমবার বিকেল তিনটের মধ্যে চিঠিটি পাঠানোর কথা ছিল। সেই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই মুখ্যসচিবের তরফে এই চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে নবান্ন সূত্রে খবর।
প্রসঙ্গ, গত বুধবারই ঝাড়গ্রামের সভা থেকে কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন তৃণমূলনেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি কারও কোনও শাস্তি হতে দেব না।' এনিয়ে রাজ্যের পদক্ষেপ জানতে চেয়ে টানা তিনবার মুখ্যসচিবকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল নির্বাচন কমিশনের তরফে। সোমবার দুপুর ৩ টের মধ্যে রাজ্যকে সিদ্ধান্ত জানাতে বলা হয়েছিল। অবশেষে কমিশনকে চিঠি দিয়ে সিদ্ধান্তের কথা জানালেন মুখ্যসচিব।