
রাতভর বৃষ্টিতে জলমগ্ন শহর কলকাতার একাধিক অঞ্চল। আবহাওয়া দফতর বলছে, গাঙ্গেয় পশ্চিমঙ্গের উপর রয়েছে নিম্মচাপ। তার ফলে আজ দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে চলবে বৃষ্টি। মঙ্গলবার সকাল থেকেই নাগাড়ে বৃষ্টি হচ্ছে কলকাতা-সহ একাধিক জেলায়। এ দিন দক্ষিণবঙ্গের অধিকাংশ জেলাতেই রয়েছে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস। সঙ্গে বইতে পারে ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া। এদিকে বৃষ্টির জেরে জলে ডুবেছে শহরের একাধিক ব্যস্ত এলাকা।
কলকাতায় কত বৃষ্টি?
সপ্তাহের ব্যস্ত দিনের সকাল থেকেই কলকাতায় বৃষ্টি হচ্ছে। সকাল থেকে এখনও পর্যন্ত আলিপুরে বৃষ্টি হয়েছে ৪৫ মিলিমিটার, কাঁকুড়গাছিতে ৮০ মিলিমিটার, সল্টলেকে ৮৮ মিলিমিটার, ব্যারাকপুরে ৯৩ মিলিমিটার এবং উত্তর কলকাতা, শ্যামবাজারে ৭৭ মিলিমিটার। সেইসঙ্গে সকাল থেকে সামনে আসতে শুরু করেছে জল যন্ত্রণার ছবি। যে পরিমাণ বৃষ্টি হচ্ছে, তা যদি বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে না কমে, তাহলে শহরের জলমগ্ন পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পুরসভার পাম্পিং স্টেশনগুলি থেকে যে আপডেট সামনে এসেছে, তাতে কলকাতার কোথাও কোথাও হাঁটু সমান জল জমেছে।
এই এলাকাগুলি জলমগ্ন
উত্তর কলকাতার ঠনঠনিয়া, সুকিয়া স্ট্রিট, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ সহ বিস্তীর্ণ অংশের জল জমার সেই পুরনো ছবি চোখে পড়ছে। জল জমেছে ঢাকুরিয়া, যাদবপুর সহ দক্ষিণ কলকাতার বিস্তীর্ণ অংশে। সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে যোধপুর পার্ক নিকাশি পাম্পিং স্টেশন এলাকায়। রাত থেকে সকাল পর্যন্ত ২০০ মিলিমিটৈর বৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এদিকে অফিসপাড়া মিন্টোপার্ক ও সংলগ্ন এলাকাও জলমগ্ন। ফিয়ার্স লেন, বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিট, সেন্ট্রাল এভিনিউ, নর্থ পোর্ট থানা লাগোয়া এলাকা-সহ বেশ কিছু জায়গা জলমগ্ন। কাঁকুড়গাছি, পাতিপুকুর এবং উল্টোডাঙা আন্ডারপাসেও জল জমেছে। কোথাও কোথাও গোড়ালি অবধি, তো কোথাও হাঁটুর কাছাকাছি পর্যন্ত জল জমতে শুরু করেছে বলে কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর। কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণ, সর্বত্রই কমবেশি সমস্যার মধ্যে পড়েছেন শহরবাসী। বিভিন্ন গলিপথও জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। এই সব এলাকা থেকে জল বার করার চেষ্টাও শুরু হয়েছে। তবে যেহেতু অনেক ক্ষণ ধরে বৃষ্টি হচ্ছে, তাই জল নামতে দেরি হচ্ছে। পাশাপাশি সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ গঙ্গায় জোয়ার আসার কথা রয়েছে। ওই সময় কলকাতার নিকাশি লকগেটগুলি বন্ধ করে দেওয়া হবে। ফলে জল নামতে আরও অনেকটা সময় লাগতে পারে বলে কলকাতা পুরসভা সূত্রে জানা যাচ্ছে।
সকাল ৬টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত কোথায় কত বৃষ্টি-
মানিকতলা নিকাশি পাম্পিং স্টেশন – ৮০ মিলিমিটার, দত্ত বাগান নিকাশি পাম্পিং স্টেশন – ৭৭ মিলিমিটার, বীরপাড়া নিকাশি পাম্পিং স্টেশন – ৭৮ মিলিমিটার, মার্কাস স্কোয়ার নিকাশি পাম্প স্টেশন – ৬৮ মিলিমিটার, বালিগঞ্জ নিকাশি পাম্পিং স্টেশন – ৬৬ মিলিমিটার, চেতলা নিকাশি পাম্পিং স্টেশন- ৪৭ মিলিমিটার, মমিনপুর নিকাশি পাম্পিং স্টেশন – ৬৭ মিলিমিটার, কালীঘাট নিকাশি পাম্পিং স্টেশন – ৬৪ মিলিমিটার, যোধপুর পার্ক নিকাশি পাম্পিং স্টেশন – ১৯৫ মিলিমিটার, ধাপা নিকাশি পাম্পিং স্টেশন – ৬২ মিলিমিটার, তপসিয়া নিকাশি পাম্পিং স্টেশন – ৬৩ মিলিমিটার, উল্টোডাঙ্গা নিকাশি পাম্পিং স্টেশন – ৬৮ মিলিমিটার, কামডহরি নিকাশি পাম্পিং স্টেশন – ৬৩ মিলিমিটার, পামার বাজার নিকাশি পাম্পিং স্টেশন- ৭৮ মিলিমিটার, ঠনঠনিয়া নিকাশি পাম্পিং স্টেশন – ৭২ মিলিমিটার।
কমেছে তাপমাত্রা
এ দিকে বৃষ্টির জেরে কমেছে তাপমাত্রার পারদও। সোমবার শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৯.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের থেকে ৩.৩ ডিগ্রি কম এবং মঙ্গলবার ভোরে শহরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৫.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের থেকে ১.৪ ডিগ্রি কম। এ দিন বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ সর্বাধিক ৯৮ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ৮৯ শতাংশ।
সোমবার সারা রাত ধরেই চলেছে বৃষ্টি ৷ সকালেও বৃষ্টির বিরাম নেই ৷ আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, আগামী দু-তিন ঘণ্টায় বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ঝড়-বৃষ্টির সতর্কতা রয়েছে। কলকাতা-সহ পাঁচ জেলায় ঝড়-বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, কলকাতা, হাওড়া এবং পূর্ব মেদিনীপুর জেলাতে ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। মেঘলা আকাশ এবং বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সতর্কতা। সঙ্গে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার গতিবেগে দমকা ঝোড়ো বাতাস বইতে পারে কোথাও কোথাও। থাকবে বজ্রপাতের সম্ভাবনা।