হাজারও বিতর্কের পর শেষ পর্যন্ত রবিবার স্কুল সার্ভিস কমিশনের নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা। শেষবার রাজ্যে SSC পরীক্ষা হয়েছিল ২০১৬ সালে। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির অভিযোগ সুপ্রিম কোর্ট গোটা প্যানেলই বাতিল করে দেয়। তাতে চাকরি খুইয়েছেন প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী। শীর্ষ আদালতেরই নির্দেশে সেই পরীক্ষাই আবার নতুন করে হতে চলেছে ১০৬ মাস পর। এ শুধু শিক্ষক নিয়োগেরই পরীক্ষা নয়। পরীক্ষা যেন স্কুল সার্ভিস কমিশনেরও। কারণ এবারের পরীক্ষায় যাতে একজনও তথাকথিত ‘টেন্টেড’ বা ‘অযোগ্য বা দাগি বলে চিহ্নিত’ প্রার্থী না বসেন, তা নিশ্চিত করতে রাজ্য ও কমিশনকে সতর্ক করেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। তবে পরীক্ষার ২৪ ঘণ্টা আগেও SSC নিশ্চিত করে বলতে পারেনি, একজন ‘দাগি’ও পরীক্ষায় বসবেন না।
তটস্থ SSC ও রাজ্য প্রশাসন
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে শনিবার SSC–র চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার বলেন, ‘এই প্রশ্নের আলোচনা ১৪ সেপ্টেম্বরের একাদশ দ্বাদশ শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষার পরে করব। আমাদের ওয়েবসাইটে সুপ্রিম কোর্টের যা নির্দেশে আছে সেটা মেনে পরীক্ষার্থীরা আসবেন ও পরীক্ষায় বসবেন।’ তবে পরীক্ষা যাতে সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হয় তা নিয়ে তটস্থ রাজ্য প্রশাসন। রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ বলেন, 'SSC-র গাইডলাইন মেনে পরীক্ষা করতে হবে। রাস্তায় থেকে প্রশাসনকে সজাগ থাকতে হবে।'
এবছর SSC-র নবম ও দশমের মোট পরীক্ষার্থী ৩ লক্ষ ১৯ হাজার ৯১৯। পরীক্ষাকেন্দ্র ৬৩৬।
পরীক্ষার নিয়ম
> পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশের সময় সকাল ১০টা।
> প্রশ্নপত্র বিতরণ করা হবে ১১টা ৪৫ মিনিট থেকে। তখন শুধু নাম লেখা যাবে।
> পরীক্ষা শুরু ১২টায়। তখন থেকে উত্তর লেখা যাবে।
> ১২টার পর আর কাউকে পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
> পরীক্ষাকেন্দ্রে তল্লাশির জন্য থাকছে মেটার ডিটেক্টর। প্রত্যেক পরীক্ষার্থীর দেহ তল্লাশি হবে।
> SSC-র ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করা অ্যাডমিট কার্ডই কেবলমাত্র গ্রহণযোগ্য হবে।
> নিজেই সই করা পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক।
> ফোন, ঘড়ি, ক্যালকুলেটর নিষিদ্ধ।
> জলের বোতল এবং পেন ট্রান্সপারেন্ট হতে হবে।
> বিশেষ ভাবে সক্ষম পরীক্ষার্থীরা আধ ঘণ্টা সময় বেশি পাবেন।
> পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত হল থেকে বেরোনো যাবে না।
> প্রতিটি প্রশ্নপত্রের জন্য থাকছে আলাদা আলাদা সিকিউরিটি ফিচার। অ্যাডমিট কার্ড স্ক্যান করারও ব্যবস্থা থাকবে।
> নতুন নিয়োগ বিধি অনুযায়ী, পরীক্ষার্থীরা OMR শিটের কার্বন কপি বাড়ি নিয়ে যেতে পারবেন। প্যানেলের মেয়াদ শেষের পরে দু’বছর OMR শিট সংরক্ষণ করা হবে। OMR শিটের স্ক্যান করা প্রতিলিপি প্যানেলের মেয়াদ শেষের ১০ বছর পর্যন্ত সংরক্ষিত থাকবে।
> পরীক্ষার কিছু দিন পরে ‘আনসার কি’ প্রকাশ করা হবে SSC-র ওয়েবসাইটে। পরীক্ষার্থীরা কার্বন কপির উত্তরের সঙ্গে তা মিলিয়ে নিতে পারবেন।
SSC জানিয়েছে, ২০১৬ সালে যাঁরা চাকরি পেয়েছিলেন, তাঁদের প্রায় সকলেই আবার আবেদন করেছেন। গত বারের চেয়ে এ বার পরীক্ষার্থীর সংখ্যা অন্তত আড়াই লক্ষ বেশি। কমিশন জানিয়ে দিয়েছে, প্রশ্নপত্রও সুরক্ষিত। যদি কেউ বেআইনি ভাবে কিছু করার চেষ্টা করেন, আধঘণ্টার মধ্যে তিনি ধরা পড়ে যাবেন। তারপরও যেন এড়ানো যাচ্ছে না বিতর্ক। র্যাঙ্ক জাম্প, OMR শিট মিস ম্যাচ এবং প্যানেল বহির্ভূত ও মেয়াদ উত্তীর্ণ প্যানেলের প্রার্থীদেরই আদালতের রায়ে ‘দাগি’ বলে চিহ্নিত করা হয়। গ্রুপ–C ও গ্রুপ–D পদে শিক্ষাকর্মী মিলিয়ে মোট ‘দাগি’র সংখ্যা ৬ হাজার ২৭৬। এদিন এই ‘দাগি’দের পরীক্ষায় বসা থেকে আটকানোটাই কমিশনের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
এদিকে, ক’দিন আগেই বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ তুলেছিলেন, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ‘মোটা দামে বাইরে বিক্রি হয়েছে’। ফলে এবারের পরীক্ষায় ‘দাগ’ ও 'দাগি' এড়াতে সজাগ SSC তথা রাজ্য।