আরজি কর হাসপাতালে ভাঙচুরের ঘটনায় সরাসরি সংবাদমাধ্যমের ওপরে দায় চাপালেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল। আজকের এই ঘটনা বিদ্বেষপূর্ণ মিডিয়া প্রচারের ফল বলেই মন্তব্য করেছেন পুলিশ কমিশনার। তিনি বলেন, 'এখানে যা ঘটেছে তা হল ভুল মিডিয়া প্রচারের কারণে, যা একটি বিদ্বেষপূর্ণ মিডিয়া প্রচার, যা কলকাতা পুলিশের বিরুদ্ধে যাচ্ছে। কলকাতা পুলিশ কী করেনি? এই ক্ষেত্রে সবকিছুই করেছে। ইতিমধ্যেই মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা নির্যাতিতার পরিবারকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু গুজব ছড়ানো হচ্ছে। আমি খুবই ক্ষুব্ধ। আমরা কোনও অন্যায় করিনি। একটি বিদ্বেষপূর্ণ মিডিয়া প্রচারের কারণে, কলকাতা পুলিশ জনগণের আস্থা হারিয়েছে। মিডিয়া এই ধরনের বিদ্বেষমূলক প্রচার না করলে এটা ঘটত না।'
এরপরেই মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের তদন্ত নিয়ে সিপি বলেন, 'আমরা কখনও বলিনি যে শুধুমাত্র একজন ব্যক্তি (অভিযুক্ত), আমরা বলেছি যে আমরা বৈজ্ঞানিক প্রমাণের জন্য অপেক্ষা করছি এবং তার জন্য সময় লাগবে। শুধু গুজবের ওপর ভিত্তি করে আমি একজন তরুণ পিজি ছাত্রকে গ্রেফতার করতে পারি না, এটা আমার বিবেকের বিরুদ্ধে। মিডিয়ার অনেক চাপ আছে, আমি খুব পরিষ্কার বলছি যে আমরা যা সঠিক তা করেছি। এখন সিবিআই তদন্ত করছে। যদি সিবিআই প্রমাণ করতে পারে তাতে আমাদের কোনও সমস্যা নেই। আমরা কখনই আটকে রাখিনি। একজন ইন্টার্ন, তাঁর বাবা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। আপনারা গুজব ছড়াচ্ছেন। কোনও মহাপাত্রর নাম বাতাসে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে রাজনৈতিক কারণে। আমরা সিবিআইকে সর্বাত্মক সাহায্য করব। আমরা স্বচ্ছ ভাবে সব করেছি। পরিবারের কাছে আমরা স্বচ্ছতার সঙ্গে সব কিছু দিয়েছি। আমরা ছাত্রদের একটি ৭ সদস্যের কমিটি চেয়েছিলাম। তারা সেটা করতে ব্যর্থ হয়েছে। মিথ্যা অপপ্রচার চলছে। মিডিয়া প্রচার শুরু হয়েছে। আপনি বলতে পারবেন না প্রমাণ নষ্ট করা হয়েছে। মিথ্যা প্রচার চলছে যে হাড় (নির্যাতিতার) ভেঙে গিয়েছিল। দুর্ভাগ্যক্রমে, এটি বৈজ্ঞানিক প্রমাণ দ্বারা সমর্থিত নয়। আমাদের সব রমক খারাপ ভাবে দেখানো হয়েছে। এটা কলকাতা শহরের জন্য দুঃখজনক।'
মেয়েদের ‘রাত দখলের’ কর্মসূচির মধ্যেই তুলকালাম শুরু হয়ে যায় আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে। পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে হাসপাতালে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়েছে। হাসপাতালের বাইরে বিশাল সংখ্যক জনতা বিক্ষোভ করে এবং তারপর ব্যারিকেড ভেঙে হাসপাতালের ভিতরে থাকা গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। প্রতিবাদীদের মঞ্চও ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে আজ কলকাতা-সহ জেলায় জেলায় মাঝরাতে পথে নামেন মহিলারা। এই কর্মসূচির নাম দেওয়া হয় 'মেয়েদের রাত দখল'। অভিযোগ, নির্ধারিত জমায়েতের কারণে আরজি করের সামনে প্রচুর ভিড় জমে যায়। আচমকা বেশ কিছু মানুষ ব্যারিকেড ভেঙে হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে যান ও এমার্জেন্সি বিভাগে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। এছাড়াও উল্টে দেওয়া হয় পুলিশের গাড়ি। ৩০-৪০ জন ব্যক্তি লাঠি হাতে আচমকা হাসপাতালে ঢুকে ভাঙচুর চালাতে শুরু করে বলে অভিযোগ।
কী কারণে, কারা এই ভাঙচুর চালাল তা এখনও জানা যায়নি। পুলিশ থাকলেও এই ভাঙচুর চলে বলে অভিযোগ উপস্থিত লোকজনের। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে আসে বিশাল পুলিশ বাহিনী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়েছে কয়েক জন পুলিশকর্মীও জখম হয়েছেন। পুলিশ সংখ্যায় কম ছিল যার জন্য তারা উত্তেজিত জনতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। কয়েকজন সংবাদমাধ্য়মের কর্মীকেও মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ। কয়েকটি ক্যামেরাও ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এই মুহূর্তে আরজি কর হাসপাতালের সামনে ব্যাপক উত্তেজনা রয়েছে। এলাকায় গিয়েছেন পুলিশের পদস্থ আধিকারিকরা। লেঠেল বাহিনীকে এখন তাড়া করেছে পুলিশ। ব্যাপাক লাঠিচার্জ করা হচ্ছে। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাসের সেল ফাটাচ্ছে। র্যাফ নামানো হয়েছে। বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে এলাকায়। হামলাকারীদের একাংশকে তাড়া করে এলাকা ছাড়া করেছে পুলিশ। অভিযোগ, পুলিশকে নিশানা ইট ছোড়া হচ্ছে এখনও। ইটের আঘাতে এক পুলিশকর্মীর মাথা ফেটেছে। ঘটনাস্থলে রয়েছেন পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল, জয়েন্ট সিপি (হেডকোয়ার্টার) মিরাজ খালিদ, ডিসিপি সেন্ট্রাল ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়) ডিসিপি (উত্তর) অভিষেক গুপ্তা-সহ অন্য পদস্থ আধিকারিকরা।