মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে একাধিক শিশুমৃত্যুর ঘটনায় ফের কফ সিরাপ নিয়ে আতঙ্ক। প্রথমে মনে করা হচ্ছিল যে সিরাপে ডাই ইথিলিন গ্লাইকোল (DEG) ও ইথিলিন গ্লাইকোল (EG) এর মতো উপাদান রয়েছে। সেই কারণেই মৃত্যু। তবে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের পরীক্ষায় এখনও পর্যন্ত এমন কোনও উপাদান মেলেনি। তবে অনেকেই জানতে চাইছেন, এই DEG ও EG আসলে কী? আর সেটা এত ভয়ঙ্করই বা কেন?
DEG ও EG কী?
ডাই-ইথিলিন গ্লাইকোল (DEG) ও ইথিলিন গ্লাইকোল (EG) মূলত বিভিন্ন শিল্প কারখানায় ব্যবহৃত হয়। ব্রেক ফ্লুইড, অ্যান্টিফ্রিজ, প্লাস্টিক, রং ও কিছু গৃহস্থালির জিনিস তৈরিতে এগুলি ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এটি কোনওভাবেই ওষুধ তৈরিতে ব্যবহার করা যায় না।
আর এখানেই সমস্যা। কিছু অসাধু চক্র নিরাপদ দ্রাবক প্রোপিলিন গ্লাইকোল এর পরিবর্তে কখনও কখনও এই DEG বা EG ব্যবহার করে। অথচ মানুষের শরীরের জন্য এই দুই রাসায়নিক মারাত্মক ক্ষতিকর। সস্তার, বিষাক্ত রাসায়নিক ব্যবহার করে মুনাফার এই চেষ্টা যে রীতিমতো ভীতিকর, তা বলাই বাহুল্য।
DEG ও EG মেশানো ওষুধ খেলে কী হয়?
মানুষের শরীরে সামান্য পরিমাণেও DEG বা EG ঢুকলে কিডনি, লিভার ও স্নায়ুতন্ত্র মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি আরও বেশি। কারণ তাদের ওজন কম, অঙ্গপ্রত্যঙ্গও পুরোপুরি ডেভেলপ করেনি। ফলে সামান্য মাত্রাতেই প্রাণঘাতী হতে পারে। এই DEG ও EG মেশানো ওষুধ খেলে বমি, পেটব্যথা খিঁচুনি শুরু হয়। ধীরে ধীরে কিডনি বিকল, পেটে তীব্র যন্ত্রণা শুরু হয়। সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু না হলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
ওষুধে কি DEG ও EG ব্যবহার করা হয়?
চিকিৎসার ক্ষেত্রে এই রাসায়নিকগুলির বিন্দুমাত্র ভূমিকা নেই। নিরাপদ দ্রাবক হিসাবে শুধুমাত্র প্রোপিলিন গ্লাইকোলই ব্যবহার করা যায়। তবে অনেক অসাধু চক্র মাঝেমধ্যে কাফ সিরাপে DEG বা EG র মতো সস্তা, বিষাক্ত জিনিস ব্যবহার করে।
মধ্যপ্রদেশে এগুলি মেলেনি
মধ্যপ্রদেশে এনসিডিসি, এনআইভি, সিডিএসসিও ও রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের যৌথ পরীক্ষায় সিরাপের নমুনায় DEG বা EG মেলেনি। রাজস্থানে শিশু মৃত্যুর ঘটনাতেও একই রিপোর্ট ছিল। তবে সেখানে সিরাপে প্রোপিলিন গ্লাইকোল ছিল না, বরং ডেক্সট্রোমেথরফান ব্যবহার করা হয়েছিল। এই ডেক্সট্রোমেথরফান শিশুদের জন্য মোটেও সঠিক নয়। এর পাশাপাশি তদন্তে একটি কেসে লেপ্টোস্পাইরোসিস নামের এক সংক্রমণের কথাও উঠে আসে।
কফ সিরাপ নিয়ে সতর্ক থাকুন
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ডিরেক্টর জেনারেল অফ হেলথ সার্ভিসেস ইতিমধ্যেই সব রাজ্যকে শিশুদের ক্ষেত্রে কফ সিরাপ ব্যবহারে সতর্ক হতে বলেছে। চিকিৎসকদের মতে, অধিকাংশ কাশিই ভাইরাসজনিত। কয়েকদিনের মধ্যে নিজে থেকেই সেরে যায়। ৬ বছরের কম বয়সি শিশুদের ক্ষেত্রে তাই কফ সিরাপ খুব একটা প্রয়োজন পড়ে না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এখন সবচেয়ে জরুরি হল সিরাপ তৈরির প্রক্রিয়ায় কড়া নিয়ন্ত্রণ রাখা। সেই সঙ্গে চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশন করার সময় আরও সাবধানী হতে হবে। অভিভাবকদেরও এই বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।