জুূবিন গর্গের মূর্তি।-সংগৃহীত ছবিঅসমের রাস্তায় বসবে জুবিনের একাধিক ফাইবার গ্লাসের মূর্তি। যা তৈরি হচ্ছে কুমোরটুলিতে। সদ্য প্রয়াত জনপ্রিয় গায়ক ও শিল্পী জুবিন গর্গকে স্মরণ করে তাঁর ফাইবার মূর্তি বসানো হবে সে রাজ্যের বিভিন্ন রাস্তা, পার্ক এবং জনবহুল এলাকায়। আর সেই বিশাল দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কুমোরটুলির শিল্পীদেরই।
কাজের এই অর্ডার শিল্পীদের কাছে একেবারেই অভূতপূর্ব। ইতিমধ্যেই কয়েকটি ফাইবার মূর্তি বিমানে করে পৌঁছে গিয়েছে অসমে। আরও বেশ কয়েকটি দ্রুত গতিতে তৈরি হচ্ছে। কুমোরটুলির শিল্পীদের কাছে মোট ৭০টিরও বেশি মূর্তির অর্ডার এসেছে। এর মধ্যে প্রায় ১০টি খুব শীঘ্রই পাঠানো হবে। সরকারি ভাবে কোথায় কোথায় মূর্তি বসানো হবে, তা এখনও ঘোষণা হয়নি। তবে শিল্পীদের অনুমান, জনবহুল গুরুত্বপূর্ণ এলাকাই বেছে নেওয়া হবে।
ফাইবার গ্লাসের মূর্তি তৈরিতে কুমোরটুলির নাম বিশ্বজোড়া। পুজোর সময় পৃথিবীর নানা প্রান্তে প্রতিমা পৌঁছে দেয় কুমোরটুলি। এখন মৃৎশিল্পী রাজা পাল এখন ব্যস্ত সাড়ে চার ফুট উঁচু হাসিমুখের জুবিনের একটি ফাইবার মূর্তির শেষ টাচ-আপে। পরিকল্পনা মতো ডিসেম্বরের মধ্যেই মূর্তিটি অসমে পাঠাবেন তিনি। তিনি জানান, মোট সাতটি জুবিনের মূর্তির বরাত পেয়েছেন। সময় খুব কম, তাই প্রায় সারাদিনই কাজ করছেন।
এই সময়টায় সাধারণত কুমোরটুলিতে কাজের চাপ কম থাকে। দুর্গাপুজো থেকে জগদ্ধাত্রী পুজো সব উৎসব শেষ, সরস্বতী পুজোরও দেরি আছে। তাই অনেক শিল্পী অন্য কাজে চলে যান। ফাইবার মূর্তির অর্ডার খুব একটা আসে না। কিন্তু এবার সেই বিরল সুযোগ এনে দিল জুবিন গর্গের প্রতি মানুষের ভালোবাসা। আবক্ষ বা পূর্ণাবয়ব মূর্তি তৈরির বরাত পাওয়া শিল্পীরা তাই নতুন উদ্যমে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন।
কাজ করতে করতে শিল্পীরা বারবার মনে করছেন কুমোরটুলির কিংবদন্তি গোপেশ্বর পালের কথা, যাঁর স্টুডিওর ধুলোমাখা কিন্তু বিস্ময়কর জীবন্ত মূর্তিগুলি আজও দেখলে মনে হয় যেন মাত্রই হাঁটা শুরু করবে ফেরিওয়ালা, বা বেরিয়ে পড়বে গোরুর গাড়ি। সেই প্রাণসঞ্চারের ঐতিহ্য আজও কুমোরটুলিকে আলাদা জায়গায় রাখে। এই বিশ্বাস, এই সৃজনশক্তিই হয়তো অসমের মানুষকেও টেনে নিয়ে এসেছে কুমোরটুলির কাছে। জুবিনের স্মৃতি রক্ষার কাজে তাই ভরসা রাখা হল কলকাতার এই শতাব্দীপ্রাচীন শিল্পপল্লীতেই।