শমীক ভট্টাচার্য ও সুকান্ত মজুমদারবিধানসভা নির্বাচন আর মেরেকেটে মাস আটেক হয়তো বাকি। আপাত ভাবে ৮ মাস দীর্ঘ সময় মনে হলেও, রাজনীতির ময়দানে খুবই কম সময়কাল। ভোটের রাজনীতি ইতিমধ্যেই কিন্তু শুরু হয়ে গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। খন প্রশ্ন হল, রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের কী স্ট্র্যাটেজি হতে চলেছে ২০২৬-এর ভোটে? আরও স্পষ্ট করলে, কার নেতৃত্বে আগামী বিধানসভা ভোট লড়বে ভারতীয় জনতা পার্টি (BJP)। এখনও পর্যন্ত কিন্তু রাজ্যবিজেপি-র পরবর্তী সভাপতি নির্বাচিত হননি। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী পদের দায়িত্বের সঙ্গে বঙ্গবিজেপি-র সভাপতির পদও সামলাচ্ছেন সুকান্ত মজুমদার। কিন্তু বিজেপি-তে আবার 'এক ব্যক্তি, এক পদ নীতি' রয়েছে। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে কি সুকান্তর সভাপতিত্ব নিয়ে নীতিগত প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
বঙ্গ বিজেপি-র পুরনো নেতা
আবার একেবারে দোরগোড়ায় বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি বদলে ঝুঁকিরও আশঙ্কা রয়েছে। এই যাবতীয় জল্পনার মধ্যেই উঠে আসছে একটি নাম, তা হল শমীক ভট্টাচার্য। বঙ্গ বিজেপি-র পুরনো নেতা। পশ্চিমবঙ্গে যখন বিজেপি-র নাম কে ওয়াস্তে সংগঠন ছিল, সেই তখন থেকেই শমীক ভট্টাচার্য রয়েছেন। কিন্তু সভাপতি পদের প্রশ্নে দল নিজেই মুখে কুলুপ এঁটেছে। যা পরিস্থিতি, তা দেখে অনেকেই বলছেন, ঘোষণা আর সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
বস্তুত কোনও ঘোষণা হয়নি। নেতারা এখনও মুখ খোলেননি। তবু বঙ্গ বিজেপির অন্দরে আলোচনা তুঙ্গে—এই বুঝি বদলে যাচ্ছে রাজ্য নেতৃত্বের ভার। সভাপতি পদের প্রশ্নে দল নিজেই মুখে কুলুপ এঁটেছে। কিন্তু যা পরিস্থিতি, তা দেখে অনেকেই বলছেন, ঘোষণা আর সময়ের অপেক্ষা মাত্র। লোকসভা ভোটে দ্বিতীয়বার জয়ী হয়ে সুকান্ত মজুমদার যখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হলেন, তখন থেকেই ঘরে বাইরে প্রশ্ন উঠেছিল—দুটো দায়িত্ব কি একসঙ্গে সামলানো যায়? বিজেপির ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ নীতিও তখন বারবার মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। তবে এতদিন পর্যন্ত সবটাই থেমে ছিল জল্পনার স্তরে। কারও মুখে কিছু শোনা যায়নি।
রাজনীতির পটভূমিতে হঠাৎ যেন বদল
কিন্তু এ সপ্তাহে বিজেপির রাজনীতির পটভূমিতে হঠাৎ যেন বদল এসেছে। কী এমন ঘটল? সোমবার বিকেলে হঠাৎই দিল্লিতে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নড্ডার বাসভবনে দেখা গেল রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যকে। একেবারে সরাসরি ‘আড্ডা’ নয়—নিয়ম মেনে আমন্ত্রণ পেয়েই গিয়েছেন তিনি। আর এখানেই শুরু হয়ে গেছে গুঞ্জন। কারণ বিজেপির অন্দরমহলে এই দৃশ্যকে ‘সিগন্যাল’ বলেই ব্যাখ্যা করা হচ্ছে।
গন্তব্য দিল্লি, উপলক্ষ কোথায়?
বলা হয়েছে, সংসদের একটি কমিটির কাজে দিল্লি গিয়েছেন শমীক। তাতে কোনও অস্বাভাবিক কিছু নেই। কিন্তু সেই সফরের মধ্যেই সন্ধ্যায় বিজেপি সভাপতির বাড়িতে গিয়ে বসে পড়লেন তিনি। তাও এমন এক সময়, যখন রাজ্য বিজেপির সভাপতির মেয়াদ শেষের মুখে। একইসঙ্গে জল্পনা আরও উসকে দিচ্ছে আরও একটি ঘটনা—এই সভাপতি নির্বাচনের দায়িত্বে রয়েছেন বিজেপির বর্ষীয়ান নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদ। তিনিও নাকি উপস্থিত ছিলেন সেই বৈঠকে। দলের একাংশ বলছে, 'সবটাই হিসেব করে সাজানো। আর কয়েক দিন পরেই রাজ্য সভাপতির নাম ঘোষণা হবে, তার আগে দিল্লিতে এমন করে বৈঠক নিছক ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ নয়।'
শমীকই কি পরবর্তী সভাপতি?
এই প্রশ্নের জবাব এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে মেলেনি। কিন্তু অঘোষিতভাবে বিজেপির অন্দরেই অনেকের মত—এই দৌড়ে আপাতত একাই এগিয়ে শমীক। কারণও আছে। দল তাঁর মধ্যে ভারসাম্য দেখতে পাচ্ছে। তিনি যেমন প্রচারের মুখ, তেমনই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থেকে দূরে। সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ভালো, দলকে তিনি ‘পালিশ’ করে উপস্থাপন করতে পারেন—এমনটা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অনেকেরই মত। সবথেকে বড় কথা, শমীককে নিয়ে কোনও দলে ভেতরের আপত্তির সুর এখন শোনা যাচ্ছে না। অনেকেই বলছেন, ভোটের মুখে দল যদি ঝুঁকি নিতে না চায়, তবে এমনই কাউকে বেছে নেওয়ার সম্ভাবনা বেশি—যিনি সকলের গ্রহণযোগ্য।
রাজ্য সভাপতির নির্বাচন ঘিরে ইতিমধ্যেই নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করেছে দল। ২ জুলাই মনোনয়ন, ৩ জুলাই বরণ অনুষ্ঠান। নির্বাচনও হচ্ছে একরকম অলিখিত প্রক্রিয়ায়, কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোনও প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকে না। সেই নির্দিষ্ট সময়ের ঠিক আগেই শমীকের দিল্লি সফরকে তাই কাকতালীয় বলছেন না কেউই।