স্তন প্রায় নেই বললেই চলে, এই শারীরিক ত্রুটি বোঝা গিয়েছিল একটু বয়সের পরই। বহু কটাক্ষ, বক্রোক্তির শিকার হচ্ছিলেন কলেজ পড়ুয়া ওই তরুণী। মুর্শিদাবাদের গরিব পরিবারের মেয়েটির স্বপ্ন পূরণ করল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। নারী শরীরের পূর্ণতার নিখরচায় ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট হল তাঁর। এক সপ্তাহ পর্যবেক্ষণে রেখে তাঁকে ছুটি দিয়েছে হাসপাতাল।
খুব বিপজ্জনক কোনও ঘটনা বা বড় কোনও দুর্ঘটনাজনিত অপারেশন অনেকসময়ই মানবিক কারণে নিখরচায় করে বহু সরকারি হাসপাতাল। কিন্তু ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্টের মতো কসমেটিক সার্জারি, যার খরচ মোটামুটি ৩ লক্ষ টাকা, তা বিনামূল্যে হওয়ার ঘটনা নজিরবিহীন বলেই দাবি হাসপাতালের।
মেডিক্যাল সূত্রের খবর, রোকেয়া খাতুন (নাম পরিবর্তিত) নামে মুর্শিদাবাদের এক কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ওই ছাত্রীর স্তন গঠনে ত্রুটি ছিল। বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ওই ত্রুটি ধরা পড়ে। পরিবার খুবই গরিব। বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে অপারেশন করার সামর্থ্য ছিল না। তাই ডাক্তার দেখাতে বাবা-মায়ের সঙ্গে চলে আসেন কলকাতা মেডিক্যালে। কিন্তু ইমপ্ল্যান্টের খরচ না দিলে হাসপাতাল কীভাবে অপারেশন করবে? কারণ চিকিৎসার সরঞ্জাম ও ওষুধপত্র খুবই দামী। যা বিদেশ থেকে আসে। আবার স্বাস্থ্যসাথীর আওতায়ও পড়েনা এই চিকিৎসা। ঘটনার কথা শুনে মেডিক্যাল কলেজের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান ডাঃ সুদীপ্ত রায় উদ্যোগ নেন। এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে ইমপ্ল্যান্ট কিনে দিতে অনুরোধ করেন তিনি। ৬০ হাজার টাকার দু’টি বিদেশি সিলিকন ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এরপরই এখানকার ব্রেস্ট ও এন্ডোক্রিন সার্জারির অধীনে মেয়েটিকে ভর্তি করা হয়। সফলভাবে বসানো হয় ইমপ্ল্যান্ট।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার অঞ্জন চৌধুরী বলেছেন, 'কিছু কিছু ক্ষেত্রে মানবিক হতে হয়। ওই মেয়েটি সামাজিকভাবে খুবই সমস্যায় ছিল। একটা মেয়ের কাছে নারীত্বের পূর্ণতা জীবনদায়ী কোনও বিষয়ের থেকে কম নয়। তাই হাসপাতাল এগিয়ে এসেছে। এই বিষয়গুলি খুবই স্পর্শকাতর। ওই অপারেশনের পর আরও বহু মহিলা অনুরোধ করছেন আমাদের। তাঁরাও চান নিখরচায় ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট। সেগুলিও কীভাবে করা যায়, তা দেখা হচ্ছে। তবে আমরা সরকারের কাছে একটা আবেদন করব। যদি ওই অপারেশন স্বাস্থ্যসাথীর আওতায় আনা সম্ভব হয়, তাহলে খুবই ভালো হয়।'