এই গরমে রাস্তায় বেরোলেই হাঁসফাঁস লাগে? শার্ট ভিজে যাচ্ছে ঘামে? শরীর থেকে ঘামের গন্ধে অস্বস্তি তৈরি হচ্ছে? চিন্তা নেই। অতিরিক্ত ঘাম একেবারেই স্বাভাবিক ব্যাপার, তবে সেটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখাও কিন্তু জরুরি। চলুন জেনে নেওয়া যাক অতিরিক্ত ঘামের পেছনে কারণ, প্রতিকার এবং দৈনন্দিন জীবনে কিছু সহজ পরিবর্তনের টিপস।
ঘাম আমাদের শরীরের প্রাকৃতিক রক্ষাকবচ। যখন গরম পড়ে বা শরীরের ভিতরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়, তখন ঘাম বেরিয়ে এসে আমাদের শরীর ঠান্ডা রাখে। কিন্তু কারও কারও ক্ষেত্রে এই ঘাম স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি হয়ে যায়। কেন এমনটা হয়?
১. পরিবেশজনিত কারণ: গরম বা আর্দ্র আবহাওয়ায় শরীর বেশি ঘামে। বিশেষ করে রোদের মধ্যে বেশি সময় কাটালে ঘাম হওয়াটা খুব স্বাভাবিক। ২. হরমোনের গোলমাল: থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যায় (বিশেষত হাইপারথাইরয়েডিজম) অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে। ৩. মানসিক চাপ: রাগ, দুশ্চিন্তা, উত্তেজনা বা ভয় লাগলে শরীরের ঘামগ্রন্থি অতিরিক্ত সক্রিয় হয়ে যায়। ৪. কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ বা কেমিক্যালের প্রভাবেও বেশি ঘাম হতে পারে।
অনেকেই অতিরিক্ত ঘামকে ‘সাধারণ’ ভেবে পাত্তা দেন না। কিন্তু তা ঠিক নয়। কারণ, অতিরিক্ত ঘামের ফলে শরীর থেকে শুধু জল নয়, প্রয়োজনীয় লবণ ও খনিজও বেরিয়ে যায়। এতে করে ক্লান্তি, দুর্বলতা, মাথা ঘোরা, এমনকি ডিহাইড্রেশনও হতে পারে। তাই ঘাম হলে সঙ্গে সঙ্গে সেই ঘাটতি পূরণ করাও জরুরি।
কী খাবেন: প্রচুর জল (দিনে অন্তত ৩-৪ লিটার), লেবু জল, ডাবের জল, গ্লুকোজ, ওরস্যালাইন, শসা, তরমুজ, খিরসা, খেজুর – যেগুলো শরীর ঠান্ডা রাখে, লবণযুক্ত পানীয়, বিশেষ করে যদি খুব বেশি ঘাম হচ্ছে
কী খাবেন না: অতিরিক্ত ঝাল বা মসলা দেওয়া খাবার। ভাজাভুজি ও অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার। অতিরিক্ত চা-কফি। ধূমপান ও মদ্যপান
অতিরিক্ত ঘামকে একেবারে বন্ধ করা না গেলেও কিছু নিয়ম মানলে তা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
১. প্রতিদিন স্নান করুন-- সকালে ও রাতে স্নান শরীর ঠান্ডা রাখে। ২. হালকা ও ঢিলেঢালা পোশাক পরুন – বিশেষ করে সুতির জামাকাপড়, যা ঘাম শোষে নেয়। ৩. ঘামরোধী ডিওডরেন্ট বা অ্যান্টিপার্সপির্যান্ট ব্যবহার করুন – পারফিউম নয়, মেডিক্যাল ডিওডরেন্ট ব্যবহার করাই ভাল। ৪. পায়ে ঘাম হলে শুষে নেওয়ার মোজা ও খোলা স্যান্ডেল পরুন – এতে পায়ে দুর্গন্ধ বা ফাংগাল ইনফেকশন কমে। ৫. বেবি পাউডার বা ট্যালকম পাউডার ব্যবহার করুন – বিশেষ করে গলা, বগল, পায়ের পাতায়।
যদি ঘাম খুব বেশি হয়, এমনকি ঠান্ডা জায়গায় বসেও। যদি ঘামের সঙ্গে মাথা ঘোরা, বমি ভাব, বা অজ্ঞান হওয়ার উপক্রম হয়। যদি ঘামের গন্ধ খুব বেশি হয় বা চামড়ায় ফুসকুড়ি উঠে। যদি মনে হয় হরমোনের গোলমাল আছে। এই ক্ষেত্রে হরমোন বিশেষজ্ঞ বা অ্যান্ডোক্রিনোলজিস্ট-এর সঙ্গে পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। অনেক সময় থাইরয়েড, ডায়াবেটিস, নিউরোলজিক্যাল সমস্যা থেকেও অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে।